Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রংপুরে আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমি: ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২১, ১১:০৬ এএম রংপুরে আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমি: ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
রংপুরঃ কৃষিজমি আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গত ১০ বছরে জেলায় কৃষিজমি কমেছে প্রায় ৬ হাজার ৬৩১ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই কৃষিজমি কমেছে ৩ হাজার ৭৭৩ হেক্টর। ফলে একসময় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তাই ফসলি জমির অপব্যবহার রোধে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে।
 
‘রংপুর বিভাগ এবং সিটি করপোরেশন হওয়ার পর বিভিন্ন জেলার মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করছে। এটি কৃষিজমি কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। কৃষিজমি রক্ষায় যে বিদ্যমান আইন আছে, তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।’
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কৃষিজমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন, নদীভাঙনসহ নানা কারণে প্রতি বছর জেলায় কৃষিজমি কমছে। খাল-বিল ভরাট, অপরিকল্পিত ইটভাটা স্থাপনও এর জন্য দায়ী। রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় ২০১৪ সালে ১৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমি থাকলেও বর্তমানে আছে ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর। গত সাত বছরে কমেছে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর।
 
রংপুর জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতি মাসে ৯-১০ হাজার জমি কেনাবেচাসহ বিভিন্ন দলিল সম্পাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে কৃষিজমি আছে শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ। জেলা রেজিস্ট্রার মো. আব্দুস সালাম বলেন, কেউ কৃষিজমি কিনে অকৃষি কাজে ব্যবহার করবে কিনা তা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আইন করে শুধু কৃষিজমি নয়, যেকোনো জমির ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
 
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ১০ বছরের (২০০৯-১০ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত) হিসাবে দেখা যায়, জেলায় কৃষিজমি কমেছে প্রায় ৬ হাজার ৬৩১ হেক্টর। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকৃত আবাদি জমি ছিল ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯১ হেক্টর। ২০১০-১১ অর্থবছরে ২১ হেক্টর, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৮ হেক্টর, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৬ হেক্টর, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৪ হেক্টর, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৬৩ হেক্টর, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৮২ হেক্টর, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৮ হেক্টর, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫২৬ হেক্টর ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি জমি কমেছে ৩ হাজার ৭৭৩ হেক্টর। বর্তমানে জেলায় প্রকৃত কৃষিজমির পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ১০০ হেক্টর।
 
রংপুর মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা আমিনা খাতুন বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকায় জমির দাম বৃদ্ধি ও কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়াই আবাদি জমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তবে তিন ফসলি জমি যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। বর্তমানে কেউ কমিটির অনুমোদন ছাড়া কৃষিজমি অকৃষি খাতে বিক্রি করতে পারবেন না।
 
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস শুরুর পর থেকে মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি ইটভাটারও লাইসেন্স দেয়া হয়নি।
 
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষিজমিতে চাপ পড়ছে। শহরের মতো গ্রাম-গঞ্জেও বহুতল ভবন নির্মাণ বাড়ছে।
 
এদিকে, কৃষি বিভাগ উচ্চফলনশীল এবং স্বল্পকালীন ফসল আবাদে গুরুত্ব দেয়ায় কৃষিজমি কমা সত্তে¡ও জেলায় উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ১০ বছরে জেলায় ধান ও গম মোট চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছে। গত অর্থবছরে জেলায় শস্যের চাহিদা ছিল ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৪ টন। উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৭ হাজার ৮৫৪ টন। তবে কৃষিজমি কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকলে উৎপাদনে সংকট দেখা দেবে।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকার অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. সরওয়ারুল হক বলেন, অবশ্যই তিন ফসলি জমি যাতে অকৃষি খাতে ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ একই জমিতে একাধিকবার আবাদ করলে মাটির ওপর চাপ পড়া স্বাভাবিক। এজন্য সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
 
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। তাই শস্য উৎপাদনে রংপুরের কৃষিজমি রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
 
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, রংপুর বিভাগ এবং সিটি করপোরেশন হওয়ার পর বিভিন্ন জেলার মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করছে। এটি কৃষিজমি কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। কৃষিজমি রক্ষায় যে বিদ্যমান আইন আছে, তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
 
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, কৃষিজমি রক্ষায় সরকারের যে আইন আছে, সেটি অনুসরণ মাধ্যমে আমরা কাজ করছি। কেউ কৃষিজমি কিনে যদি অকৃষি খাতে ব্যবহার করতে চায়, অবশ্যই তাকে অনুমোদন নিতে হবে। তবে তিন ফসলি জমিকে কখনো অকৃষি কাজে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হবে না। কৃষিজমি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
 
আগামীনিউজ/এএস