Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনায় বিপাকে দেশের মৌ চাষিরা,পাশে থাকবে বিসিক


আগামী নিউজ | ম. শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২০, ০৪:৪৭ পিএম
করোনায় বিপাকে দেশের মৌ চাষিরা,পাশে থাকবে বিসিক

ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রভাব এবার মৌ চাষেও। একদিকে রপ্তানী বন্ধ  অপরদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে সারা দেশের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মৌয়ালদের মধু আহরণে ও উৎপাদনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রতি বছর মার্চ জুড়ে ঠাকুরগাঁও ও রংপুরের বদরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচুবাগানে মৌ চাষ করে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে চাষিরা। কিন্তু গত কয়েক বছরের সেই চিত্রও হারিয়ে গেছে এবার। চাষি, বিসিক কর্মকর্তাদের কাছে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মৌ চাষিদের এ বিপাকের চিত্র পাওয়া গেছে।  

করোনায় বিগত কয়েক বছরে দেশের যে মধুর উৎপাদন এবং বৈশ্বিক বাজারে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে তা  মারাক্তকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।   ফলে, একদিকে যেমন মৌ চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন তেমনি রপ্তানীমুখী উৎপাদন বন্ধ হবার  সরকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকেও বঞ্চিত হবেন। তবে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর চাষিদের সহযোগীতা করতে প্রস্তত রয়েছে বলে জানা গেছে।

মৌ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে  জানা গেছে, করোনার কারণে সারাদেশে যান চলাচল বন্ধের কারণে চাষিরা নিদিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারছেনা। বিশেষ করে, সুন্দরবনে মধু চাষের মৌসুম শুরু হবার ফলে সে জায়গাগুলোতে চাষিরা পৌঁছাতে পারছেনা। এর ফলে, সারা বছরের সিংহভাগ মধু আহরণ হুমকির মধ্য পড়ছে। চাষিরা বলছেন, প্রকৃত মধু চাষীদের পরিচয় নিশ্চিত করে যেন সুন্দরবনে মধু আহরণোর সুযোগ দেওয়া হয়।

মধু চাষিদের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে জাতীয় মৌমাছি পালন ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ মো. ওহিদুল ইসলাম আগামীনিউজকে বলেন, 'মধু চাষিরা লিচু থেকে উৎপাদিত মধু সংরক্ষণের পর তা রপ্তানী করতে পারছেনা। এছাড়া, নতুন মৌসুমের মধু অহরণে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছেন। বিশেষকরে, বিভিন্ন বাধার মুখে সুন্দরবনে মধু আহরণের সময় শুরু হলেও প্রকৃত মধু চাষিরা ঢুকতে পারছেনা। '

এছাড়া, মধু রপ্তানীর জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিভিন্ন অসুবিধার কথা উল্লেখ করে সরকারের সহযোগীতা কামনা করেন।

একটা সময় সুন্দরবনের মধুকেই বাংলাদেশের মধু বোঝানো হতো। সে সময় মৌয়ালদের সংগ্রহ করা মধুর বিপণন দেশের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্ত বিগত দশকে বাংলাদেশের মধুর চাহিদা বিশ্ববাজারে আলাদা একটি জায়গা দখল করে রেখেছে। আর এই ধারা অব্যাহত রাখতে মধুর চাষকেও সুন্দরবনের সীমানা থেকে সারা দেশের জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে। ফলশ্রুতিতে সুন্দরবন থেকে বেরিয়ে সরিষার খেত আর লিচুবাগান হয়ে উঠেছে মধুর নতুন উৎস।

মধু রপ্তানী ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারতে নব্বইয়ের দশকে মধু রপ্তানি শুরু করে বাংলাদেশ। সেটাই শুরু। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাজারেও মধু যেত। এখন বিশ্বের অন্যতম বড় ও সংবেদনশীল মধুর বাজার জাপানে রপ্তানি শুরু হয়েছে। যার পরিধী প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে ২ হাজার মৌ খামার ও ১ লাখ ২০ হাজারের অধিক মৌ বাক্স রয়েছে। এসব খামার থেকে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয়। আর ২০২০ সাল নাগাদ দেশে ১ লাখ টন মধু উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিলো বিসিক।

জানা গেছে, বিসিকের পক্ষ থেকে এর মধ্যে দেশের ১৫ হাজারের বেশি মৌ-চাষিকে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌ-চাষের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ কার্যক্রম প্রসারে সংস্থাটি ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মৌ চাষ উন্নয়ন প্রকল্প নামের’ একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এর আওতায় আরও ৬ হাজার নতুন মৌ-চাষি তৈরি করা হচ্ছে। মৌ-চাষের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি চাষিদের উৎপাদিত মধু বাজারজাতকরণে সহায়তা দিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিসিক কাজ করে যাচ্ছে।

পাঁচ বছর মেয়াদি ওই প্রকল্প ২০১২ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুন-এ শেষ হয়েছে। এছাড়া মৌ চাষে উপযোগী ৫৫টি জেলায় বিশেষ খামার সৃষ্টি করে মধু উৎপাদনে কাজ করছে সরকার। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক মৌ চাষিদের খামার স্থাপনের জন্য ৯ শতাংশ হারে ব্যাংক সুদে ২৫ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।

এদিকে মধুর উৎপাদন বৃদ্ধি, মৌ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও যাবতীয় উন্নয়নে যৌথভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে বিসিক।

মৌচাষিদের বিষয়ে বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বিসিক চেয়ারম্যান মো: মোশ্‌তাক হাসান এনডিসি আগামীনিউজকে বলেন, 'আমাদের মিল ফ্যাক্টরী কোথাও বন্ধ হয় নাই। যারা হাইজন স্যানিটেশন মেইনটেইন করে কোন কাজ করতে চায় আমরা তাদের কোন কাজে বাঁধা দিচ্ছিনা।


তিনি আরো বলেন, প্রকৃত মৌচাষিদের কোন কাজে সমস্যা হবার কথা নয়। এছাড়া, যারা সুন্দরবনে মধু আহরণের জন্য যেতে চায় তারা যেতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, তারা সেখানে গিয়ে এক জায়গায় বিশেষ ব্যবস্থায় থাকেন। 

তিনি আরো বলেন , 'সুন্দরবনে মধু আহরণে কোন সমস্যা দেখা দিলে তারা যেন খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা অফিসগুলোতে যোগাযোগ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত মধু চাষিদের সর্বাত্বক সহায়তা করবো। এছাড়া,  তাদের কোন অসুবিধার হলে তারা যেন ০১৭১৫-২২৩৯৪৯ এই নম্বরে  যোগাযোগ করেন।'

আগামীনিউজ/ইমরান/ডলি/নাঈম
 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে