Dr. Neem on Daraz
Victory Day

জীবাণুনাশকের নামে গণপরিবহনে ছিটানো হচ্ছে রঙিন পানি


আগামী নিউজ | আরিফুর রহমান প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২০, ১১:৩৫ এএম
জীবাণুনাশকের নামে গণপরিবহনে ছিটানো হচ্ছে রঙিন পানি

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানীর সাইন্সল্যাব থেকে ট্রান্স সিলভা বাসে উঠেছেন যাত্রী মো. রানা। তার গন্তব্য যাত্রাবাড়ী। বাসে উঠতেই গেইটে তার হাতে এক ধরনের পানি স্প্রে করলেন চালকের সহকারী সজিব। কিন্তু সিটে বসেই যাত্রী রানা নিজের পকেট থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা শুরু করলেন। মাত্রইতো গেইটে জীবাণুনাশক পানি দেওয়া হলো, তাহলে এখন আবার হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেন ব্যবহার করছেন? এমন প্রশ্ন করতেই রানা আগামীনিউজকে জানালেন, আমার তো মনে হয় না এটা জীবাণুনাশক। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা রঙ করা পানি।

এমন কেন মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, গণপরিবহন যখন সীমিত আকারে চালু হলো, তখন যেই পানি দেওয়া হতো, সেটাতে এক ধরনের গন্ধ ছিল। হাতে মাখার পর মনে হতো যে কিছু একটা মেখেছি। ধীরে ধীরে তা অন্যরকম হতে শুরু করলো। আর এখন যেগুলো দেওয়া হচ্ছে, এগুলো শুধু রঙ করা পানি ছাড়া কিছুই নয় বলে আমার কাছে মনে হয়।

ট্রান্স সিলভার এই যাত্রী রানার সাথে একমত আশপাশের অন্য যাত্রীরাও। প্রায় একই সুরে কথা বললেন, ভিআইপি ২৭ নাম্বার বাসের যাত্রী ফারুক হোসেনও। তিনি আগামীনিউজকে বলেন, গণপরিবহনের কন্ডাক্টরের হাতে নীল,বেগুনি, হলুদ, সাদা ও লাল রঙের পানি দেখি। এতে কোন ঘ্রাণ পাই না। যতই দিন যাচ্ছে ততোই গণপরিবহনের জীবাণুনাশক স্প্রের মান কমছে। আমার সন্দেহ আছে, এতে জীবাণুর কিছু হয় না। আমরা ব্যক্তিগতভাবে যেসব জীবাণুনাশক হাতে ব্যবহার করি তা অনেক ভালো।

বিকল্প পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেখি বিভিন্ন বাজার ও মার্কেটে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে। যদি গণপরিবহনের এসব জীবাণুনাশকের মান একবার যাচাই করতো, তাহলে আমার মনে হয় অনেক কিছু বের হয়ে আসতো। কেন না তারা এগুলো কোথা থেকে কিনেছে, তা জানতে পারলে ভেজাল কারখানার সন্ধানও হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেয়ে যেত। আর এতে করে পরিবহন মালিক ও কর্মচারীরাও সচেতন হতো।

সোমবার (০৬ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, সিটি কলেজ, কলাবাগান, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাসের গেটেই এমন রঙিন পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চালকের সহকারীরা। তবে এদের মধ্যে অনেককেই যাত্রীর হাতে বা গায়ে পানি স্প্রে করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিহঙ্গ পরিবহনের বাস চালক মো. আমির হোসেন বলেন, প্রতিদিন বাস নিয়ে রাস্তায় নামার আগেই আমরা পুরো বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে করি। প্রতিটি স্টেশন তেকে যখন যাত্রী তুলি, তখন কন্ডাক্টর সব যাত্রীদেরকে স্প্রে করে তারপর বাসে তোলে। তাদের স্প্রে করা জীবাণুনাশকের মান ভালো বলেও দাবি করেন এ বাস চালক। স্যাভলন ও হেক্সিসল দিয়ে তাদের জীবাণুনাশক বানানো হয় বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি অনুষদ ডিন অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুর রহমান আগামীনিউজকে বলেন, যদি গণপরিবহনগুলোতে সত্যিকার অর্থেই সঠিকভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়, তাহলে তো ব্যাপারটি খুবই ভালো। আর যদি শুধু ব্লিচিং পাউডার বা সাবানের গুড়ো অথবা শুধু পানিতে রঙ মিশিয়ে ছিটানো হয়, তাহলে ব্যাপারটি ভয়ঙ্কর হবে। এর থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও স্প্রে তে যে রং ব্যবহার করা হয় এ সম্পর্কে তিনি বলেন, রং ব্যবহার করা সম্পূর্ণটাই প্রতারণা বলা যায়। এতে রঙের ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়। রঙের কোনো কাজ নেই। কালার কোনো জীবাণুনাশক নয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারে রং ব্যবহার করা উচিত নয়। রঙের অন্তরালের সঠিক পরিমাণে জীবাণুনাশক দেওয়া হচ্ছে না। আমার মতে রঙের অন্তরালে প্রতারণা চলছে। গণপরিবহনে যেসব স্প্রে করা হচ্ছে এসব স্প্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভাটিকেল শরীরে প্রবেশ করছে। এটাও শরীরের যেকোনো ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জীবাণুনাশক স্প্রে নামে যাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

স্যাভলন বা হেক্সিসল একসাথে ব্যবহার করে স্প্রে করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি উপাদান একসাথে ব্যবহার করার মানে হচ্ছে ডাইলোড করা। দুটি উপাদানের মিশ্রন ৫ লিটারকে ২৫ লিটার করা যাবে এতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু দুটি পদার্থ একসাথে ব্যবহার করার কোনো সাইন্টিফিক নিয়ম নেই। আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহার করা যাবে। দুটি উপাদান একসাথে ব্যবহার করলে জীবাণুনাশকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আগামীনিউজ/এআর/টিআইএস/এমআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে