Dr. Neem on Daraz
Victory Day

চীনের সাথে যুদ্ধের জন্য কী প্রস্তত হচ্ছে ভারত?


আগামী নিউজ | ম. শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২০, ১২:৪২ পিএম
চীনের সাথে যুদ্ধের জন্য কী প্রস্তত হচ্ছে ভারত?

সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: সম্প্রতি ভারত-চীন সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সীমান্তের কাছে যুদ্ধবিমানের মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ভারত দাবি করছে, যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত! লাদাখে প্রধানমন্ত্রী নরোন্দ্র মোদীর অঘোষিত সফর ভারতীয় সেনাদের মনোবলকে আরো চাঙ্গা করে তুলছে তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মোদীর সফর যে চীনকে কড়া ভাষায় সর্তক করে দেওয়ার সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতির যে বার্তা  দিচ্ছে তা বলার অবকাশ রাখেনা।

অন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দু’দেশের মধ্যে সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছে। এমন অবস্থায় সীমান্তে যুদ্ধযান বা সমরসজ্জা বাড়াচ্ছে দুইদেশ। বিতর্কিত এই অঞ্চলে আকাশ পথে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে ভারতীয় বিমনাবাহিনী। চীনকে ক্ষমতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সীমান্তের কাছে অবস্থিত সেনা ঘাটিগুলো শক্তি বৃদ্ধি করছে সেই সাথে বিমান ঘাঁটি থেকে অনবরত উড়ে যাচ্ছে রাশিয়ার তৈরি বিমান এসইউ-৩০ এমকেআই আর মিগ টোয়েন্টি নাইন। তাছাড়া ওই বিমানঘাঁটিতে রাশিয়ার ইলিউশিন-৭৬ আর আন্তোনভ-৩২ এর পাশাপাশি আমেরিকার সি-১৭ আর সি-১৩০ জে এর মতো পরিবহন বিমানও মজুত আছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা ও সরঞ্জামাদি আনা নেওয়া করতে বিমানগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।

চীনের হাতে মার খাওয়ারপর প্রতিবেশী দুই দেশের উত্তেজনা নিরসনে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে বৈঠকে বসেছিল তারা। কিন্ত, সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবি, এমন সংকটময় অবস্থায় পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ২০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে চীন। অবস্থা অনুকূলে আনতে পিছিয়ে নেই তারাও। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি সেরে রাখছে নয়াদিল্লি। তবে, ভারতীয় বিমানবাহিনী এক কাঠি এগিয়ে, তাদের দাবি, আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হঠাৎ সফরের পর শুক্রবার লাদাখে সেনা সমাবেশ আরও বাড়িয়েছে ভারত। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, আগে যেখানে এক ডিভিশন সৈন্য ছিলো সেখানে এখন চার ডিভিশন সৈন্য মজুদ করেছে দেশটি। 

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সবমিলিয়ে পূর্ব লাদাখে এই মুহূর্তে ভারতের সেনা সমাবেশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজারে। এছাড়া অন্যান্য সামরিক বহরের উপস্থিতি উল্লেখ করার মতো।  বিমানঘাঁটির সমস্ত প্রস্তুতি সুনিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা একজন ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন উইং কমান্ডার এএনআইকে  বলেন, ভারতীয় বিমান-সেনা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত আছে। আমরা সমস্ত চ্যালেঞ্জের সন্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত। যুদ্ধে লড়ার জন্য বর্তমান সময়ে বিমান খুব শক্তিশালী একটি ক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বিমান বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, যে কোনও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদের যাবতীয় লোকবল এবং সরঞ্জাম আছে। স্থলভাগে সামরিক অভিযানের সঙ্গে আকাশপথে যে কোনও সাহায্যের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বিমান বাহিনীর সদস্যরা।

সামরিক সূত্রগুলো থেকে যেসব খবর আসছে তাতে, ভারত যে সর্বাত্বক যুদ্ধ প্রম্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলছে এনিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভারতীয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মারুফ রাজা বলেন, লাদাখের অপারেশনাল পরিস্থিতিটা ঠিক কী, শুক্রবারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মিলিটারি কমান্ডারদের কাছ থেকে সেই ব্রিফিংটা পেলেন। প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমলারা নন, তাকে এই ব্রিফিংটা দিলেন সেই সেনা অফিসাররা, যারা পূর্ব লাদাখে রোজ চীনা বাহিনীর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। এবং আমি নিশ্চিত, আলোচনার মাধ্যমে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে যে চীনকে সরানো যাবে না, প্রধানমন্ত্রী মোদি সেটা আজ বিলক্ষণ বুঝে গেছেন। সেই নেহরুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী কৃষ্ণ মেননের সময় থেকেই ভারত এই ভুল করে এসেছে– চীনকে এক ইঞ্চিও সরানো যায়নি। ফলে ভারতকে যে এবার নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সীমিত আকারে হলেও চীনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে হবে, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।

