Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রথী-মহারথীর লোভের বলি হতে পারে গোটা দেশ:ক্ষুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী


আগামী নিউজ | মাহমুদা ডলি ও সাইফুল হক মিঠু প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২০, ০৪:৩৮ পিএম
রথী-মহারথীর লোভের বলি হতে পারে গোটা দেশ:ক্ষুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী

ছবি: ডলি

ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সরকার গার্মেন্টস খাতে ভর্তুকি হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেছে। এরপরও গার্মেন্টস মালিকরা তাদের কর্মীদের ঢাকায় কর্মক্ষেত্রে ডেকে এনে লোভের বলি বানিয়েছে গোটা দেশকে। গার্মেন্টসগুলো সচল থাকলে ঢাকায় করোনা বিস্তারে ব্যাপকতা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গার্মেন্টস খোলা থাকলে রাজধানী ঢাকাসহ চারপাশের এলাকার করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। আর এজন্য দায়ী কিছু রথী-মহারথী। তারা হলেন, বিজিএমইএ'র সভাপতি রুবানা হক, সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী, উপ-নির্বাচনে ঢাকা থেকে সদ্য  নির্বাচিত এক সংসদ সদস্য এবং বাণিজ্যমন্ত্রী ।  

সব ধরণের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা দেয়ার পরও গার্মেন্টস বন্ধ না করা ও শ্রমিকদের বন্ধের মধ্যে ঢাকায় আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রীসভা বৈঠকে গার্মেন্টস কাণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এসব প্রসঙ্গে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাসহ তা মোকাবিলায় মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের আরো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ সময় এসব রথী-মহারথীর কথা আলোচনা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সিকেও ধমক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 
এর আগে শুক্র ও শনিবার রাতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইয়ের পক্ষ থেকে পোশাক কারখানা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। তবে গত রবিবার দেখা যায় প্রায় সাড়ে তিন’শর ওপরে কল কারখানা খোলা ছিল। বিজিএমইএ এক সূত্রে জানা যায়, সেইদিন প্রায় ৩৯৭টি কারখানা খোলা ছিল।

বিজেএমইএ সভাপতি রুবানা হক আগামী নিউজ ডটকমকে বলেন, 'আমরা বার বার কারখানা বন্ধ রাখতে বলছি। শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন দেয়া হবে। কোনো শ্রমিকের চাকুরি যাবে না। এছাড়া তাদের কারখানা মালিকদের সহায়তার জন্য দেওয়ার জন্য আমরা একটি সেল করেছি।'

সোমবারে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গার্মেন্টস খোলার কথা বলে পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে আসা এবং  এখনো অনেক কারখানা খোলা কেন তা নিয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ  প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গার্মেন্টস  কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী,  ঢাকা থেকে উপ-নির্বাচনে ঢাকা থেকে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে দায়ী করেন।  

একই সঙ্গে বিজিএমইএর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিজিএমইএ নেতৃত্বকে দায়ী করার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী  বলেন, এ ঘটনার কারণে শ্রমিকদের মাধ্যমে সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার লাভ করবে। এক ঘণ্টারও কম সময় চলা বৈঠকের বেশিরভাগ সময়ই করোনাভাইরাস এবং পোশাক কারখানা নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতিতে সমন্বয় ছাড়া গার্মেন্ট খোলা এবং শ্রমিকদের ঢাকায় নিয়ে আসার ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটছে।  তিনি বলেন, প্রথমে গার্মেন্টসগুলো কারখানা ছুটি দেওয়া হলে শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। সরকার সাধারণ ছুটির সময়সীমা বাড়ানো হলো কিন্তু মালিকরা সেটি না দেখে ৫ এপ্রিল কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে শ্রমিকদের ঢাকায় নিয়ে আসেন।

তিনি গার্মেন্ট মালিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারা দেশে সাধারণ ছুটি থাকার পরও কার নির্দেশে, কার পরামর্শে শ্রমিকদের ঢাকা নিয়ে আসা হলো? রাতে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তাদের গ্রামের পথে আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এসময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করে বলেন,' আমি গার্মেন্টস মালিকদের নিয়ে বসেছিলাম। তাদেরকে পুরো পরিস্থিতি তুলে ধরে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করার কথাও বলেছিলাম। কিন্তু তারা  শোনেননি। এসময় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন যেসব কারখানা মাস্ক, পিপিইসহ এমন পণ্য তৈরির সঙ্গে যুক্ত শুধু তাদের কারখানা খোলা থাকবে।'

জানা যায় বিজিএমইএ বিকেএমইয়ের পক্ষ থেকে বারবার কল কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হলেও তা মানছে না অনেক কারখানা। সোমবার দেশের প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ গার্মেন্টস কল কারখানা খোলা ছিল। এদিকে কলকারখানা খোলা রাখতে হলে শ্রমিকদের মাস্ক সব নিরাপত্তা পোশাক বাধ্যবাধকতা পরার থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মানে না অনেক কারখানা।

মন্ত্রীসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ আরও  বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যান্য দেশের যে পরিস্থিতি তাতে বাংলাদেশও ঝুঁকিমুক্ত নয়। সামনের দিনগুলো আরো বিভীষিকাময়। এ জন্য সরকারের নিয়ম-কানুন মানাতে সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।


আগামী নিউজ/ডলি/মিঠু/নাঈম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে