Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় জাল টাকা চক্র


আগামী নিউজ | আরিফুর রহমান প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২০, ০৩:২৩ পিএম
ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় জাল টাকা চক্র

ঢাকা: আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকা কারবারীরা। মূলত ঈদের পশুর হাটকে লক্ষ্য করে চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি কয়েকটি চক্র ধরাও পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

গত সোমবার (২০ জুলাই) কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনাকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। ওই সময় প্রায় কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। ওইদিন রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রিফাত ও পলাশ নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

এ ব্যপারে র‌্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক মেজর এইচ এম পারভেজ আরেফিন আগামীনিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও এখন জাল টাকা সহজে বাজারে চালিয়ে দিতে পারছে। এজন্য টাকা তৈরিও বেড়েছে। দিনরাত টাকা ছাপানোর কাজ চলছিল। চক্রের নিজস্ব কিছু পাইকার জাল কারবারি আছে। যারা মাঠ পর্যায়ে রয়েছে তারা সহজেই এসব টাকা বাজারে বিক্রি করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো- গত সপ্তাহে চক্রটি ৭০ লাখ টাকার জাল নোট বাজারে ছেড়েছে। আমরা যে দুই জনকে আটক করেছি, তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা কোথায় কার কাছে টাকা দিয়েছে তা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর বংশাল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটকরা হলেন- আলম হোসেন (২৮), সাইফুল ইসলাম ওরফে লামু (৩২) ও মো. রুবেল (২৮)।

ওইদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের ডিসি ওয়ালিদ হোসেন তাদের কাছ থেকে এক হাজার ও ৫০০ টাকা নোটের ৩৫ লাখ জাল টাকা ও একটি ল্যাপটপ, একটি লেমিনিটিং মেশিন, দুইটি কালার প্রিন্টারসহ জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ী চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এই চক্রটি জালনোট তৈরি করে আসছিলো। কোরবানির পশুর হাট, শপিংমল ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের সময় কৌশলে বাজারে জাল নোট ছেড়ে দেয় এই চক্রের সদস্যরা। এ বিষয়ে রাজধানীর বংশাল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে।

একই দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান জাল টাকাসহ মো. শামসুল হক (২৬) নামে এক যুবককে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব-১০ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার এএসপি মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, মোহাম্মদপুর থানাধীন নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই লাখ ৬২ হাজার টাকা সমমূল্যের জাল নোটসহ শামসুল হককে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ ১০ হাজার আসল টাকা জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ জালটাকা ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর হাটকে সামনে রেখে সে সক্রিয় হচ্ছিল।

গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ের বাঘরী উত্তরপাড়া থেকে বাবু নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-১০ এর সিপিসি (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি)-১ এর স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি মো. শহীদুল হক মুন্সীর নেতৃত্বে এ অভিযানে ১৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোটসহ গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাবু দীর্ঘদিন ধরে জালটাকা কেনা-বেচা চক্রের সঙ্গে জড়িত। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে এসব জাল টাকা বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলো সে।

এছাড়া গত ২৮ জুন মধ্যরাত থেকে২৯ জুন দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর ও বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকা বিরোধী অভিযান চালায় র‌্যাব-২ এর সদস্যরা। ওই সময় ছয় জনকে জাল পৌনে চার কোটি টাকা, ৪৪ লাখ জাল রুপি এবং তৈরির মেশিন, কাঁচামালসহ আটক করা হয়। আটক ছয় জন হলেন, মো. সেলিম মিয়া (৪০), মো. মনিরুল হক (৪০), রমিজা বেগম (৩২), জান্নাতুল ফেরদৌস (৪০), মো. মঈন (৪০) ও খুদেজা বেগম (৩২)।

ওই দিন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন,  আগের জাল টাকার অভিযান গুলোতে দেখেছি, জাল টাকা তৈরি করে একটি স্থানে রেখে দেওয়া হতো। কিন্তু এই চক্রটি কৌশল একটু নতুনত্ব পেয়েছি। জাল টাকা তৈরীর মূল হোতা সেলিম মিয়া থাকেন ময়মনসিংহের কেন্দুয়া এলাকায়। তার সহকর্মীরা টাকা বানানোর প্রাথমিক কাজ ঢাকায় বসে করেন। প্রাথমিক কাজ শেষ হলে মূলহোতা ঢাকায় এসে জাল টাকা ছাপানোর কাজ নিজে করেন। কারণ জাল টাকা তৈরীর শিক্ষাটি অন্য কাউকে শিখাতে চায় না তিনি (সেলিম)। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসায় ভাগ ভাগ করে টাকাগুলো রাখে। যাতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছে কেউ ধরা পড়লে একসাথে যেনো সব টাকা ধরা না পড়ে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে টাকা তৈরীর কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম ধাপে নির্দিষ্ট একটি মাপের কাগজ পুরান ঢাকার থেকে কিনে নিয়ে আসে। তারা সেই একটি কাগজ দিয়ে চারটি নোট তৈরি করে। রাজধানীর আরেকটি (বসুন্ধরা) এলাকার বাসায় টাকার সিকিউরিটি ব্যান্ড বসায় এবং জলছাপ দিয়ে টাকাগুলো প্রাথমিক কাজ শেষ করে মিরপুরের নিয়ে আসেন। টাকাগুলো প্রিন্টের কাজ মিরপুরের বাসায় বসে সেলিম করে থাকেন।

তিনি বলেন, এক লাখ টাকার জাল বান্ডিল ১৮ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যায় পাইকাররা। ঈদের সময় এই জাল টাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বান্ডেলগুলো আরো বেশি দামে বিক্রি করেন। এই পাইকাররা টাকাগুলো নিয়ে বান্ডেল এর মধ্যে দুইটি তিনটি করে মিশিয়ে দেয় পাইকাররা। ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল চক্রটি।

অপরদিকে, গত ৩ জুলাই বার্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর যশোর ব্যাটালিয়ন (৪৯ বিজিবি) ১টি প্রাইভেট কার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো-শাহ আলম, মাসুদ রানা ও জাকির হোসেন।

৪৯ বিজিবি এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সেলিম রেজা জানান, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে যশোর বেনাপোল রোড থেকে তাদের এসব মার্কিন ডলারসহ গ্রেফতার করা হয়।  

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি)মো. ওয়ালিদ হোসেন আগামী নিউজকে বলেন, অন্যান্য অপরাধের মতো জাল টাকার বিরুদ্ধেও পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অভিযান চালাচ্ছি। জাল টাকা প্রতিরোধে আমাদের সাদা পোষাকের পুলিশ, গোয়ান্দাসহ প্রতিটি ডিপার্টমেন্টই কাজ করছে।

আজকেও (২২ জুলাই) আমরা এই ব্যাপারে মিটিং করেছি বলে জানান ডিসি ওয়ালিদ হোসেন।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা চক্রের দৌরত্ব বেড়ে যায়। আমরা পশু কেনার ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে আরও সচেতন হতে বলবো। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে একটি গাইডলাইনও অতি শীঘ্রই সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আগামীনিউজ/এআর/এমআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে