Dr. Neem on Daraz
Victory Day
এক্সটেনডেন্ট এরিয়া হিসেবে পেতে চায় ঢাকা পোর্ট

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল বিআইডব্লিউটিএর গেজেটভুক্ত নয়


আগামী নিউজ | তরিকুল ইসলাম সুমন প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম
আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল বিআইডব্লিউটিএর গেজেটভুক্ত নয়

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা দক্ষিণ-পশ্চিমে শাখা-প্রশাখার দুই তীর দখল হতে হতে আজ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে এই শাখা নদী দখলদারদের কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চ আদালতের কঠোর নির্দেশের পরও বুড়িগঙ্গার এই আদি চ্যানেলটি প্রতিনিয়তই দখল হচ্ছে। জলাধার সংরক্ষণ আইনের বিধি উপেক্ষা করে চলছে দখল বাণিজ্য। অপরদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) গেজেটভুক্ত না হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের কোলঘেঁষা বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের এলাকার প্রায় ২৪ হাজার ৫শ’ কাঠা বা ৩৫০ একর জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২৫০ একর জমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে এবং একশ’ একর বাঁধের ভেতরে পড়েছে। দখল প্রক্রিয়ার কৌশল হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য, বালু ফেলে ভরাট করে নদীর বুক সংকুচিত করা হয়। পরে এসব জায়গায় গড়ে তোলা হয়, শিল্পকারখানা, আবাসন প্রকল্প ও রিক্সা-ট্রাকস্ট্যান্ড। বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। মাঝেমধ্যে ডিসির উদ্যোগে সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থা বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল রক্ষায় নদীর দুই তীর দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা ফলপ্রসু কোনো ভুমিকা রাখতে পারছে না।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো নৌ রুটগুলো সংরক্ষণ ও দেখভাল করা। আদি বুড়িগঙ্গা চ্যনেলটির আমাদের গেজেটভুক্ত নয়। এ জন্য আমরা এটি উদ্ধার বা কোনো কাজ করতে পারছি না। যেহেতু এটি আমাদের নয় সেকারণে এর দায়িত্বও আমাদের নয়। তবে যদি সরকার আমাদের এ চ্যনেলটির দায়িত্ব দেয় আমরা এর দায়িত্ব নেবো।

চ্যনেলের দায়িত্ব নেওয়ার আবেদন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এখনো আবেদন করিনি। বিভিন্ন বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসন ও ডিএসসিসি বলছে, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার সব খাল-জলাধার দখলমুক্ত করতে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ওইসব স্থানে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ সৌন্দর্যবর্ধনের নানা প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান জানান, এক সময় বুড়িগঙ্গার পশ্চিমের এই শাখা নদীতে পালতোলা নৌকা, লঞ্চ, স্ট্রিমার, ইঞ্জিন বোটসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করত। স্রোতের কলধ্বনি এক থেকে দুই মাইল দূর থেকে শোনা যেত।

তিনি মনে করেন, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যনেলটি ঢাকা বাসীর জন্য রক্ষা করা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ এ চ্যনেল উদ্ধার করে ঢাকাবাসীর জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র করা গেলে একদিকে চ্যনেলটিও রক্ষা পেত অন্য দিকে মানুষও বিনোদনের জন্য এখানে আসতে পারতো।

ঢাকা নৌ বন্দরের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক একে এম আরিফ উদ্দিন জানান, চ্যনেলটি যেহেতু বুড়িঙ্গারই অংশ। এর দেখভালের দায়িত্ব ঢাকা নৌ বন্দর নিতে চায়। এ জন্য ঢাকা পোর্টের মাধ্যমে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএর কাছে আবেদন করা হবে।

ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চকবাজার, লালবাগ, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীচরের মধ্য দিয়ে গত শতকের মাঝামাঝিও বুড়িগঙ্গায় স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হতো। ১৯১২ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ভূমি জরিপে (ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে, সিএস) এটা প্রবাহমান নদী হিসেবে বুড়িগঙ্গা চিহ্নিত। এ সময় সিএস রেকর্ডে পরিবর্তন এনে বিভিন্ন দাগের দখলদার হিসেবে ভূমিদস্যুদের নাম বসিয়ে দেয়া হয়। সিএস রেকর্ডের এই বদলকে ‘পেটি সিএস’ বলা হয়ে থাকে। ১৯৫৪ সালে এসএ (সার্ভে অব আর্টিকেল) রেকর্ড প্রণয়নকালে সিএস রেকর্ডের অনেক পরিবর্তন ধরা পড়ে। পেটি সিএসে নিজেদের অবস্থান দেখিয়ে দখলদাররা সংশ্লিষ্ট দাগের জমি জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেন এবং এসএ রেকর্ডে তা লিপিবদ্ধ করা হয়।

৭২ সালের সংশোধিত দখল জরিপের রিভাইজড সার্ভেতে (আরএস) দখলদাররা নদীর জমি তাদের দখলে দেখিয়ে মালিকানা পাকাপোক্ত করে নেয়। এর আগে-পরে ইজারাপত্র দেখিয়ে অনেকে জমি বিক্রি করে দেয়।

সূত্র মতে, আশির দশক থেকে বুড়িগঙ্গার বুক ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়ে। ৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছন (দক্ষিণ) থেকে লালবাগের নবাবগঞ্জ হাজারীবাগ, এমনকি মিরপুরের গাবতলী হয়ে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করায় বাঁধের ভেতরে বুড়িগঙ্গার বিশাল এলাকা পড়ে যায়। জালিয়াত চক্র এভাবেই নদীর জমি পুরোটা গ্রাস করে।

আগমী নিউজ/টিআইএস/এআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে