Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নৌকায় বেঁধে জীবন্ত ডুবিয়ে দেয়া সেই শিশুর লাশ উদ্ধার


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২০, ০৮:০৫ পিএম নৌকায় বেঁধে জীবন্ত ডুবিয়ে দেয়া সেই শিশুর লাশ উদ্ধার

দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে ডুবুরি দল মাগুরার নবগঙ্গা নদীতে নৌকায় বেঁধে জীবন্ত ডুবিয়ে দেয়া শিশু মাহিদের লাশ উদ্ধার করেছে। রোববার দুপুর ২টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

এ সময় ডোঙ্গা নৌকায় লাইলনের সুতায় বাঁধা ছিল শিশুটির একটি হাত। পানিতে ৬ দিন নিমজ্জিত থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরেছে।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাড়ে ৬ বছর বয়সী শিশু মাহিদকে তারই প্রতিবেশী রোহান (১৪) মাগুরার নবগঙ্গা নদীর বারাশিয়া এলাকায় নৌকায় বেঁধে জীবন্ত অবস্থায় ডুবিয়ে দেয়। তার আগে হনুমান দেখানোর কথা বলে বাড়ির সামনে থেকে তাকে ডেকে নিয়ে যায়।

সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো খোঁজ না পেয়ে শিশুটির বাবা মজিরুল মোল্যা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এর পরদিন মোবাইল ফোনে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এই ফোনের সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্ত চালিয়ে তারই প্রতিবেশী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর রোহান এবং তার বাবা ইমরান আলি আসলামকে আটক করে।

এ সময় রোহান পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সদর থানা পুলিশ শনিবার দুপুর ১টার দিকে নবগঙ্গা নদীর বারাশিয়া এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও কোনো কূলকিনার করতে পারেনি। রোববার সকালে ডুবুরি দল নদীর বারাশিয়া এলাকায় নতুন করে তল্লাশি শুরু করে। অবশেষে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার তল্লাশি শেষে দুপুর ২টার দিকে নৌকাসহ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে তারা।

শিশু মাহিদের লাশ উদ্ধারের পর নদীপাড়ে স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

মাগুরা সদর থানায় শিশু মাহিদের বাবার দায়েরকৃত জিডির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন সদর থানার এসআই আলমগীর হোসেন।

ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে রোহান শিশু মাহিদকে বাড়ির সামনে থেকে নিয়ে গেলেও বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর পর দুপুর ১২টার দিকে তারা নদীর ঘাটে যায়। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা তালের ডোঙ্গা নৌকায় তুলে মাহিদকে লাইলনের শক্ত সুতায় হাত বেঁধে ফেলা হয়। এ সময় শিশুটি বাধা দিলেও পানিতে পড়ে যেতে পারে- এমন কথা বলে তার হাতটি সহজেই বাঁধতে পারে সে।

পরে নদীর মধ্যে কিছুদূর যাওয়ার পর ডোঙ্গাটি ডুবিয়ে দিয়ে রোহান বাড়িতে ফিরে যায়। এর সব কিছুই বাবা আসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী করেছে রোহান- এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানান এসআই আলমগীর।

কিছুদিন আগে একটি পারিবারিক ঘটনায় মাহিদের বাবা মজিরুল মোল্যা রোহানের মা-বাবাকে গালমন্দ করেন। যে ঘটনায় অপমানিত বোধ করে পিতা-পুত্র মিলে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে তারা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

তবে উভয় পরিবারের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই বলে শিশু মাহিদের পরিবার দাবি করেছে। তার চাচা নিরো মোল্যা বলেন, উভয় পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তুচ্ছ মান-অপমানের কারণে এমনটি ঘটবে কখনই প্রত্যাশিত ছিল না।

মাগুরা সদর থানার ওসি জয়নাল আবেদিন বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর মাগুরা পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে এটির তদন্তে একটি টিম গঠন করে দেন। অবশেষে একটি সফল টিমওয়ার্কের মাধ্যমে শিশুটির লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। আসামিও আটক আছে।

আগামীনিউজ/এএস