Dr. Neem on Daraz
Victory Day

শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশকে আরও বেশি ভোগাবে


আগামী নিউজ | ম. শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২০, ১১:১২ এএম
শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশকে আরও বেশি ভোগাবে

বিশ্বে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শরণার্থীর সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। কথাটি বাংলাদেশের জন্য আরও রুঢ় বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বর্তমান বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ শরণার্থী সংস্যার কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) এক প্রতিবেদেন। সেখানে, বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে রাজনৈতিক, সামরিক, জাতিগত ও মতাদর্শের নানা সংকট মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে জাতি পরিচয়, বেঁচে থাকার অধিকার। ইতোমধ্যে তার সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৭ কোটি ৯৫ লাখে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামীতে এই শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশকে আরও বেশি পরিমাণ ভোগাবে, যদি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো এ সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে আন্তরিক না হয়। তবে, অতীতে তাদের ভূমিকা সংকট সমাধানে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলেও মনে করছেন তারা।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রকাশিত বার্ষিক  'গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট' শিরোনামে বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শরণার্থীর সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে শরণার্থী সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ। ২০১৯ সালের শেষে শরণার্থীর মোট সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯৫ লাখ।

তারা আরও বলেছেন, বিশ্বজুড়ে বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শরণার্থী বেড়েছে ৮৭ লাখ।

ইতিহাসে এর আগে এত মানুষ কখনও গৃহহারা ছিলেন না উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে
শরণার্থী পরিস্থিতির বর্তমান চিত্র বলে দিচ্ছে সংকট কতটা জটিল। সেই সঙ্গে আগামীতে শরণার্থীদের দুর্দশার দ্রুত সমাপ্তির আশাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

শরণার্থীদের ফেরার আশা কমে আসছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  ৯০ দশকে প্রতি বছর গড়ে ১৫ লাখ মানুষ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারলেও বর্তমানে তা কমে ৩ লাখ ৯০ হাজারে পৌঁছেছে। এটা প্রমাণ করছে শরণার্থী সংকটের স্থায়ী সমাধান ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা বছর বছর বেড়ে যাওয়ার জন্য দু'টি প্রধান কারণের কথা বলা হয়েছে। সেখানে, নতুন বাস্তুচ্যুতির বিভিন্ন ঘটনা-বিশেষত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, ইয়েমেন ও সিরিয়ার সংঘাত। সংঘাতপূর্ণ আফ্রিকায় গত নয় বছরে ১ কোটি ৩২ লাখ হয় শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী বা আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যূত হয়েছেন।

এ সংখ্যা বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতির ছয় ভাগের এক ভাগ। আরেকটি কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নিজ দেশের বাইরে অবস্থানরত ভেনেজুয়েলার মানুষের পরিস্থিতি সম্পর্কে গত এক বছরে পাওয়া বিশদ তথ্য। তাদের অনেকেই আইনত শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত নন, কিন্তু সুরক্ষা ও সহায়তা তাদেরও প্রয়োজন। এছাড়া নিজ দেশ থেকে বাস্তুহারা রোহিঙ্গারা বছরের পর বছর একটি দেশে অবস্থান করে সে দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

বিশ্বব্যাপী শরণার্থী বেড়ে যাওয়া আমাদের জন্য অশনি সংকেত, বিশেষ করে যেখানে রোহিঙ্গাদের সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ইনাম আহমদ চৌধুরী আগামীনিউজকে বলেন, আমাদের দেশের শরনার্থী সমস্যা সমাধান করতে গেলে প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দরকার। কিন্ত এ যাবৎ কালে আমরা পাইনি।

অথচ, প্রতিবেশী দেশগুলোর দায়িত্ববোধ আছে যেটা তারা মোটেও পালন করছে না এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমি আহ্বান জানাব তারা যদি বন্ধু হয়ে থাকে তবে এগিয়ে আসুক। আমরা আর কত দিন তাদের চালাবো।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক স্থানে আছে। আমাদের সেটা সঠিকভাবে পরিচালনা করে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে হবে।

তবে, বিশ্লষকরা মনে করেন, বর্তমান বিশ্বের শরণার্থী সমস্যা- বাংলাদেশে রোহিঙ্গা, পাকিস্তানে আফগান এবং ফিলিস্তিনি অথবা ইয়েমেন ও সিরিয়ান শরণার্থীদের আগামী দিনগুলো কেমন যাবে তা সময়ই সঠিকভাবে বলতে পারবে। তবে, করোনার এই বৈশ্বিক মহামারী ঘিরে প্রতিটি দেশেরই প্রধান ফোকাস হয়ে উঠছে ।এজন্য আগামীতে শরণার্থী সমস্যা প্রকট হবে বলেই ধারণা করছেন বিশ্ববাসী।

আগামীনিউজ/ইমরান/এমজামান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে