Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনাকালে বাল্যবিয়ে


আগামী নিউজ | ফেরদৌসী রহমান মারিয়া প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৫:৫৪ পিএম করোনাকালে বাল্যবিয়ে

ঢাকাঃ সেই স্কুলশিক্ষার্থীর কথা মনে আছে যে কিনা নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকাতে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলো নিজের বাবা-মা’র বিরুদ্ধে। তার ১৮ বছর পূর্ণ হতে আরও চার মাস বাকি ছিলো। দারুণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলো ১৭ বছর বয়সী সেই কিশোরী। এজন্য তাকে হেনস্তাও হতে হয়েছে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কাছে। সে অন্য কারো সম্পর্কে জড়িত কিনা আরও নানাবিধ আপত্তিকর মন্তব্য।

তবুও সাহস হারায় নি হাল ছাড়েনি সেই কিশোরী। নিজের ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার দুঃসাহসিকতাটুকু দেখাতে সক্ষম হয়েছে সে। কিন্তু কতজন আসলে সেই সাহসটুকু অর্জন করতে পারে, বা কতজনেরই সেই সাহস দেখানোরই সুযোগ থাকে? বাল্যবিয়ে বাংলাদেশের এক পুরাতন মহামারির নাম। আর এই করোনা মহামারিতে এর সংক্রমণ বাড়াতে ইন্ধন যুগিয়েছে।

বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বাল্যবিয়ের হার শতকরা ১৩ ভাগ, যা গত ২৫ বছরে সর্বোচ্চ। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের বিরূপ প্রভাব যারা আগে থেকেই অবহেলিত তাদের ওপর এসেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। এই মহামারি সমাজের অবহেলিত নারী সমাজের নিরাপদে, নির্ভয়ে, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। নারীদের দুর্বল ভাবা বা দুর্বল করে রাখতে চাওয়া এই পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বলের ওপর সবলের চড়াও হওয়ার প্রথাগত পরম্পরা ধরে রেখেছে। ক্রমাগত চলছে নিপীড়ন নির্যাতন।

নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য না করার মনোভাবটা এখনও বিলুপ্ত হয়নি। সে হোক না তার আপন সন্তান, দারিদ্র্যতার দোহাই দিয়ে মেয়ে সন্তানটিকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। ঘরে খাবার নেই, কিশোরী মেয়েটিকে বিয়ে দিলেই যেন খরচা কমে যাচ্ছে, থাকার জায়গা নেই তো অন্যের বাড়িতে গেয়ে দিনের পর দিন মার খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য হলেও মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও।

রাস্তা ঘাটে উত্যক্ত হচ্ছে তো তাকে বিয়ে দিয়ে দাও, প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় ধর্ষণের খবর শোনা যাচ্ছে তো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও। যার হাতে বা যে পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছে তারা যেমনই হোক। অথচ সেই একই বাবা মা তার ছেলে সন্তানটিকে অভাব অনটনের দোহাই দিয়ে এতো বিপদের মুখে ঠেলে দেয় না। মহামারি পরিস্থিতিতে নারীর ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ, নিপীড়নের হার আরও বেড়ে যাওয়ায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকার কারণে বাল্যবিয়েকেই একমাত্র সমাধান মনে করছে অভিভাবকরা। কন্যা সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং নিরাপত্তা দিতে না পরায় তারা এধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন।

কিন্তু তারা ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে গিয়ে আরও ভয়ংকর অনিশ্চিয়তার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। যথাযথ সময়ের আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ওপর চলা নিপীড়নের কথা বা তার প্রতিবাদ করার মতন মানসিকতা সাহসিকতা যুগিয়ে উঠতে পারছে না। করোনাকালীন নারীরা ঘরে থাকার কারণে আরও বেশি পরিমাণে পুরুষদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

সেই নারীদের মধ্যে প্রতিনিধিত্বকারীদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার। যথাসময়ের পূর্বে গর্ভধারণের কারণে মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া অপার সম্ভাবনাময় মেয়েটির ভবিষ্যৎ ‘বাল্যবিয়ে’ নামক এই ভয়ংকর প্রথার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আগামীনিউজ/প্রভাত