Dr. Neem on Daraz
Victory Day

শ্রমবাজারের ধাক্কায় রেমিটেন্সের ভবিষ্যত কি? 


আগামী নিউজ | ম. শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২০, ১১:২৯ এএম
শ্রমবাজারের ধাক্কায় রেমিটেন্সের ভবিষ্যত কি? 

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে মধ্যপাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশিরা কার্যত ভালো নেই। করোনা বিধ্বস্ত বিশ্বে নিজ দেশের মানুষই যেখানে ঠিকমতো কাজে ফিরতে পারছে না সেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যে ধরনের কাজ করেন তাতে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। এদিকে বৈধ অভিবাসীরাই যেখানে কষ্টে আছেন; সেখানে অবৈধ বাংলাদেশিরা রীতিমতো মানবেতর সময় পার করছেন। এ কারণে অনেকেই দেশে ফিরেছেন, আরো অনেকে ফেরার সুযোগ খুঁজছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের দেশে ফেরাতে নেই খুব বেশি কার্যকর কোনো উদ্যোগ। কাজ না থাকায় শ্রমবাজার নিয়ে টালমাটাল অবস্থায় রেমিটেন্সের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

জানা গেছে, প্রবাসে থাকা মানুষরা আতঙ্কে আছেন। আর আতঙ্কের কারণে তারা টাকা পাঠাতে পারছেন না দেশে। ইতিমধ্যে বন্ধ রয়েছে বহু দেশের রেমিটেন্স হাউস ও ব্যাংকিং সেবা। ইতিবাচক থাকা সেই প্রবাসী আয়েও এবার হোঁচট লেগেছে। করোনায় বিধ্বস্ত মার্চ মাসে রেমিটেন্স এসেছে মাত্র ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়া ওই নিরাশার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্ত মার্চে যে রেমিটেন্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আবার এপ্রিলের রেমিটেন্স ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আসার ফলে, গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম হয়েছে। 

কিন্তু চলতি বছরের মে মাসের প্রথম ১৮ দিনে যে পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে তা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে কমেনি।  তবে, এই প্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থা নয়। কারণ সামনে ঈদ। ঈদের পাশাপাশি রেমিটেন্সে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার শর্ত শিথিল করার এতে প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশি কর্মী থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কোথাও কোন সুখবর মিলছে না। যার কারণে পরিস্থিতি মোকাবেলায় অনেক বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্নভাবে সাহায্য নিয়ে চলতে হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, বর্তমানে এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। সর্বাধিক ২০ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন সৌদি আরবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৩ লাখ ৭০ হাজার এবং ওমান ও মালয়েশিয়ায় আছেন ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী। এরপর কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর ও বাহরাইন। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক বাংলাদেশী আছেন ইতালিতে। করোনার কারণে দেশগুলোয় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের অধিকাংশই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপক হারে প্রবাসীরা আতঙ্কে। এর মধ্য যোগ হয়েছে ভিসা জাটিলতা। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রতিদিন ফেরত আসছে প্রবাসীরা। তারা সেই সাথে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কায় আছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস। আগামীতে নতুন কাজের সংস্থান কতটুকু বাড়বে তা সময়ই বলে দেবে।

ইতিমধ্য করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতেই ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যারা জের ধরে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পরেও ফেরত আনতে হয়েছে প্রায় চার হাজার শ্রমিক। 

এতে ওইসব দেশ থেকে রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক ধারা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস। করোনার প্রভাব অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। রেমিটেন্সের অর্ধেকেরও বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এসব কারণে উর্ধ্বগতির রেমিটেন্স নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কোনভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে পারবে না। দেশের অর্থনীতির একমাত্র রেমিটেন্স ছাড়া সব সূচকই নিম্নমুখী। এখন করোনার প্রভাবে রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধির হারও হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। 


বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের বড় রেমিটেন্সের যোগানদাতা মধ্যপ্রাচ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসায় তেলনির্ভর অর্থনীতির ওই দেশগুলোতে বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে, আগামীতে রেমিটেন্স নিয়ে ইতিবাচক কিছু আশা করার অবস্থা তৈরি হয়নি। সেই সাথে তারা মনে করছেন, রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন শ্রমবাজারের দিকে নজর দিতে হবে।

প্রবাসীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেতে আশার আলো দেখছেন বিদেশ ফেরত কর্মীরা। বিশেষকরে যারা কাজ হারিয়ে চলে এসেছেন তারা দেশেই কিছু করতে আগ্রহী। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের যারা প্রবাসী, তারা রেমিট্যান্স পাঠায়। তাদের যেন ঘরবাড়ি বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে না হয়, তার জন্য প্রবাসী কল্যাণ নামে আরেকটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই ব্যাংকেও আমরা আরো টাকা দেব। সেখানে আমরা অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা দেব। এর আগে ওখানে আমরা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি।’

আগামীনিউজ/ইমরান/মিজান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে