Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সৌদি থেকে ফেরার অপেক্ষায় শ্রমিকরা; বিমান ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ


আগামী নিউজ | ম. শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২০, ০৫:০৯ পিএম আপডেট: জুন ২৫, ২০২০, ০৫:৩২ পিএম সৌদি থেকে ফেরার অপেক্ষায় শ্রমিকরা;  বিমান ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির ধাক্কায় পর্যদস্তু সারা পৃথিবীগাল্ফ দেশগুলোতেও সে ধাক্কা পড়েছে। বিশেষ করে, তেল ও হজ নির্ভর অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দেশটিতে টানা একশো দিনের বেশি লকডাউনের ফলে স্থবির হয়ে গেছে অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। একারণে চরম মানবিক পরিস্থিতে পড়েছেন লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক। দেশটির পত্র-পত্রিকায় ইতোমধ্য খবর বেরিয়েছে, সংকট সামাল দিতে  ১২ লাখ বিদেশি শ্রমিক স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। এতে করে, দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা যেমন হতাশ হয়ে পড়ছেন তেমনি সংকট ঘনিভূত হওয়ায় মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।

বিভন্ন সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে সৌদি সরকারের ঘোষণায় ২ লাখেরও বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরতে বাধ্য হবে।  কিন্ত দীর্ঘদিন কাজ হারিয়ে থাকা শ্রমিকরা কীভাবে দেশে ফিরবেন তা নিয়ে চিন্তিত তারা। সেই সাথে দেশে ফিরে কী করবে সেটাও একটা বড় কারণ। অনেকেই লোনের টাকায় সৌদিতে গিয়ে কিভাবে ফিরবে সেটাই ভা্বছে। আবার, এই সংকটের মধ্যে শুধু দেশে ফেরার জন্য দ্বিগুণ ভাড়া  গুণতে হচ্ছে। তবে,  সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক, গত ১১ মার্চ থেকে তাদের আবেদন নেওয়া হচ্ছিল দূতাবাসে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮০০ জন বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন বলে দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান।

সৌদি প্রবাসীরা জানান, মে মাসের শেষ দিকে দেশটিতে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমতে শুরু করলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করছিল কর্তৃপক্ষ। যার অংশ হিসাবে স্বল্প পরিসরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে দেয়া হয়। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়া অভিবাসী শ্রমিকরা কিছুটা আশার আলো দেখতে শুরু করেন। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে সৌদিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ফের ঊধ্র্বমুখী হয়।

সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার।  যারা ফেরত আসতে চায় তারা ইতোমধ্য দূতাবাসে আবেদন করেছেন।

ইতোমধ্য ৩৮৮ জন বাংলাদেশি রোববার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রিয়াদ থেকে ঢাকায় পৌঁছান বলে বিমানের জনসংযোগ শাখার উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান।

জানা গেছে, সৌদি আরব থেকে  রিয়াদ থেকে ঢাকা ফ্লাইটের ইকোনমিক ক্লাসের ভাড়া ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ সৌদি রিয়াল, বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ৩ হাজার ৮০০ সৌদি রিয়াল। আর জেদ্দা থেকে ঢাকা ফ্লাইটের ইকোনমিক ক্লাসের ভাড়া ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩০ রিয়াল, বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ৪ হাজার ৩০ সৌদি রিয়াল। নিজ খরচে দেশে ফিরতে চাইলে প্রবাসীদের নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া  ‘করোনায় আক্রান্ত নয়’ সৌদি কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটও থাকতে হবে।  ফ্লাইট ভাড়া নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে নতুন ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ জানিয়েছেন, প্রায় ২১ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন, অনেকেই জরুরি পারিবারিক প্রয়োজনে দেশে ফিরতে চান, অনেক অসুস্থ প্রবাসী রয়েছেন, অনেকে ভিজিট ভিসায় এসে দেশে ফিরে যেতে পারছে না, আমরা সবার কথা ভেবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তবে,  দেশে ফিরতে চাইলে তাদের ।অবশ্যই সৌদি স্বাস্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ সনদ নিতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থ সংকটে মানবেতর অবস্থায় আছে লাখ লাখ শ্রমিক। দেশটির রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম ও মক্কায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলে হাজারো কষ্টের কাহিনী জানা গেছে।বিমানের টিকেট প্রবাসীদের অসহনীয়...শুধু ওয়ানওয়ে ৬০ হাজার টাকার উপরে।

দেশটির রাজধানী রিয়াদে অবস্থান করা ফকির আল আমিনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের । তিনি বলেন, এখানে থাকা বাংলাদেশীদের অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসার জন্য মানুষ রাস্তায় অবস্থান করে। অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে করোনা নিয়ে অনেকে বাসায় অবস্থান করার কারণে রুমেই মারা যচ্ছে৷

এছাড়া দেশে ফেরত আসাদের বাড়তি ভাড়ার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সৌদি আরবে কাজ করা বিভিন্ন শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস শুরুর প্রথম দিকে অনেক দাতব্য সংস্থা, সৌদি সরকার ও নিয়োগদাতারা আর্থিক সহযোগিতা করলেও বর্তমানে সেটি নেই। আবার টানা তিন মাসের অধিক সময় কাজ বন্ধ থাকায় নিজেদের ব্যায় মেটাতে পারছেননা শ্রমিকরা। অবস্থা এতোও ভয়াবহ যে কাজ হারিয়ে পথে বসেছেন অভিবাসী শ্রমিকরা। সেই সাথে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন অসংখ্য  শ্রমিক। যাদের বাংলাদেশে আর্থিক সামর্থ্য ভালো তারা অনেকে দেশ থেকে টাকা নিয়ে প্রয়োজনীয়তা সারছেন। অনেকেই ব্যায় মেটাতে না পেরে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন বলেও জানায়। তবে, নতুন শ্রমিক যারা  গেছেন তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তারা চাইলেও দেশ থেকে টাকা নিতে পারছেন না আবার বেশিরভাগের দেশে তেমন আর্থিক সংগতি নেই। তাদের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে,  তারা চাইলেও টাকা ম্যানেজ করতে পারছেন না। ফলে বহু সংকটে বাংলাদেশি শ্রমিকরা এক ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। উভয় সংকটে পড়া এই শ্রমিকরা কবে ফিরতে পারবে তা একমাত্র সময়ই বলে দেবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল আলম  বলেন,করোনাভাইরাসের সংকট একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের মন্ত্রণালয় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থেকে আমাদের শ্রমিকদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে, মালদ্বীপ সৌদি আরবসহ অনেক দেশ থেকেই শ্রমিকদের দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছি।

 আগামীনিউজ/ইমরান/জেএফএস