Dr. Neem on Daraz
Victory Day

যশোরে ৮২% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার


আগামী নিউজ | মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১, ০৫:৩৭ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১, ১০:৫৫ পিএম যশোরে ৮২% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার

যশোরঃ জেলার বেনাপোল ও শার্শায় ৮২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। অথচ সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করার নির্দেশ থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। তবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছে শিক্ষা অফিস।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও যশোরের শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পোর্ট থানার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। বিশেষ করে উপজেলা ও পোর্ট থানার ৩৩টি মাদ্রাসার একটিতেও শহীদ মিনার নেই। তাছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়েও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হয় না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে।

এসব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে সমাজের নামীদামি ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে থাকলেও দীর্ঘদিনেও শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অথচ তারা অন্য খাতে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে থাকেন। পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন অনুদানতো দেন না উপরান্ত নিয়ে থাকেন।  শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ও বরনে। ফলে নানা ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে ভাষাপ্রেমী মানুষের মধ্যে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শার্শা ও বেনাপোলে ২শ‘৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১২৬টি প্রাথমিক ও প্রি-ক্যাডেট এবং কমিউনিটি মিলিয়ে আরো রয়েছে ৫৪টি। এদের মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৮টিতে। ৩৮টি হাইস্কুলের মধ্যে ২৬টিতে শহীদ মিনার আছে।  ১২টি কলেজের মধ্যে মাত্র ৩টিতে শহীদ মিনার আছে। ৩৩টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও কোন শহীদ মিনার নেই। তবে সব মিলিয়ে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে।

এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। অভিযোগ আছে, মাদ্রাসাগুলোতে দিবসটি পালন করা হয় না। কোন কোন মাদ্রাসায় নামমাত্র মিলাদ মাহফিল ও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনসহ কোন ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষ।

উপজেলার নাভারন বুরুজবাগান ফাজিল মাদ্রাসার সুপার এ,কিউ,এম ইসমাইল হোসাইন জানান, মাদ্রাসাটি ১৯৬৫ সালে নির্মিত হলেও অদ্যবধি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। একই দাবি করেন উপজেলার লক্ষণপুরের রহিমপুর আলিম মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শহিদুল্লাহ। মাদ্রাসায় শহীদ মিনার না থাকলেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

বেনাপোল সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইজ্জত আলী বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছিল যাদের স্মরণে আজও শার্শা উপজেলায় ৮২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা ও স্মরণ করতে পারেনা।

একই কথা বলেন, বেনাপোলের সিনিয়র মাদ্রাসার সুপার মো. ইলিয়াস হুসাইন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্যে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করতে পারেন না অনেকে। মাদ্রাসাগুলোতে গড়ে ওঠেনি কোন শহীদ মিনার। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যকতা থাকলেও শার্শা-বেনাপোলের অনেক প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। উপজেলার ১২টি কলেজ, ৩৮টি হাইস্কুল, ৩৩টি মাদ্রাসা ও অসংখ্য কিন্ডার গার্ডেন এর মধ্যে মাত্র ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। কিন্তুু ৩৩টি মাদ্রাসার একটিও তে শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে পত্র দেওয়ার পরও তারা শহীদ মিনার নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেয়নি।

তৃণমূল পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতে বা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা জানাতে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রি ক্যাডেট এবং কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪টি। ১৮০টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬২টিতে কোন শহীদ মিনার নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ দরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে একটি পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন ফান্ড নেই। এ কারনে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। জনগনের উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার এএসএম আব্দুল খালেক জানান, শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোন বরাদ্দ নেই। যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শহীদ মিনার নেই তাদেরকে নির্মাণ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি ভাবে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য শহীদ মিনার নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

আগামীনিউজ/এএস