Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বিদেশে থাকা অধিকাংশ শ্রমিক অনিশ্চয়তায়


আগামী নিউজ | ম. শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২০, ০৪:৩৯ পিএম
বিদেশে থাকা অধিকাংশ শ্রমিক অনিশ্চয়তায়

প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বে অর্থনীতি থমকে গেছে। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে তারা ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করেছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রবাসী শ্রমিকদের উপর। ফলশ্রুতিতে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে  চুক্তি নবায়ন করতে পারছে বলে কাজ হারাচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকরা। আবার, যারা অবৈধভাবে দেশগুলো অবস্থান করছেন বৈধ হবার আশায় তাদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।  ইতোমধ্যে, যেসব দেশে শ্রমিক যায় সেসব দেশ করোনার কারণে কঠোর নিয়মকানুন চালু করেছে। আবার, গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ‘করোনা টেস্টের নেগেটিভ সনদ ছাড়া কেউ বিদেশ যেতে পারবে না।’ সব মিলিয়ে আগামীতে দেশে রেমিট্যান্সের উপর বড় ধাক্কা পড়বে তা মনে করছেন বিষেশজ্ঞরা।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন এক কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে ২০ লাখ ৮৪ হাজার,  সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৩ লাখ ৭০ হাজার, ওমান, মালয়েশিয়ায় ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। এছাড়া কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন ছাড়া্ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইতালিতে রয়েছেন এ দেশের বহু মানুষ।

ষৌদি আরব প্রবাসী শ্রমিক কবীর মিয়া আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন,  ৪ মাস আমাদের কোনো কাজকাম নাই। অনেক কষ্টে আমরা দিন কাটাচ্ছি।' যা জমানো ছিল তাই দেশে পাঠাচ্ছি। আগামীতে কবে কাজে যোগ দিব তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।

কাজ হারিয়ে দেশে ফেরা শ্রমিকরাও কোনো কাজ না পাওয়ায় পথে বসার মতো অবস্থায় আছেন। দেশে ফেরত শ্রমিকদের দাবি, আমরা কাজ করতে চাই।  এর প্রেক্ষিতে সরাকারের পক্ষ থেকেও্র সহায়তা চাওয়া হয়েছে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ফোরামে।  

এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ইস্যুতে আয়োজিত আইএলওর বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান কাজ  হারিয়ে দেশে ফেরা শ্রমিকদের  কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতা চেয়েছেন।

বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৭৮ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিককে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে ফেরত এসেছেন বিভিন্ন  দেশ থেকে আর বাকিরা ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্রবাসীকর্মীদের নিয়ে কাজ করা গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, বিদেশে অবস্থানরত প্রায় ১৪ লাখ বাংলাদেশি কাজ হারিয়েছেন করোনার প্রভাবে। এর একটি অংশ দেশে ফিরেছেন, বাকিরাও সামনে ফেরার অপেক্ষায়। এবিষয়ে রামরু চেয়ারপার্সন ড. তাসনিম সিদ্দীকি, যারা বিদেশে আছেন তারা বুঝে গেছেন করোনার কারণে সেখানে থাকতে পারবেন না। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে রিনিউ হবে না তারা দীর্ঘদিন বসে যে সঞ্চয় করেছেন সেগুলো দেশে পাঠাচ্ছেন। তারা আগামীতে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে তারা জানেন না।   

কাজ হারিয়ে দেশে ফেরা বা ফেরার অপেক্ষায় থাকা শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, বিদেশ ফেরত কর্মহীন এসব মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি অথবা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করে সরকার তাদের পুনর্বাসন করতে চায়। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তারা যেসব দেশ থেকে ফেরত এসেছেন, সেখানে আবার যেন কাজে ফিরতে পারেন; সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।  ইতোমধ্যে ফেরত আসা শ্রমিকরা যেন আবার ওই দেশের কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) প্রেসিডেন্ট বেঞ্জির আহমেদ বলেন, করোনাকালে শ্রমিকদের সাথে সাথে আমরও খুব কষ্টে আছি। আমরা চাই কোন শ্রমিক যেন কাজ না হারায়। এই করোনাকালে শ্রমিকরা যেন ভালোভাবে থাকতে পারে সেজন্য আমাদের তৎপতা চালু আছে। তবে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন যাতে শ্রমিকরা যেন ভালো থাকে। এসব ক্ষেত্রে আমরা সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, সরকার ফেরত আসা শ্রমিকদের জন্য সহজ শর্তে যে লোনের ব্যবস্থা করেছে এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এর ফলে, তারা দেশেই কোনোভাবে কাজ করে জীবন যাপন করতে পারবে।

 আগামীনিউজ/জেএফএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে