Dr. Neem on Daraz
Victory Day

হারিয়ে গেছে চিরচেনা বাবুই পাখি


আগামী নিউজ | ডুমুরিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২১, ১২:২৫ পিএম হারিয়ে গেছে চিরচেনা বাবুই পাখি

খুলনাঃ জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই বাবুই পাখির বাসা। ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা মেলেনি চিরচেনা সেই বাবুই পাখির বাসা। শুধুমাত্র ডুমুরিয়া উপজেলার বামুন্দিয়া এক বিলে একটি তাল গাছে ক্ষতবিক্ষত কয়েকটি বাবুই পাখির বাসা খুঁজে পওয়া গেছে। পৃথিবীর জীব বৈচিত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন কর্মসূচি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকমূলক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে, কিন্তু সকলের অগোচরে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে বাবুই পাখি। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আয়লা সিডর আম্ফান, বুলবুল, ও সর্বশেষ ফনির আঘাতের কারণে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার সুদর্শন বাসা।

এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং আত্মনির্ভশীল হতে উৎসাহ দিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও পরিবেশে বিপর্যয়ের কারণে পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। একসময় গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছে এরা বাসা বেঁধে থাকতো। প্রকৃতি থেকে তাল আর খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে।

একসময় খুলনায় তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। তবে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কিছু দেশি বাবুই দেখা যায় কিন্তু সেটা খুব সীমিত। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির প্রথম পছন্দ তাল গাছ। এরপর নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ। এরা খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে বাসা বাঁধে। বাসার গঠনও বেশ জটিল, তবে আকৃতি খুব সুন্দর। বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত।

শুরুতে বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। অর্ধেক বাসা বাঁধার পর তার সঙ্গীকে খোঁজে। স্ত্রী বাবুইটির পছন্দ হলে মাত্র চার দিনে বাসা বাঁধার কাজ শেষ করে। বাসার নিম্নমুখী একটি গর্ত বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে নেয়। অন্যটি খোলা রাখে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে-বাইরে কাদা লাগিয়ে রাখে। ফলে প্রবল ঝড়ে বা বাতাসেও টিকে থাকে বাসা। রাতে বাসা আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে এনে রাখে। সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে পুরুষ বাবুই। স্ত্রী বাবুইকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করতে খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফূর্তিতে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে।

সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। তাই এদের ঠোঁটের আকৃতি সহজে বীজ ভক্ষণের উপযোগী চোঙাকার। আর ঠোঁটের গোড়ার দিকটা মোটা। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।

হারিয়ে যাওয়া বাবুই পাখির মনমুগ্ধকর ছন্দের কথা আবেগঘনভাবে মোল্লা আবু বকর বলেন, সবুজ রঙের এ বাবুই পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যেত সন্ধ্যা ও সকালে। এ পাখি যেমন শিল্পী; তেমন ঘুম জাগানিয়া। চমৎকার সুরে মানুষের ঘুম ভাঙাতো। এখন নেই কোন বড় তাল আর নারিকেল গাছ। বাসা বাঁধার জায়গা না থাকায় এ পাখি বংশ বৃদ্ধি করতে পারেনি। এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছে। পরিবেশ ও পাখি সংরক্ষণের জন্য তাল, নারিকেল গাছ রোপণ জরুরি।

এখন কৃষকরা ক্ষেতে ও বীজতলায় কীটনাশক ব্যবহার করায় বাবুই পাখি মারা যায়। বংশ রক্ষার্থে তারা এলাকা ত্যাগ করেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাবুই পাখির বংশ বিস্তারে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণ করতে হবে। সেই সাথে কীটনাশকের অপব্যবহার রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

 এ বিষয়ে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা বিশ্ব জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে, সেভ ওয়ার্ল্ড লাইভ সংগঠনের সভাপতি বলেন, দেশের হারিয়ে যাওয়া অনেক পশুপাখি এখন এলাকায় দেখা যাচ্ছে, পাখি শিকার বন্ধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমাদের সঙ্গে প্রশাসন সমানতালে আমাদেরকে সহযোগিতা করে চলেছেন। বাবুই পাখির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার হয়ে পড়েছে। তবে যদি দুই এক জায়গায় বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যায় আমরা সেটা কখন দখলের জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব, সাম্প্রতিক উপজেলার শোভনা নামক একটি জায়গায় কয়েকটি বাবুই পাখির বাসার সন্ধান মিলেছে।

আগামীনিউজ/এএইচ