Dr. Neem on Daraz
Victory Day

চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে আনুশকাকে ধর্ষণ


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২১, ০৫:৫০ পিএম চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে আনুশকাকে ধর্ষণ

ঢাকাঃ হত্যার আগে ধর্ষণের শিকার হন রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন (১৭)। এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহান (১৮) তাকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে জানিয়েছে, ধর্ষণের পরিকল্পনা থেকেই ডাকা হয় ওই শিক্ষার্থীকে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজন ও বন্ধুরা।

কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, ধর্ষণের মূল নায়ক ফারদিন ইফতেখার দিহান। আটকের পর বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণ ও হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার শিকার করেছে সে।

আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই অবচেতন ছিলেন আনুশকা। এর থেকে ধারণা করা হচ্ছে কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের যে বাসাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ওই শিক্ষার্থী, সেখানেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

জিজ্ঞাসাবাদে দিহান পুলিশকে জানায়, ধর্ষণের পরিকল্পনা আগেই করা ছিলো। বন্ধু হলেও দুজনের প্রেমের সম্পর্ক বেশিদিন হয়নি। মাত্র তিন মাস হলো উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে। গ্রুপ স্টাডির নাম করে আনুশকাকে ফোন করে কলাবাগান লেক সার্কাসের একটি বাসায় ডেকে নেয় দিহান। দুপুর ১২ টা থেকে একটার মধ্যে জোরপূর্বক আনুশকাকে ধর্ষণ করে দিহান। দুপুর একটার দিকে আনুশকার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ধর্ষণকারী একজন নাকি চারজন জানতে চাইলে কলাবাগান থানা পুলিশ জানিয়েছে, দিহান জানিয়েছে সে একাই ধর্ষণ করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে খবর পেয়ে বাকিরা এসেছে। পুলিশ দিহানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। বাকি তিনজনকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনুশকাকে কোক জাতীয় পানীয়ের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে দিহান। ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে জানা যাবে। আনুশকার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রাজধানীর সোবহানবাগে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো আনুশকা নূর আমিন। কোচিংয়ের নোট আনতে যাওয়ার কথা বলে কলাবাগানে বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসায় যায়। বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া চারটার দিকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল থেকে নিহত ওই স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখানকার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে পরিবার জানায়, আমাদের মেয়েকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তার মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষণের ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

নিহতের মা অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়েকে কৌশলে বাসায় নিয়ে ওই দিহানসহ চারজন মিলে ধর্ষণ করেছে। হয়তো বাধা দেওয়ায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে আসে তিন-চার জন। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্কুলছাত্রীর সঙ্গীরা দাবি করে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে সে মারা গেছে। তবে মেয়েটির বাবা অভিযোগ করেছেন, তাকে পান্থপথের ডলফিন গলির একটি বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তিনি ইফতেখার ফারদিন দিহানকে একমাত্র আসামি করে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ২ ধারায় বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার নিজের সোবহানবাগের বাসা থেকে কলাবাগানে বন্ধু দিহানের বাসায় যায়। সেখানে যাওয়ার পর আমরা জেনেছি, স্কুলছাত্রীটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার বন্ধুর ভাষ্যমতে, এরপর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করার আগেই স্কুলছাত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে লাশ উদ্ধারসহ দিহানকে নামের ওই ছেলেটিকে আটক করি। এরপর তাকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক মেলামেশা হয়। এরপর ওভার ব্লিডিং হয়, এ কারণে স্কুলছাত্রীটি সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তবে দৈহিক মেলামেশার বিষয়টি পরীক্ষা-নীরিক্ষা সাপেক্ষে প্রমাণের বিষয়। এর বাইরে অন্য কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছিলো কি-না, সেটি পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিসি বলেন, এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে দিহান নামের ওই একজনই আসামি, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদেরকে বিনীত অনুরোধ করতে চাই, ভিকটিমের পরিবার বুঝে-শুনে মামলা করেছে। এরপরেও এর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কিংবা অন্য কোন ইন্ধন থাকলে সেটা আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। তাই সকলকে একটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত না করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

মামলায় বাদীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাদী বলেছেন, আমার মেয়েকে তার বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এটা তাদের দাবি। ধর্ষণ হয়েছে কি-না তদন্তের ব্যাপার, পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ময়নাতদন্তের চিকিৎসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ধর্ষণ হয়েছে কি-না বা অন্যকোন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে কি-না পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বাসায় ডেকে নেওয়ার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ডেকে নেওয়া হয়েছে কি-না মামলাতেও উল্লেখ নেই বা তার বন্ধুও স্বীকার করেনি। দিহানের বাবা রাজশাহীতে চাকরি করেন ও ভাই নারায়ণগঞ্জে চাকরি করেন। কলাবাগানের ওই বাসায় মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন দিহান। গতকাল সকালে তার মা বগুড়া যান। আমরা অনুমান করছি, বাসা ফাঁকা থাকায় আনুশকাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিলো।

দিহানের তিন বন্ধুকে আটকের বিষয়ে নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান বলেন, বাকি তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। তাদের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

মামলার এজাহারে মৃত ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় আমার স্ত্রী অফিসের জন্য এবং আমি সকাল সাড়ে ৯ টায় ব্যবসায়ীক কাজে বের হয়ে যাই। পরে আনুশকা সকাল সাড়ে ১১ টায় আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিং এর পেপার্স আনতে বাহিরে যাচ্ছে। এই কথা বলে সে সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

তিনি বলেন, বেলা ১টা ১৮ মিনিটে ইফতেখার ফারদিন দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আনুশকা তার বাসায় গিয়েছিল, আনুশকা সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের জরুরি বিভাগে ভর্তি করিয়েছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী বেলা ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে আমার স্ত্রী কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারে আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

তিনি এজাহারে আরও অভিযোগ করেন, আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি দিহান আমার মেয়েকে প্রেমের প্রলুব্ধে ধর্ষণের উদ্দ্যেশ্যে তার বাসায় বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় অমানবিক কার্যকলাপ করায় আনুশকার গোপাঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার মেয়ে মৃত ঘোষণা করেন।

আগামীনিউজ/এএইচ