Dr. Neem on Daraz
Victory Day

অসামাজিক কাজের টাকা ভাগের বিরোধে মিরপুরে জোড়া খুন


আগামী নিউজ | রফিক রাফি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, ০৮:৫৫ এএম
অসামাজিক কাজের টাকা ভাগের বিরোধে মিরপুরে জোড়া খুন

রমজান ও ইউসুফ নামের দুই যুবককে গ্রেফেতারের পর মিরপুরের জোড়া খুনের রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। অসামাজিক কার্যকলাপের টাকার ভাগ নিয়ে নিজেদের বিরোধের জেরে মিরপুরে গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্মী খুন হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশের একাধিক সূত্র।

বুধবার রাতে রমজান ও ইউসুফ নামের দুই যুবককে সদরঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। এদের একজনের বাড়ি ভোলা ও অন্যজনের বাড়ি পিরোজপুর। তারা পেশায় রাজমিস্ত্রি।  তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদকালে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। অসামাজিক কার্যকলাপের টাকার বিরোধে তারা খুন করেছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। 

মিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পালিত ছেলে সোহেলকে জিজ্ঞাবাদ করার পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রমজান ও ইউসুফকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর বেরিয়ে আসে নানা তথ্য,  মিরপুরের ২নং সেকশনের ২নং রোডের ৯নং বাসার ৪র্থ তলার ফ্ল্যাটে ছিলো অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া। প্রতিদিনই ওই বাসায় জোড়ায় জোড়ায় তরুণ-তরুণী আসা-যাওয়া করতেন। ঘটনার আগেরদিনও কয়েকজন তরুণ-তরুণী ওই বাসায় যান। সারাদিন থেকে তারা রাতে বের হয়ে যান। এসব ঘটনার সূত্র থেকে সাহিদা ওরফে রহিমা ও সুমি খুন হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

এদিকে এই জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রহিমার একমাত্র মেয়ে রাশিদা আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। এমনকি এজাহারে ওই বাসা থেকে কোনো মালামালও খোয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, স্বামী ও সন্তানদের কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পেতেন না রহিমা। এ কারণে সংসার চালাতে হয়তো তিনি এ পেশা বেছে নিয়েছিলেন। তাকে সহায়তা করতেন পালিত ছেলে সোহেল। ওই বাসায় নারী ও পুরুষ আসা-যাওয়া করত সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখান থেকে সোহেলও একটা ভাগ পেতেন। এ কারণে সোহেল এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। ঘটনার দিন ও তার আগেরদিন কারা ওই বাসায় এসেছিল তার তালিকা সোহেলের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। সেই সূত্র ধরে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই মামলায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর জোনাল টিমও কাজ করছেন। আটকৃতদের আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহম্মেদ আগামী নিউজকে জানান, মিরপুরে জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোহেলসহ আরও কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ঘটনার মোটিভ উন্মোচনের খুব কাছাকাছি পর্যায়ে। আশা করছেন দু-একদিনের মধ্যে এই মামলার আসামিদের আদালতে হাজির করতে পারবেন।

জানা গেছে, ৬ মাস আগে এই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন সাদিহা আক্তার ওরফে রহিমা বেগম। ভাড়া নেওয়ার পর থেকে ওই রহিমা ও আরও এক নারী বসবাস শুরু করেছিল। কিন্তু দিনের বেলা বাসায় তরুণ-তরুণীদের আসা-যাওয়া ছিল। কয়েকদিন আগে ওই নারী চলে যাওয়ার পর সুমি এই বাসায় আসে। ওই নারীরও সন্ধান করছে পুলিশ। তার সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে ওই নারীর নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

ডিসি মোস্তাক আহম্মেদ জানান, ক্রাইমসিন টিম ওই বাসা থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। সেগুলো অসামাজিক কার্যকলাপে ব্যবহৃত হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। নেশা করারও আলামত পাওয়া গেছে। তবে খুন হওয়ার সময় ওই বাসায় দুই খুনি উপস্থিত ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাছাড়া বাসার একটি রুমের মালামাল তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাসার ভেতরে তেমন কোনো জিনিসপত্র নেই।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার বাদী রাশিদা তার একমাত্র সন্তান। বিয়ের পর রাশিদা স্বামীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন। রহিমার আগের স্বামী তাকে ছেড়ে যশোরে চলে যান। এরপর রহিমা কুমিল্লার একজনকে বিয়ে করেন। কিন্তু তিনিও রহিমাকে ছেড়ে কুমিল্লায় ফিরে যান। হত্যাকাণ্ডের পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পুলিশের কাছে আসবেন না বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে মিরপুরের ২নং সেকশনের ২নং রোডের ৯নং বাসার ৪র্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে বৃদ্ধা সাহেদা বেগম ওরফে রহিমা ও তার গৃহকর্মী সুমি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আগামী নিউজ/আরআর/এআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে