Dr. Neem on Daraz
Victory Day

‘সূর্যডিম’ আম এখন বাংলাদেশে


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২১, ১০:০৫ এএম ‘সূর্যডিম’ আম এখন বাংলাদেশে

ঢাকাঃ পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু আমের নাম মিয়াজাকি। জাপানি এ আম সবচেয়ে দামিও। বিশ্ববাজারে ১ কেজি মিয়াজাকি আমের দাম প্রায় ৭০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার টাকা। এখন এ আম চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও।

মিয়াজাকি বিশ্বময় ‘রেড ম্যাঙ্গো’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘সূর্যডিম’ আম হিসেবে। প্রতিটি সূর্যডিম আমের ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। সে হিসাবে একেকটি আমের দাম প্রায় ৩ হাজার টাকা।

জাপান থেকে এ আমের চারা প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ ড. মেহেদি মাসুদ। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো এ আম চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন এক কৃষক। তার পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিয়াজাকি আমের সাফল্যে বিস্মিত কৃষি বিভাগ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাদবাগানেও এ আমের চাষ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে মহালছড়ি উপজেলার ধুমনিঘাটে ৩৫ একর জায়গাজুড়ে ২০১৬ সালে মিয়াজাকি আমের চাষাবাদ শুরু করেন হ্ল্যাশিমং চৌধুরী। তার বাগানে প্রায় ৬০ প্রজাতির আম আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এ জাতের আমের আবাদ শুরু করেছেন তিনি। চার বছর আগে দেশের বাইরে থেকে নিজ উদ্যোগে চারা সংগ্রহ করেন তিনি।

কৃষিবিদ ড. মেহেদি মাসুদ বলেন, ‘জাপান থেকে ১ হাজার ৫০০টি সূর্যডিম আমের চারা বাংলাদেশে আনি। সারা দেশে আমাদের কৃষি অধিদপ্তরের ৭৬টি হর্টিকালচার সেন্টারের প্রত্যেকটিতে দুটি করে আমের চারা দেওয়া হয়। চারাগুলো যত্ন করে পালনের কারণে দুই বছরের মাথায় অর্ধেক গাছে আম ধরেছে। একেকটি গাছে আপাতত ৫-৭টি করে আম ধরেছে। এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। আকারেও ছোট হয়েছে আমগুলো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এসব গাছ থেকে কলম করে সারা দেশে বিপণন করতে চাই। এ গাছ লাগানোর ৩-৪ বছরের মধ্যে আম ধরে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। আমাদের পর্যাপ্ত কলম হলে সেগুলো কম দামে বাণিজ্যিক এবং সৌখিন কৃষকদের কাছে বিক্রি করব।’

ড. মেহেদি মাসুদ আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ আমের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বেশ সাফল্যও এসেছে। বিভিন্ন এলাকায় গাছে সূর্যডিম আম পাকতে শুরু করেছে। এই আম চাষে কৃষকরা যেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছেন, তাতে অচিরেই এই রেড ম্যাঙ্গো বা সুর্যডিমের চাষ সারা দেশে সফলতার মুখ দেখবে।’

তিনি জানান, সূর্যডিম আম চাষে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ১ হাজার গাছের কলম করা হচ্ছে। তা চাষিদের মধ‌্যে বিতরণ করা হবে। এর পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যারা ছাদবাগান করছেন, তাদের এ আমের গাছ লাগানোর ব্যাপারে উৎসাহী করা হচ্ছে। এখনও কলম বিক্রির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সূর্যডিম আমের চারার দাম ১০০ টাকার বেশি হবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে জাপান থেকে আনা ১ হাজার ৫০০টি সূর্যডিম আম গাছের চারা দেশের ৭৬টি হর্টিকালচার সেন্টারে মাতৃবাগানে রোপণ করা হয়। প্রায় ৪ বছর পর রাজধানীর আসাদগেট, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও গাজীপুরের নুরবাগের হর্টিকালচার সেন্টারে গাছে সূর্যডিম ধরেছে এবং পেকেছে। এসব হর্টিকালচার সেন্টারে মোট সূর্যডিম আমগাছের প্রায় অর্ধেক গাছে ফল ধরেছে। পাকার পর এই আমের রং হয় লাল। পাকার আগে রং থাকে গোলাপি। এসব হর্টিকালচার সেন্টার ছাড়াও খুলনার ডুমুরিয়া ও রাজধানীর বিভিন্ন বাসার ছাদে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সূর্যডিম আমের চাষ শুরু করেছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর আসাদগেট হর্টিকালচার সেন্টারে উৎপাদিত চারটি সূর্যডিম আম প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে।