Dr. Neem on Daraz
Victory Day

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ভিক্ষুকের মেলা!


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২১, ০৩:১১ পিএম আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ভিক্ষুকের মেলা!

ঢাকাঃ রাজধানীসহ সারাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ছে। ভিক্ষাবৃত্তির মতো লাভজনক পেশা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। বিনা পরিশ্রমে আরামে রাস্তাঘাটে বসে ভিক্ষা করার মতো সুখ পৃথিবীতে আর কি আছে? রাজধানীর রাস্তাঘাটে শুধু ভিক্ষুক আর ভিক্ষুক। রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেইট, বিজয় স্বরণী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সামনে ব্যাপকহারে ভিক্ষুকের উপস্থিতি দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিনই শত শত ভিক্ষুকের উপস্থিতি দেখা যায়। 

রাজধানীসহ সারাদেশের রেলস্টেশন’ বাস টার্মিনাল, এয়ারপোর্ট, হাসপাতাল, স্কুল কলেজের সামনে, মাজার, বাসা বাড়ি, রাস্তা ঘাটে ভিক্ষুক আর ভিক্ষুক। কতো রকমের ভিক্ষুক যে ঢাকা শহরসহ সারাদেশে আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো জানা নেই। 

বাংলাদেশে ভিক্ষুকদের যে আয় রোজগার তার এক তৃতীয়াংশ দৈনিক খেটে খাওয়া কুলি মজুরদের নেই। এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরও নেই। ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সরকার। প্রথম পর্যায়ে ঢাকার সাতটি এলাকায় এই অভিযান পরিচালানা করা হয়। এরপর পুরো রাজধানীকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা শুধুই কাগজে-কলমে। বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, কূটনৈতিক এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি এবং সামগ্রিকভাবে রাজধানীকে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সরকারী পর্যায়ে যেভাবে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অথচ কয়েকদিন আগেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে কোন ভিক্ষুক নেই। বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে, দেশে এখনো ১২ লাখ ভিক্ষুক রয়েছে। রাজধানীতে অভিযান না থাকায় প্রতিনিয়ত ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালে দেশে দারিদ্র নিরসনে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও ভিক্ষাবৃত্তির মতো অমর্যাদাকর পেশা থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর আবাসন, ভরন- পোষণ এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি নেয়া হয়। ঢাকা মহানগরের ১০ টি জোনে ১০টি এনজিও’র মাধ্যমে ২০১১ সনে ১০ হাজার ভিক্ষুকের উপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। জরিপকৃত ভিক্ষুকদের তথ্য উপাত্ত নিয়ে একটি ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়। জরিপে প্রাপ্ত ১০ হাজার ভিক্ষুক হতে ২হাজার ভিক্ষুককে নিজ নিজ জেলায় পুনর্বাসনের জন্য নির্বাচিত করা হয়। দেশব্যাপী প্রসারের পূর্বে পদ্ধতিগত কার্যকারিতা নির্ভুল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলায় ৬৬ জন ভিক্ষুককে রিকশা, ভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য পুঁজি প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য পাইলট কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ময়মনসিংহ জেলায় পুনর্বাসনকৃত (ঢাকায় পরিচালিত জরিপে প্রাপ্ত) ভিক্ষুকদের বেশির ভাগই রিকশা, ভ্যান বিক্রি করে পুনরায় ঢাকায় চলে এসেছে। তবে জামালপুর জেলায় পুনর্বাসনকৃত স্থানীয় ভিক্ষুকরা রিকশা, ভ্যান ও সরবরাহকৃত পুজি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা শহরের বিমানবন্দর এলাকা, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হোটেল রেডিসন, বেইলীরোড, কূটনৈতিক জোন ও দূতাবাস এলাকাসমূহকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এসব এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করে বিভিন্ন রকমের সাইবোর্ড লাগানো হয়েছে। ভবিষ্যতে ভিক্ষুকমুক্ত এলাকার আরও বৃদ্ধি করা ঘোষণা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত ভিক্ষুকদেরকে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা শহরের ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি না করার জন্য ২/১ দিন পরপর নিয়মিত মাইকিং করাও হয়।

সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলা হয়, সারা দেশে প্রায় সাড়ে আট লাখ ভিক্ষুক আছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরেই ভিক্ষুকের সংখ্যা ৭০ হাজার। আর ঈদ ও কোরবানিসহ নানা উৎসবে ৫০ হাজার মৌসুমী ভিক্ষুক যোগ হয় রাজধানীতে। তাদের হিসাবে ঈদ, কোরবানি এবং শবে বরাতে ঢাকায় কমপক্ষে এক লাখ বিশ হাজার ভিক্ষুক সক্রিয় থাকে। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাবে দেখা গেছে। ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘শিশুর অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উচ্চ আদালতে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে রিট হয়।

২০১১ সালের ২ জানুয়ারি শিশু ভিক্ষাবৃত্তিসহ সর্বপ্রকার ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে৷ ঐ বছরের ৯ জানুয়ারি রুল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট রাজধানীসহ দেশের সব স্থানে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। তবে তা শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা শহরের সব ভিক্ষুককে জরিপের আওতায় আনা হয়। ১০টি এনজিওর মাধ্যমে ঢাকা শহরকে ১০টি জোনে ভাগ করে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ওপর জরিপ পরিচালনা করে তাদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়।

রাজধানীর গুলশান, বনানী এবং ধানমন্ডি এলাকা ভিক্ষুকদের জন্য নিষিদ্ধ জোন হিসেবে পরিচিত। আইনানুযায়ী এই ৩ এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত থাকার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। গুলিস্তান বা মতিঝিলের মতো অফিস পাড়ার চেয়ে নিষিদ্ধ জোনেই ভিক্ষুকদের সংখ্যা বেশি। আর নিষিদ্ধ জোনে ভিক্ষা করতেই যেন ভিক্ষুকদের আগ্রহ তুঙ্গে। 

আগামীনিউজ/প্রভাত