Dr. Neem on Daraz
Victory Day

অচিরেই খাবার টেবিলে শোভা পাবে সামুদ্রিক আগাছা


আগামী নিউজ | তরিকুল ইসলাম সুমন প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২০, ০২:১১ পিএম
অচিরেই খাবার টেবিলে শোভা পাবে সামুদ্রিক আগাছা

ছবি সংগৃহীত

ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণে নানা ধরন ও  বৈচিত্র্যের খাবার শোভা পাচ্ছে খাবার টেবিলে। তেমনি একটি খাবার উপকরণ হচ্ছে সিউইড বা সামুদ্রিক আগাছা। স্বাদ, গুণ ও পুষ্টিমানে ভরপুর এ খাদ্য পৃথিবীর অনেক দেশে ব্যাপক পরিচিত হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে বাংলাদেশে নেই এর পরিচিতি ও প্রচারণা।

পুষ্টবিদদের মতে, এই সি-উইড সংযোজন যে কোনো ধরনের খাবারকে সুস্বাদু তো বটেই-এর পুষ্টিগুণও বাড়িয়ে দিতে পারে অনেক। অজ্ঞতাই যে এই নির্লিপ্ততার কারণ। আর বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিতে এটি বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ উপকূলে সিউইড চাষ এবং সি-উইডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ( বিএফআরআই)। এবিষয়ে মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন, Blue Sea Economy বা নীল সমুদ্র অর্থনীতির অন্যতম সম্পদ হতে পারে সি-উইডস তথা সমুদ্র শৈবাল।এর গুরুত্ব বুঝতে পেরে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আমারা আমাদের গবেষণায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ১৩২টি প্রজাতির শৈবাল শনাক্ত করেছেন।এর মধ্যে ১৮টি প্রজাতি রয়েছে বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন। আমরা হাইপেন প্রযুক্তি উন্নয়ন করেছি। যা ২০১৯ সালে মৎস্য অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুরুতে শুধু কক্সবাজার এলাকায় শৈবাল নিয়ে চাষাবাদ শুরু করলেও এখন এটি পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আমরা বেশ কিছু চাষিকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন অনেকে শৈবাল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ড. ইয়াহিয়া আরো বলেন, শৈবালে বিদ্যমান পুষ্টিকনা মানুষের দৈহিক ও মানুষিক বিকাশের পাশাপাশি ছোট শিশুদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে স্বক্ষম।

সি-উইডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক মহিদুল ইসলাম  আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন,  ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে (জানুয়ারি, ২০১৮ হতে ডিসেম্বর, ২০২১)। বাংলাদেশ উপকূলে অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন সিউইড প্রজাতির জরিপ ও শনাক্তকরণ, উপকূলে উপযুক্ত চাষ এলাকা নির্বাচন ও বিভিন্ন সিউইড প্রজাতির টেকসই চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সমুদ্র উপকূলে প্রাপ্য ও উৎপাদিত সিউইডের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করছি।

সি-উইড (Seaweeds) সাগরের এক প্রকার তলদেশীয় জলজ উদ্ভিদ (Macro-algae)। সি-উইড বিশ্বব্যাপী একটি গুরত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ, পুষ্টিগুণের বিচারে যা বিভিন্ন দেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে ১৩২টি সি-উইড প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। জলায়তন-যা আমাদের দেশের মূল ভুখন্ডের আয়তনের চেয়েও বেশি। এই জলসীমায় আহরণযোগ্য প্রচুর মৎস্য প্রজাতি ছাড়াও রয়েছে অনাহরিত বিপুল জলজসম্পদ। এই বিপুল আয়তনের জলজসম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বর্তমানে আমরা আহরণ করতে পারছি। সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়ার পাশাপাশি এই সি-উইড চাষ ও রপ্তানি বাংলাদেশের ব্লু-ইকোনমির উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। পাশাপাশি বিশাল সমুদ্রের উপকূলে মানুষের জন্যে বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে সি-উইড চাষ।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র বিমোচনের জন্য পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। তাছাড়া, বর্তমান সরকার প্রচলিত মৎস্য চাষের পাশাপাশি বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন অপ্রচলিত জলজসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও উন্নয়নে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। সামুদ্রিক শৈবাল বা সি-উইড আমাদের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সামুদ্রিক জলজসম্পদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর আহমদ বাংলাদেশে শৈবাল চাষ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।পদ্ধতিও খুব নতুন উদ্যোগ এবং চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত, দেশের উপকূলীয় জলরাশিতে ব্যাপকভাবে শৈবাল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চাষের কাঠামো প্রতিষ্ঠাকরণে চাষিদের স্বল্প বিনিয়োগ প্রয়োজন। গৃহস্থালি উপকরণ, দড়ি, বাঁশ, জাল, প্লাস্টিক বয়া ইত্যাদি ব্যবহার করে চাষীরা সহজেই এই চাষ শুরু করতে পারে। সৈকতে জোয়ার-ভাটার অর্ন্তবর্তী স্থানে অধিকাংশ শৈবাল জন্মায় ফলে ভূমিহীন চাষিগণ খাস সরকারী অনাবাদি জলাভুমিতে বিনা বাধায় শৈবাল চাষ করতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পরীক্ষামূলকভাবে ২০১০ সালে দুই প্রজাতির শৈবালের চাষ করার মাধ্যমে দেশে প্রথম এর চাষ শুরু হয়েছিল। সে সময়ে আশা করা হয়েছিল শৈবাল চাষ করে কৃষকরা ভাগ্য ফেরাতে পারবে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শৈবাল চাষ প্রকল্প খুব একটা সফল হয়নি। সমুদ্রে শৈবাল চাষের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলে শৈবাল বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কোস্ট ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে শৈবাল চাষ শুরু করেছিলেন। শৈবালে ওষুধি গুণ থাকায় সবজি হিসেবে এই শৈবাল খাবার তালিকায় (জনপ্রতি প্রতিদিন ৩ গ্রাম হিসেবে) রাখলে দেশের বেশির ভাগ জনগণ টিউমার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগ থেকে রক্ষা পাবে।

সূত্র আরও জানায়, একটা সময়ে পিকেএসএফ এবং ডিএফআইডি এ চাষ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিল। বর্তমানে কোস্ট ট্রাস্টের কাজ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। তারা বিভিন্ন চাষিদের মাধ্যমে বছর শৈবাল উৎপাদনে সহায়তা দিয়েছে। বর্তমানে কাঁচা শৈবাল সালাদসহ বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

সামুদ্রিক শৈবাল একটি রপ্তানি যোগ্য পণ্য। বিদেশে সামুদ্রিক শৈবালের বাৎসরিক উৎপাদন প্রায় ১০ মিলিয়ন টন, যার বাণিজ্যিকমূল্য ১৫ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বে একুয়াকালচার উৎপাদনে শৈবালের অবস্থান দ্বিতীয়। শৈবাল একটি সম্ভাবনাময় জলজ উদ্ভিদ, যার পুষ্টিমান অন্যান্য জলজ প্রজাতির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

এগুলো পিৎজা, সমুসা, পাকোড়া, স্যুপ, সালাদ, ডেজার্ট , কেক, বান, সিঙ্গাড়া, শাক ইত্যাদিতে সিউইড ব্যবহৃত হচ্ছে।এছাড়াও পশুখাদ্য, জৈব সার (কৃষিতে ব্যবহার্য) ও জ্বালানি হিসেবে সিউইড ব্যবহারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামীনিউজ/তরিকুল/জেএফএস


 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে