Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বাদাম যেভাবে যৌবন ধরে রাখে


আগামী নিউজ | অনন্যা চৌধুরী লাবনী প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২১, ০৪:৫৯ পিএম আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২১, ০৭:১০ পিএম বাদাম যেভাবে যৌবন ধরে রাখে

ঢাকাঃ কাজু বাদাম , আখরোট, আমন্ড,চিনা বাদাম, অমাদের দেশীয় বাদাম। সব বাদামেই রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ।

যৌবন ধরে রাখতে বাদামের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে সারারাত যদি সেই বাদাম জলে ভিজিয়ে রেখে খান তবে তো তার সুফল পাবেনই আপনি।

বাদাম যেভাবে যৌবন ধরে রাখতে সহযোগিতা করে-

১) এই বাদাম মেদ ঝরিয়ে, শরীরে ফোলাভাব কমায়।

২) হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে ভেজানো বাদাম।

৩) ভেজানো বাদামে ভিটামিন B-17 থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধেও কাজ করে।

৪) শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ভেজানো বাদাম। তবে রোজ সকালে খালি পেটে খেলেই ভালো।

৫) গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবেই ভালো এই বাদাম।

৬) বাদামে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পুষ্টিগুণ এবং শরীরিক উপকারিতার দিক থেকে বাদামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এতে উপস্থিত প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন নানা ভাবে শরীরের উপকারে আসে। শুধু তাই নয়, বাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকেরা একে প্রকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন। 

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যদি বাদাম খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বহু প্রকার পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে আরও কিছু উপকার পাওয়া যায়। ক্যান্সার রোগ দূরে থাকে যেখানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেখানে ক্যান্সার সেলের খোঁজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রতিদিন এক মুঠো করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আসলে এই বাদমটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি টিউমার যাতে দেখা না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখে। 


প্রসঙ্গত, বাদামে থাকা প্রম্যান্থোসায়ানিডিন নামে একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সংক্রমণের আশঙ্কা কমে প্রাকৃতিক উপাদানটিতে থাকা জিঙ্ক, ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। তাই আপনি যদি এই ধরনের ইনফেকশনের শিকার প্রায়শই হয়ে থাকেন, তাহলে রোজের ডায়েটে বাদামের অন্তর্ভুক্তি ঘটাতেই পারেন।

হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে বাদামে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একদিকে যেমন ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে, তেমনি নানাবিধ হার্টের রোগ থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের পরিবারে হার্ট ডিজিজের ইতিহাস রয়েছে, তারা প্রয়োজন মনে করলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতেই পারেন।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে 

মাঝে মধ্যেই কি রক্তচাপ গ্রাফের কাঁটার মতো ওঠা-নামা করে? তাহলে তো চটজলদি বাদাম খাওয়া শুরু করুন। কারণ এই বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে বাদামে রয়েছে ওলিসিক নামে এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দেহে বাজে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে দারুন কাজে আসে। তাই তো নিয়মিত এই বাদমটি খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়

কপার হল সেই খনিজ, যা চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্তপোক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে বাদামে । এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন কিভাবে বাদাম চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, বাদামে থাকা কপার শরীরের অন্দরে এমন কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের কালো রংকে ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।

ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে 

আমাদের দেশে যে হারে সুগার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বাদাম খাওয়ার প্রয়োজন বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে- প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবারটি নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্র নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে শরীরর কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। তাই পরিবারে যদি ডায়াবেটিস রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে প্রতিদিন এক মুঠো করে বাদাম খাওয়ার শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
বাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে। যেহেতু বাদামে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে তাই দৈনিক ৫-১০টা বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। বাদামে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। এটি দুর্বল ব্যক্তিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়া বাদামে আরও অনেক স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে।

কাজু বাদামে কী উপকারিতা

১। কাজু বাদাম ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের শরীরে দৈনিক ৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। আর এটা পূরণ করে এ বাদাম। কাজু মাংসপেশী ও স্নায়ুর সঠিক কাজ ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।

২। বাদামে কোলেস্টেরল থাকে না, এবং এতে ভালো ফ্যাট আছে। খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে কাজুবাদাম। তাছাড়া কাজুতে অলেইক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারি।

৩। বাদামে সোডিয়াম কম এবং পটাসিয়াম বেশি থাকে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪। বাদামে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই থাকে। কাজুতে থাকা জিংক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আপানাকে সুস্থ রাখে। কাজু ফ্রি র‌্যাডিকেলের জারণ প্রতিরোধ করে, যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৫। বাদামে উচ্চমাত্রার কপার থাকে তাই এনজাইমের কাজে, হরমোনের উৎপাদনে এবং মস্তিস্কের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও লাল রক্ত কণিকার উৎপাদনেও সাহায্য করে। এক কথায় এটা অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করে।

সতর্কতা : 
যাদের অ্যালার্জি ও  মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের কাজু বাদাম না খাওয়াই ভালো। হাইপারটেনশনের রোগীরা লবণাক্ত কাজু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

কোন বাদামে কী উপকারিতা

প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও তেলের জরুরি উৎস বাদাম। পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব। অনেক রকমের বাদাম বিশ্বে উৎপাদিত হয়। সব বাদামই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। যেমন, চিনাবাদামে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন-এ, বি, সি রয়েছে। ভোরবেলা খালি পেটে বাদাম খেলে এনার্জি পাওয়া যায়। বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

আখরোটে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ভিটামিন। এটি হাড় শক্ত করে। ব্রেনে পুষ্টি জোগায়। পেস্তা বাদামে আছে ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন। এটি রক্ত শুদ্ধ করে। লিভার ও কিডনি ভালো রাখে।কাজু বাদামে আছে আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন-এ। এটি রক্তশূণ্যতা কমিয়ে দেয়। ত্বক উজ্জ্বল করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

আমন্ডে আছে ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক এসিড ও ভিটামিন ই। এটি শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ত্বকের নানা সমস্যায় খুব ভালো। সব বাদামের মধ্যে আমন্ডে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। নিয়মিত চার-পাঁচটি আমন্ড খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে না। কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে। কেমোথেরাপি চলাকালে আমন্ড মিল্ক খেলে ইমিউনিটি সিস্টেমের উন্নতি ঘটে। আমন্ডের ফাইবার শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণের গতি কমায়। ফলে ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। আমন্ড বাটা নিয়মিত লাগালে বলিরেখার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বাদামের বহুমাত্রিক গুণাগুণ

অবসর সময়ে, প্রিয়জন ও  বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডায় বাদাম খাওয়ার জুড়ি নেই। অনেকে আবার স্বাস্থ্য সচেতনায়ও নিয়মিত বাদাম খেতে পছ্ন্দ করেন। তবে যে কারণেই বাদাম খাওয়া হোক না কেন তা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। বাদামের  যে বহুমাত্রিক গুণাগুণ রয়েছে তা আমাদের অনেকেই হয়তো জানি না। আবার বাদামের প্রকারভেদে গুণাগুণও ভিন্ন ভিন্ন হয়।  নিচে বিভিন্ন প্রজাতির বাদামের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হলো :

চিনাবাদাম : এই প্রজাতির বাদামে প্রোটিন, ফাইবার,ক্যালসিয়াম,আয়রন, সোডিয়াম,পটাসিয়াম, ভিটামিন-এ,বি, সি রয়েছে।

ফলে এর উপকারিতা  অনেক। যেমন : ১. প্রোটিনের ভালো উৎস। ভোরবেলা খালি পেটে বাদাম খেলে এনার্জি পাওয়া যায়।

২. নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে চিনাবাদাম বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। ৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
আখরোট : এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ভিটামিন।

উপকারিতা : ১. হাড় শক্ত করে ও ২. ব্রেনে পুষ্টি জোগায়।

পেস্তাবাদাম : এই ধরনের বাদামে থাকে ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার,ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন।
উপকারিতা : ১. রক্ত শুদ্ধ করে। ২. লিভার ও কিডনি ভালো রাখে।

কাজুবাদাম : এর উপাদানগুলো হচ্ছে আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-এ।
উপকারিতা : ১. অ্যানিমিয়া ভালো করে। ২. ত্বক উজ্জ্বল করে। ৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

আলমন্ড : এর উপাদানের মধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক এসিড ও ভিটামিন ই। তাই বাদামের রাজা বলা হয় আলমন্ডকে। উপকারিতা : ১. শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ত্বকের নানা সমস্যায় খুব ভালো। সব বাদামের মধ্যে আমন্ডে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে।

২. নিয়মিত চার-পাঁচটি আমন্ড খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে না।

৩. কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে।

৪. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। কেমোথেরাপি চলাকালে আলমন্ড মিল্ক খেলে ইমিউনিটি সিস্টেমের উন্নতি হয়।

৫. আলমন্ডের ফাইবার শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণের গতি কমায়। ফলে ডায়াবেটিসের জন্য উপকারি।

৬. আলমন্ড বাটা নিয়মিত লাগালে বলিরেখার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

তাই নিয়মিত বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন দেখবেন আস্তে আস্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরের শক্তিমত্তাও বাড়বে। কাজে কর্মে পাবেন পূর্ণ উদ্যোম। প্রতিদিন সামান্য পরিমান বাদাম খাবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আগামীনিউজ/প্রআ