Dr. Neem on Daraz
Victory Day
বুড়িগঙ্গা তীরে অবৈধ ডকইয়ার্ড

২২ মাসেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি নদী রক্ষা কমিশন


আগামী নিউজ | তরিকুল ইসলাম সুমন প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২০, ১০:২৫ এএম
২২ মাসেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি নদী রক্ষা কমিশন

ঢাকা : পুরান ঢাকার সদরঘাট নৌ বন্দরের অপরপাড়ে কেরানীগঞ্জের মিরেরবাগ ও কালিগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ৩২টি ডকইয়ার্ড। এ বিষয়ে  জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনকে সরেজমিন তদন্ত করে ২০১৮ সালের আগস্টে ডকইয়ার্ড উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সুপারিশের নির্দেশ দিয়েছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু নির্দেশের ২২ মাসেও সুপারিশমালা তৈরি করতে পারেনি তারা।

এ বিষয়ে  নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আগামীনিউজকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবৈধ ডকইয়ার্ড রাখা যাবে না, আমরা এজন্য কাজ করছি। নদীর তীর রক্ষায় কারো কাছে নতি স্বীকার করবো না। এ বিষয়ে ডকইয়ার্ড মালিকদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে তাদের কাছে প্রস্তাবনা চেয়েছি। কিন্তু তারা এখনো মন্ত্রণালয়কে কিছু জানায়নি।

তিনি বলেন, নদী রক্ষা কমিশন এখনো প্রতিবেদন কেনো জমা দেয়নি সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। তাদের কোনো সমস্যা হলেতো আমাদের জানাবে। কিন্তু এত মাস পার হলেও তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।

জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সদস্য (সার্বক্ষণিক) মো. আলাউদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ২০ আগস্ট-২০১৮ নদ-নদীর নাব্যতা ও দুষণমুক্ত করণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এসব ডকইয়ার্ডের বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি গত ১১ অক্টোবর সরোজমিন পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন শেষে কেরাণীগঞ্জের ভূমি অফিসের মাধ্যমে ডকইয়ার্ডের কাগজপত্র জমা দিতে বলা প্রতিষ্ঠানগুলো তা দেয়নি। যারা কাগজপত্র জমা দিয়েছিল তা পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হতে পারেনি এই কমিটি।

পরবর্তীতে ভূমি অফিসে এ বিষয়ে শুনানির আয়োজন করা হয়েছে। শুনানিতে সিএস, দিয়ারা, আরএস এবং সিএস জরিপে নদীর অবস্থান দেখা হয়েছে। প্রায় সবগুলোই নদী দখল করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করার তথ্য পেয়েছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, পরে নদী কমিশনের পক্ষ হতে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকেও এ পর্যন্ত আমাদের কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি। এসব তথ্য না পাওয়ায় আমদের পক্ষে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক আগামীনিউজকে বলেন, আমরা অনেকদিন যাবত নদীর তীর থেকে অবৈধ ডকইয়ার্ড উচ্ছেদের চেষ্টা করছি। আমরা ডকইয়ার্ড মালিকদের জানিয়েছি কোনো অবস্থাতেই অবৈধ ডকইয়ার্ড রাখা হবে না। এ বিষয়ে মালিকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা চাওযা হলেও তারা এখনো কিছুই জানাননি।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই নদীর তীর থেকে এসব অবৈধ ডকইয়ার্ড দূরে কোথাও স্থানান্তর করতে। মালিকদে পক্ষ থেকে কিছু না জানোর কারণেও কিছুটা সমস্যা  হচ্ছে।

তিনি জানান, স্থানান্তরে রাজি হলেই তাদের আমরা ডকইয়ার্ড স্থাপনের লাইসেন্স দেয়াসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করব।

নদ-নদীর নাব্যতা ও দুষণমুক্তকরণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) আবু নাসের খান আগামীনিউজকে বলেন, এসব অবৈধ ডকইয়ার্ড যেখানেই আছে সেখানের নদীই সরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সদরঘাটের অপরদিকের কেরানীগঞ্জের মিরেরবাগ ও কালিগঞ্জে কাছে বুড়ীগঙ্গা সরু হয়ে গেছে। ফলে প্রায়শই  দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। নদী রক্ষা করতে হলে এগুলো স্থানান্তরের বিকল্প নাই। তবে এসব ডকইয়ার্ডের মালিকরা ক্ষমতাশালী হওয়ায় সরকার কতোটা সফল হবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডকয়ার্ডগুলো হলো-কেরানীগঞ্জ মিরেরবাগের নজরুল ইসলাম ডকইয়ার্ড, আজিম ডকইয়ার্ড, তালুকদার ডকইয়ার্ড, মেসার্স সাগর ডকইয়ার্ড, মেসার্স আলী ডকইয়ার্ড, মেসার্স উজির আলী ডকইয়ার্ড, ঢাকা ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, বোগদাদিয়া এন্ড ময়ুর ডকইয়ার্ড, মেসার্স সিটি ডকইয়ার্ড, জনতা ডকইয়ার্ড, মাদারিপুর ডকইয়ার্ড, প্রিন্স ডকইয়ার্ড, ফারুক (সাবেক সাত্তার) ডকইয়ার্ড, মেসার্স বায়োজিত ডকইয়ার্ড, হোসেন ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, লাট ডকইয়ার্ড-২, মেসার্স প্রিন্স আওলাদ ডকইয়ার্ড, শামছু ডকইয়ার্ড, অগ্রগতি ডকইয়ার্ড, শামসুদ্দিন ডকইয়ার্ড, বিসমিল্লাহ ডকইয়ার্ড, আগরপুর ডকইয়ার্ড এন্ড শিপ বিল্ডার্স, ফারহান ডকইয়ার্ড, কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্স, এছাড়াও কালিগঞ্জের মদিনা ডকইয়ার্ড, বিসমিল্লাহ ডকইয়ার্ড, লাট ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ডকইয়ার্ড, সাত্তার খান ডকইয়ার্ড, এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, ফারুক খান ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, জেনারেল ডকইয়ার্ড, লাকী ডকইয়ার্ড এবং পারজোয়ার ডকইয়ার্ড।

আগামীনিউজ/তরিকুল/এমজামান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে