Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২০, ০১:০৫ পিএম ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা

ঢাকাঃ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য `সমন্বিত নিয়োগবিধিমালা-২০২০` এর খসড়া প্রণয়ন করেছে। খসড়া প্রকাশের পর প্রাথমিক শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এই নিয়োগবিধি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এই বিধি বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকরা আর কখনও অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। গত কয়েকদিনে তাই এই নিয়োগবিধির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা।

খসড়া নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ২৫৮৯টি পদে সরাসরি নিয়োগ হবে। নিয়োগে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং বাকি ২০ ভাগ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণযোগ্য। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বুঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নূ্ণ্যতম ৩ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে, বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সরাসরি নিয়োগে উন্মুক্ত প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপর একটি পদ `ইনস্ট্রাক্টর`। উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টরের ৫০৫টি পদে নিয়োগে মোট পদের ৩৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৬৫ ভাগ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করার কথা বলা হয়েছে নতুন নিয়োগ বিধির খসড়ায়। তবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। পদোন্নতির জন্য উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইনস্ট্রাক্টর/পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নূণ্যতম ৭ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির বিএডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। সরাসরি নিয়োগে বয়স ৩০ বছর, তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সের কোনো উল্লেখ নেই।

ইউআরসির সহকারী ইনস্ট্রাক্টরের ৫০৫টি পদে নিয়োগও একই নিয়মে হবে। তবে এখানেও বিভাগীয় প্রার্থী বলতে শুধু প্রধান শিক্ষকদের বোঝানো হয়েছে। দেশের ৬৭টি পিটিআইয়ে ইনস্ট্রাক্টর সাধারণ ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ইনস্ট্রাক্টর পদেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভাগীয় পদোন্নতির বিধান রাখা হয়নি।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) পর্যন্ত হতে পারতেন। কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগবিধি-১৯৮৫ এর ফলে শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পিএসসির নিয়োগবিধি ১৯৯৪ জারি হলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারতেন।

২০০৩ সালের সরকারি গেজেটেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের কথা বলা হয়েছে এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের বোঝানো হয়েছে। সর্বশেষ নিয়োগ পর্যন্ত এভাবেই চলছে।

অথচ প্রস্তাবিত নতুন সমন্বিত নিয়োগবিধিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে এই বিধি বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকরা আর কখনও অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। যে কোনো সময় এই নিয়োগবিধি মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের উচ্চপদে পদোন্নতি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। নিয়োগবিধিটির বিভিন্ন দিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর সহকারী শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা মহানগরের গুলবাগিচা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল হালিম ভূঞা লিটন বলেন, এ নিয়োগবিধি তারা মানেন না। শতকরা ৯০ ভাগের বেশি সহকারী শিক্ষক মাস্টার্স পাস। দুর্ভাগ্যের কারণে তারা আজ সহকারী শিক্ষক। অনেকে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু এ নিয়োগবিধির কারণে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আর আগ্রহ দেখাবেন না।

চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার ৪নং মণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালাহ্‌ উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে সহকারী শিক্ষক পদ এন্ট্রি পদ ধরে মহাপরিচালক পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ চাই। এইউইও এবং ইউইও পদে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় আবেদন করার সুযোগ না দেওয়া হলে তা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার মৈশাষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান নিয়োগবিধিতে সহকারী শিক্ষকের উচ্চপদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদনের সুযোগ না রাখলে মেধাবী ও যোগ্য লাখ লাখ সহকারী শিক্ষক হতাশায় ভুগবেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসান রুমী বলেন, উচ্চপদে পদোন্নতির স্বপ্ন নিয়েই এই ডিপার্টমেন্টে যোগদান করেছেন। তাদের স্বপ্ন যেন ভেঙে দেওয়া না হয়।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিঞ্জিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিগার সুলতানা বলেন, পদোন্নতির নতুন নিয়ম কার্যকর হলে মেধাবীরা প্রাথমিক শিক্ষায় আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। প্রাথমিক শিক্ষার মান কমে যাবে। ফলে শিক্ষার ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়বে। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ৭নং কাইচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোকসানা আক্তার বলেন, নতুন নিয়োগবিধিতে পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর, ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর ও সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে বিএড ডিগ্রির কথা বলা হয়েছে। অথচ প্রথমিক শিক্ষকদের বিএড করার সুযোগ খুব নেই। শিক্ষকদের বিএড করার সুযোগ না দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় এই যোগ্যতা চাওয়া হয় কার স্বার্থে?

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন উচ্চ শিক্ষিত ও মেধাবীরা আসছেন। এ মেধাবীদের ধরে রাখতে হলে তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পদোন্নতির সুযোগ দিতে হবে। আমরা চাই সব পদে যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শতভাগ পদোন্নতি। পদোন্নতিতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা যেন সমান সুযোগ পান।

শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের সব খবর সবার আগে জানতে আগামী নিউজ ডট কম এর সাথেই থাকুন। শিক্ষা এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট  আপনার আশে-পাশে  ঘটে যাওয়া যে কোন খবর আমাদেরকে ইমেইল করুন। আর চোখ রাখুন আগামী নিউজ ডট কম এর শিক্ষা পাতায়।

আগামীনিউজ/আশা