অপরদিকে,  বর্তমান সময়ে ভারতের নানামুখী কর্মকাণ্ডে খুশি নয় চীন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের মার্কিন অক্ষের সাথে অতিরিক্ত ঘেঁষাঘেঁষি চীনকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এছাড়া, করোনা ভাইরাসকে ইস্যু করে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যে চীন বিরোধী অক্ষ তৈরি হচ্ছে তাতে অস্ট্রলিয়া, জাপান, ইসরাইলের সাথে যুক্ত হয়েছে ভারত। সেই সাথে চীনের প্রস্তাবিত বিআরআই প্রকল্পে ভারতের অংশ না নেওয়া চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে।

চীন-ভারত সীমান্তের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ভারতের দাবি মতে কিলোমিটার ৩৪৮৮ কিলোমিটার আর চীনের দাবি মতে ২০০০ কিলোমিটার। চীন ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের দাবি করে। অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের পাশে চীন শক্ত সামরিক অবস্থান তৈরি করে রেখেছে। বিপরীতে ভারতও তাদের সীমান্তে রাস্তা ও সামরিক ছাউনি নির্মাণসহ বৃহৎ পরিকল্পনা করছে চীনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে। ভারতের এসব স্থপনা নির্মাণ যখন ২০২২ সালে শেষ হবে তখন লাদাখ ও অরুণাচল সীমান্তে ভারত এখন যতটা দূর্বল ঠিক ততটা দূর্বল থাকবে না। আর ভারত বরাবরই চীনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায়। আর চীন বুঝেগেছে সময় এখনই তাই ভারতকে এখনি চেপে ধরতে হবে। 

তবে, লাদাখ সফরে যে মোদী কড়া ভাষায় সরাসরি চীনকে কড়া বার্তা দেন এসময় তার সঙ্গে ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান এম এম নারাবনে। তবে এ সময় মোদি চীনের নাম নেননি। ভারতীয় সেনাদের বীরত্বের প্রশংসাও করেন তিনি। লাদাখে ভারতীয় সেনাদের মাঝে দাঁড়িয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আগ্রাসনের দিন শেষ। এখন প্রযুক্তির যুগ। এগিয়ে যাওয়ার সময়। ইতিহাস সাক্ষী আগ্রাসনকারীরা সবসময় ধ্বংস হয়েছে। যারা আগ্রাসনের নীতিতে চলছে, তারা শান্তির পক্ষে বিপদের কারণ। আর এই সফরে সেনাধ্যক্ষ এমএম নারাভানেকে নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লাদাখ সফরে যাবেন, এমনটাই ঠিক ছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সে সফর স্থগিত করা হয়। কিন্তু তার বদলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে সাতসকালে নিজেই লাদাখে গিয়ে হাজির হবেন, হিমালয়ের ১১ হাজার ফুট উচ্চতায় সিন্ধুর তীরবর্তী ফ্রন্টিয়ার পোস্ট নিমুতে গিয়ে সেনাদের উদ্দেশে বলিষ্ঠ ভাষণ দেবেন; তা কেউ ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি। সেইদিনই মোদীর সফর স্পষ্ট করে যে ভারত তার আগের অবস্থানে নেই।

মোদীর ক্ষমতার মেয়াদ যত বাড়ছে তার আগ্রাসী রুপ ততই বেড়েই চলছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি গ্রহণ করে লাহোরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে যান। সবাই এজন্য সাধুবাদ জানায়। কিন্তু তার দলের কট্টর নীতি ধীরে ধীরে প্রকাশ ঘটে। আস্তে আস্তে চীন, নেপাল ও পাকিস্তানসহ প্রতিবেশীদের সাথে দূরত্বের দেয়াল তুলে দেয়। এমনকি বাংলাদেশেরমত পরিক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্রকেও অবমূল্যায়ন করেছে। দেশটির সাথে দীর্ঘ সীমান্ত থাকলেও এখনো সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেনি। এছাড়া, বিজেপি বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতা, দেশ বিদেশে নানা সমালোচনার মুখে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা তুলে দেয়। সেই সাথে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর ,জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখে কেন্দ্র শাসন জারি করে। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সাথে প্রায় যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এসব কারণে চীন ক্ষুদ্ধ মোদী সরকারের উপর। সবমিলিয়ে ভারত অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও প্রতিবেশীদের সাথে সর্ম্পকের অবনতির কারণে চীন ভারতকে নিয়ে চিন্তা শুরু করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে, কট্টরপন্থি মোদী চেয়ারে থাকলে যেকোন সময় সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই বাড়লেই আগা কেটে দেওয়ার নীতিতেই অটল চীন।    

আগামীনিউজি/এসএআই/এমআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে