Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বঙ্গবন্ধু, কৃষি ও কৃষিবিদ


আগামী নিউজ | তানিউল করিম জীম, বাকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১, ০২:৫২ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১, ০২:৫৪ পিএম বঙ্গবন্ধু, কৃষি ও কৃষিবিদ

ময়মনসিংহঃ কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের রয়েছে উর্বর মাটি, প্রকৃতি প্রদত্ত অফুন্ত সম্পদ, আর পরিশ্রমী জনগণ। এর মাধ্যমে আমরা যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারি। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল এদেশের শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো। একসময় কৃষক যেমন শোষণ আর বঞ্চনার শিকার হতেন, তেমনই কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু কৃষিবিদরাও সামাজিক অবহেলা তথা অমর্যাদার শিকার হতেন।

স্বাধীনতার আগে স্নাতক শেষ করে চাকরিতে যোগদানের সময় কৃষিবিদদের দ্বিতীয়  শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হতো। ফলে স্বাধীনতার আগে থেকেই চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীদের মতো কৃষিবিদদের প্রথম  শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দেওয়ার দাবি ওঠে। এ সময় দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে মারা যান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মলয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব ভালো করেই কৃষিবিদদের গুরুত্ব অনুধাবন করেন। বুঝতে পারেন কৃষিপ্রধান দেশে কৃষির সম্পূর্ণ বিকাশ ও উৎকর্ষ ব্যতিরেকে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। অবশেষে জাতির জনক এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

ঐতিহাসিক ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বরে (বর্তমান নাম) কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করে পে-স্কেল সংশোধনের ব্যবস্থা করেন। এর পর থেকে প্রথম  শ্রেণির সুবিধাগুলো পে-স্কেলের মাধ্যমেও স্বীকৃত হয়। ফলশ্রুতিতে কৃষিবিদরা যেমন সম্মানিত হয়েছেনতেমনি দেশে কৃষিরও ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আবাদি জমি দিন দিন কমার পরও জনসংখ্যা দ্বিগুণ বাড়লেও খাদ্য উৎপাদন  বেড়েছে প্রায় চারগুণ। সেদিন এ ঘোষণা না হলে অর্থাৎ কৃষিবিদদের পদমর্যাদা উন্নত না হলে আজও এ দেশের কৃষিক্ষেত্র থাকতো আধারেই। কারণ সে মর্যাদা পেয়েই দেশের মেধাবী সন্তানরা এসেছে কৃষি শিক্ষায়। শুরু হয় ফসলের নতুন জাত এবং ফসলের উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি। শুধু ফসল নয়, ফসলের পাশাপাশি গবাদিপশুর উন্নয়ন, দুধের মান ও পরিমাণ বাড়ানো, মাংসের জন্য উন্নত জাতের পশুপালন প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরনের মাছের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি খামারের বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষির সমৃদ্ধি। ১৩ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই বাংলার কৃষির পরিপূর্ণ বিকাশ শুরু হয়।

বাকৃবিতে বঙ্গবন্ধু

এদিকে ১৯৭০ সালে কৃষি স্নাতকদের একটি দল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে মিলিত হয়ে একটি সমিতি গঠন করেন যার নাম দেন ইষ্ট পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল এসোসিয়েশন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২রা জানুয়ারি কৃষি ভবন প্রাঙ্গনে বিশেষ সাধারণ সভায় এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষিবিদ সমিতি নামকরণ করা হয়। পরে ২০ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে আবার নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন” করা হয়।

২০১০ সালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রতিবছর দিনটিকে ‘কৃষিবিদ দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে সর্বস্তরের কৃষিবিদ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। কৃষিবিদ দিবসটি বাঙ্গালি জাতির কাছে একটি স্মরণীয় দিন। কারণ ওই ১৩ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই বাংলার কৃষির পরিপূর্ণ বিকাশ শুরু হয়। কৃষি ক্ষেত্রের এ উন্নয়ন আজ সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

কৃষিবিদরা কি করে? কৃষিবিদরা কৃষককে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকেন। তারা মাঠে গিয়ে কৃষি সমস্যা নির্ণয় করে সে বিষয়ে কৃষককে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শুধু পরামর্শ নয়, তার সমাধানও দেওয়ার চেষ্টা করেন। অপরদিকে ইঞ্জিনিয়ার পেশা সবচেয়ে লাভবান হিসেবে পরিচিত। কৃষকের কল্যাণে কৃষিবিদরা ছুটে যাচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, কৃষকের হৃদয়ের কাছে যেখানে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে গর্বিত ইতিহাস, কৃষিক্ষেত্রে কাক্ষিত সফলতার ইতিহাস। তাই এখন সবাই বলেন। গ্রাম আর এখন সে গ্রাম নেই, বদলেছে এর অনেক কিছু। সেই সঙ্গে বদলে গেছে মানুষের যাপিত জীবন। কৃষিবিদরা কৃষির উন্নয়নের জন্য গবেষণা করেন। গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত হয় নতুন প্রযুক্তি। আর সে প্রযুক্তি মাঠে সম্প্রসারণও করেন কৃষিবিদরা। কৃষিবিদদের হাতেই সৃষ্টি হয় ফসলের নতুন জাত কিংবা ফসলের উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি। শুধু ফসল কেন, ফসলের পাশাপাশি গবাদিপশুর উন্নয়ন, দুধের মান ও পরিমাণ বাড়ানো, মাংসের জন্য উন্নত জাতের পশুপালন প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরনের মাছের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি খামারের বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিকীকরণ, কিংবা কৃষির সব ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এ সবই কৃষিবিদদের হাতের স্পর্শে প্রাণ পায়। উজ্জীবিত হয় সংশ্লিষ্ট সবাই। এভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় এ দেশের  মেরুদন্ড-খ্যাত কৃষকের অর্থনৈতিক অবকাঠামো।

বঙ্গবন্ধু একটি নতুন মানচিত্র চেয়েছিলেন, নতুন ভূখন্ড চেয়েছিলেন, নতুন জাতিসত্তা চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন একটি স্বনির্ভর সুখী মানুষের সোনার দেশ। তাই তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সার্বিক কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার প্রদানের পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নের সৈনিক কৃষিবিদদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। এজন্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কৃষিবিদরা বদ্ধপরিকর। এজন্য দরকার সবার সমন্বিত, আন্তরিক এবং কার্যকর পদক্ষেপ।

আগামীনিউজ/নাসির