Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আজ ঈদুল আজহা, ত্যাগের দীক্ষা নেয়ার দিন


আগামী নিউজ | মুহা. মনির-উজ-জামান প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২০, ০২:৪৭ এএম আজ ঈদুল আজহা, ত্যাগের দীক্ষা নেয়ার দিন

ঢাকা : আজ ১০ জিলহজ (১ আগস্ট) যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা আনন্দ মুখর পরিবেশে দেশের মুসলিম সম্পদায় উদযাপন করবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এটি মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় এদিন ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন। দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, আর অডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে গতকাল গতকাল (৩১ জুলাই) সৌদি আরবসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্কসহ সমগ্র ইউরোপ ও আমেরিকায় পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে জিলহজ মাসের চাঁদ একদিন পরে দেখা যাওয়ায় আজ ঈদুল আজহা পালিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এদিন আমাদের দেশের প্রায় চল্লিশটির মতো স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেছে কিছু মানুষ।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার (৩১ জুলাই) এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলিম ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মহান আল্লাহর নিকট কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য শুদ্ধ নিয়ত ও উপার্জন থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি সকলেই সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেয়া ও কোরবানির বর্জ্য অপসারণসহ পশু ক্রয় থেকে শুরু করে প্রতিটি কার্যক্রম করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে করতে সচেষ্ট থাকবেন বলে আমি আশা রাখি। পবিত্র ঈদুল আজহা সবার জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ-মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।’

তিনি বলেন, ‘এ বছর এমন একটা সময়ে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মহামারি করোনার ছোবলে বিশ্ববাসী বিপর্যস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনেক মানুষই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সকলকে সচেতন হতে হবে এবং জীবনযাপনে ও চলাফেরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজে সুস্থ থাকি, অন্যকেও সুস্থ রাখি-এটাই হোক এবারের ঈদুল আজহার সকলের অঙ্গীকার।’

তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।’

মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। কোরবানির মর্ম অনুধাবন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ্য।’

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া ৪০ সেকেন্ডের এক অডিও বার্তায়  বলেছেন, প্রিয় দেশবাসী আসসালামু আলাইকুম। বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার এসেছে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। করোনা ভাইরাসের মহামারির এ দুঃসময়ে সব আঁধার কাটিয়ে ঈদ আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ।’

‘কোরবানির ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত সব বাংলাদেশি ভাই-বোনকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। করোনা ভাইরাস রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন। ঈদ মোবারক।’

এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের ঈদুল ফিতরের মতোে আজ রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়াসহ দেশের বড় কোনো ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। শুধুমাত্র সব মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে ঈদ জামাত।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে, তৃতীয় জামাত সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে, চতুর্থ জামাত ৯টা ৩৫ মিনিটে, পঞ্চম জামাত সকাল সাড়ে ১০টায় এবং সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি আলিয়া মাদরাসা, ঢাকা মসজিদ এবং ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়।

পুরান ঢাকার বংশাল বড় মসজিদ, নিমতলী ছাতা জামে মসজিদ, তারা মসজিদ, নাজিরা বাজার আহলে হাদিস মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সকাল সাড়ে ৮টায় দুটি করে ঈদের জামাত হবে।

চকবাজার জামে মসজিদ, যাত্রাবাড়ী মারকাজ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং লাল শাহী মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ হবে।

ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল ৯টায়, ধানমন্ডির বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সাড়ে ৮টায় দুটি করে জামাত হবে। গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে সকাল ৬টা, সকাল ৮টা এবং সকাল ১০টায় ঈদের তিনটি জামাত হবে।

মিরপুর কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তিনটি জামাত হবে সকাল ৭টায়, সকাল ৮টায় এবং ৮টা ৪৫ মিনিটে।

এদিকে গত ১৪ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। প্রত্যেকে মুসল্লি নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে। ওজু করার আগে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে মসজিদে ওজুর স্থানে সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।

নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধসহ অসুস্থ ব্যক্তি বা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশ নেবেন না। সর্বসাধারণের সুরক্ষার নিমিত্তে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।

আগামীনিউজ/এমজামান