Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বিপন্ন শৈশব


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২১, ০৮:৪৯ পিএম বিপন্ন শৈশব

ঢাকাঃ জীবনের সব চেয়ে মধুর সময় আমাদের শৈশব। শৈশব মানেই প্রাণ খুলে হাসি, শৈশব মানেই প্রাণের উচ্ছ্বাস। শৈশব মানে হাজারো পাগলামি। খুব ভোরে মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে বকুল কুড়ানো, সকাল-দুপুর সময় অসময়ে পুকুরে ডুবে থাকার প্রতিযোগিতা। বিকেলে খেলার মাঠে ক্রিকেটে ব্যাটিং নিয়ে বিবাদ আরো কত স্মৃতি যেন আজ এক রূপকথার গল্প হয়ে রয়ে গেছে জীবনে ।

ভেলায় চড়ে নদীর পানিতে সাতার কাটার প্রতিযোগিতা, সুপারি পাতার গাড়িতে চড়া, কাগজে বানানো বলে ক্রিকেট খেলা, বৃষ্টিতে ভিজে কাদামাটিতে লুটোপুটি আরও কত কিছুই এই শৈশবকে স্পর্শ করে ধন্য করেছে, তা কলমের কালিতে অঙ্কন করাও কঠিন।

গল্পটা নব্বই দশকের। তখন এক টাকায় ৪টা চকলেট পাওয়া যেত। হাসপাতালে গেলে ফ্রি ফ্রি চুলকানির মলম পাওয়া যেত। ২ টাকায় এক পাতা রঙিন ঝাঁঝালো কাশির ওষুধ পাওয়া যেত। পকেটে থাকতো মেলা থেকে ৩০ টাকায় কেনা সেই স্টিলের পিস্তল। হাজার খুঁজলেও এখনকার মতো পকেট ভর্তি ইয়াবা পাওয়া যেত না!

তখন শিশুদের সারাদিন মোবাইল ফোনের গেইমে মুখ ঘুজে রাখা হতনা। খুব কম মানুষের ঘরে মোবাইল ফোন ছিল তখন। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর নোকিয়া ১১শ মডেলের ফোন কেনায় পাশের বাসার ডাক্তার বাবুর ছেলের বন্ধু মহলে যেন ভাবের কমতি ছিলনা ।

বৃষ্টির দিনে উঠোনের জমানো পানিতে কাগজের নৌকা ভাসানোর প্রতিযোগিতা চলতো, এখনকার মতো দামী দামী সব খেলনা ছিলনা কিনা। সন্ধ্যে হলেই চাটাই পেরে হারিকেন ধরিয়ে পড়তে বসা ছিল প্রতিদিনের রুটিন। সেসময় এখনকার মত আইপিএস, সৌরবিদ্যুৎ ছিলনা। ছিলনা এতো বিলাসিতায় পূর্ণ জীবন ।

এখনো বৃষ্টি হলে মনে পড়ে বৃষ্টিভেজা সেই সোনালী শৈশবের কথা। গাঁয়ের মেঠোপথে টায়ার চালিয়ে ছুটে চলার কথা। বৈশাখ মাসে সোনালী ধানে সবকিছু ভরে যেত সেই সময়। কৃষকের মুখে হাসি ফুটতো। ধানকাটা শেষ হলে, কৃষকের ক্ষেত হয়ে যেত আমাদের স্টেডিয়াম। সেখানে কত কিছু খেলতাম! কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌচি, কানামাছি, ডাংগুলি, গোশত চুরিসহ আরও কত কী!

তখন রোজ বন্ধু মহলে জমতো গানের আসর। আসরে কেউ অনুপস্থিত থাকলে হামলা চলতো তার বাড়িতে তার খোঁজের সন্ধানে। তখন এখনকার মত ফেসবুক বা টুইটারে হ্যায়-হ্যালোর চল ছিলনা। বন্ধু মহেলের সকলে যেন ছিল এক আত্মার প্রাণ, আনুষ্ঠানিকতা বিষয়ে জ্ঞান ছিল কম। লুডুর আসরে জমতো ভিড়। তখন পুরো মহল্লায় একটাই রঙিন টেলভিশন ছিলো, শুক্র-শনি বিটিভিতে রাজ্জাক-শাবানার সিনেমা দেখতে ভিড় জমাতো ছেলে-মেয়ে সবাই, বাদ পরতো না বুড়ো-বুড়িও। তখন আলিফ লায়লা চলতো , এখনকার মতো স্টার জলসার পাখি বা কিরণমালার মত সমাজ বিকৃতকারী সিরিয়াল ছিলনা।

তখন মায়ের আদরের ভাগ নিয়ে ঝগড়া চলতো পাঁচ ভাই-বোনের, মা কাকে বেশি ভালোবাসে এই নিয়ে কতো বিচার জমা হতো বাবার কাছে। তখন আজকের মত এতো বৃদ্ধাশ্রম ছিলনা। সংসারে মুরুব্বীদের যেনো ঈশ্বরের পরের স্থান দেওয়া হতো, মান্য করা হতো তাদের সকল আদেশ।

প্রযুক্তির ভিড়ে আজ যেন হারিয়ে গেছে বাংলার চিরচেনা সেই শৈশবের স্মৃতি। প্রযুক্তি যেন মানব মনকে রূপান্তর করেছে যন্ত্রতে। কেড়ে নিচ্ছে শিশুর সৃজনশীলতা, শিশুকে করছে গৃহবন্দী, একগুঁয়ে। প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার সেই মেঠোপথ, বন-জঙ্গল। বড়ো বড়ো ইট পাথরের দালানেও আজ খুঁজে পাওয়া যায়না চিরচেনা সেই মাটির ঘরের শান্তি। এখনকার ছেলে-মেয়েরা হারিকেনের কেরোসিন পোড়ানোর গন্ধ চেনে না, জানেনা কাঁদায় লুটোপুটির আনন্দ ,আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে ফেলছে জীবন উপভোগের পদ্ধতি। পরবর্তীতে যার নাম দিচ্ছে ‘ফ্রাস্ট্রেশন’।

আগামীনিউজ/এএইচ