Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পুলিশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে


আগামী নিউজ | আরিফুর রহমান প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২০, ১২:৫৬ পিএম
পুলিশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি আগামীনিউজ

ঢাকা: করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন, সামাজিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ ও অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করতে গিয়ে প্রতিদিনই মহামারি এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। 

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত (০৩ জুলাই) করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুলিশের ৪৫ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৩০২ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপিতে) আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩১৮ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৩২৭ জন  পুলিশ সদস্য। এদের বেশির ভাগই আবারো দেশের সেবায় কাজে যোগ দিয়েছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পুলিশ বাহিনীতে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় ২৮ এপ্রিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জসিম উদ্দিন নামের এক কনস্টেবল মারা যান সেদিন। আর প্রথম আক্রান্ত ধরা পড়ে ২৩ এপ্রিল। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনারোধে কাজ করা মাঠের পুলিশ সদস্যরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ভাইরাসটিতে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।

একদিনে সর্বোচ্চ ৪ শতাধিক পুলিশে সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংক্রমণের হার কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আসে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুলিশের সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ রেকর্ড শনাক্ত হয়। সে সময় প্রায় দুই সপ্তাহ টানা উচ্চহারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। তবে ৮ জুন থেকে হঠাৎ করেই সংক্রমণ কমতে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক এসআই আগামীনিউজকে বলেন, আমার থানায় এখন পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আবার অনেকেই সুস্থ হয়েও কাজে ফিরেছেন। এখনও কয়েকজন সদস্য বাসায় ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আমরা সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। আমরা পুলিশ সদস্যরা এটা মেনেই নিয়েছি যে, যে কোন সময় আমার করোনা হতে পারে। তাই বলে জনগণের সেবা করা থেকে পিছু হটা যাবে না।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) পুলিশ সদর দফতরে এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় ঢাকায় আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্পন্ন একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালেও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ন্যায় একই প্রটোকলে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাদের মৃত্যুর হার কমছে।

চলমান করোনায় জনগণের সেবায় পুলিশের অনন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বর্তমান করোনাকালে পুলিশ যেভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, তাদের পাশে থেকেছে, তাদেরকে সুরক্ষা দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু বাংলা‌দে‌শ থে‌কে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রা‌ন্তের মানুষও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা করছে। পুলিশ প্রধান হিসেবে এ জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত।

তিনি বলেন, করোনায় পুলিশ শুধু কোয়ারেন্টাইন, লকডাউনই বাস্তবায়ন করেনি। অসহায় মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন পুলিশ তাদের জানাজার আয়োজন, দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। এসব দায়িত্ব পুলিশের নয়, পুলিশকে এ দায়িত্ব দেয়াও হয়নি। কিন্তু পুলিশ কেন এটা করেছে? পুলিশ কাজটি নিজেদের মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে করেছে। এজন্য মাত্র তিন মাসে পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বাংলাদেশ পুলিশের এ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

বাংলাদেশ পুলিশকে জনবান্ধব, আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে ইনোভেশন এন্ড বেস্ট প্র্যাকটিস শাখা আয়োজিত সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মতামত গ্রহণ বিষয়ক পাঁচ দিনের এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।  বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) ছিল এর শেষ দিন।

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইফ শান্ত আগামীনিজকে বলেন, পুলিশ সদস্যদের দ্রুত সুস্থ করতে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা (WHO)এ গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা দিতে আমরা কোন কমতি রাখছি না। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সেবা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৬০ জন মেডিকেল স্টাফও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার এআইজি সোহেল রানা আগামীনিউজকে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের করোনায় আক্রান্ত সদস্যরা কেন্দ্রীয় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ) ছাড়াও বিভাগীয় আধুনিক হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে  সু-চিকিৎসার ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই পুলিশ যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনিভাবে তারা দ্রুত সুস্থ হয়েও আবার কাজে যোগ দিচ্ছেন।

আগামীনিউজ/এআর/টিআইএস/এমআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে