ঢাকা: প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানার ডিওএইচএস মহাখালী এলাকা থেকে ২০ জনকে আটক করেছে র্যাব-১১।
তাদের কাছ থেকে চাকরির ১৫১টি আবেদনপত্র, গাজী ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঞ্চ ম্যানেজারের ১টি গোলসিল, রিক্রটিং অফিসারের ১টি সিল, ভিশন বিজনেস সেন্টারনামীয় ১টি গোলসিল, ৫টি আইডি কার্ড, ৫টি ল্যাপটপ, বিপুলসংখ্যক ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন, ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে অর্থ আদায়ের রশিদ, চাকরি প্রার্থীদের নিবন্ধন ফরম ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।
তিনি জানান, বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগে র্যাব-১১ এর একটি দল ২২ জুন বিকালে ডিএমপির কাফরুল থানার ডিওএইচএস মহাখালী এলাকায় গাজী ইন্টারন্যাশনাল ও ভিশন বিজনেস সেন্টার নামে দুটি অফিস কক্ষে পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ২০ সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয়।
আটককৃতার হলেন- জামাল হোসেন ইমন ওরফে মনিরুজ্জামান (৪৫), খালেদ নুর (৩৬), ইসমাইল হোসেন (২৯), নাজমুল হাসান (২৯), হাসান মুনমুন (৩৪), জাবেদ হোসেন (২৮), আরিফ হোসেন (২২), ইউসুফ (৪৫), খোরশেদ আলম (৪৫), ফাতেমাতুজ জোহরা (৩৪), রাবেয়া আক্তার বিথি (২৩), জ্যোতি আক্তার (১৯), অনামিকা আক্তার (২৬), তানিয়া সুলতানা (২৯), অন্তরা খাতুন (২৫), সানজিদা আক্তার (২৪), আলমগীর (২৯), মীর সানবিরুল আলম (২৭), শামীম আহম্মেদ (৩১), মাহিম (২১)।
তিনি আরো জানান, এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানির নামে পত্রিকা, লিফলেট ও অনলাইনে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তাছাড়া চাকরির আবেদন ফরম, প্রশিক্ষণ ও ভালো পদে চাকরির লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রচুর নগদ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে।
তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই প্রতারকচক্রের মূল হোতা কাউসার আহমেদ চৌধুরী বিজয়। তার নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দেশের নামিদামি কোম্পানির নামের সাথে মিল রেখে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়। পরে অভিজাত এলাকায় ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে সু-সজ্জিত অফিস খুলে। পত্রিকা, লিফলেট ও অনলাইনে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার যুবক-যুবতীদের আকৃষ্ট করে।
ঠিক একইভাবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তির নামে একই সময়ে ঢাকা উভয় সিটি কর্পোরেশন থেকে ‘গাজী ইন্টারন্যাশনাল লিমিডেট’ ও ‘ভিশন বিজনেস সেন্টার’ নামে দুটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায় দুটি অফিস খুলে। এই প্রতারকচক্র ওই দুটি কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের জন্য ফেসবুক, অনলাইন ও লিফলেটের মাধ্যমে ভূয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রত্যেক চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন ফি বাবদ ১ হাজার টাকা ও প্রশিক্ষণ বাবদ ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা করে নিত। কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার, ব্যাঞ্চ ম্যানেজার, এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার প্রভৃতি পদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনের লোভ দেখিয়ে যুবক-যুবতীদের প্রলুবদ্ধ করত। চাকরি পাওয়ার পর মাসের পর মাস অফিসে আসা-যাওয়া করে বেতন না পেয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকেই টাকা ফেরত চাইলে তাদের ভয়-ভীতি, হুমকি এমনকি মারধরও করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়- তারা দীর্ঘদিন ধরে গাজী ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিডেট ও ভিশন বিজনেস সেন্টার নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরির লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।
র্যাব আরো জানায়, বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব-১১ অনুসন্ধান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন বিকালে একটি বিশেষ আভিযানিক দল ডিএমপি ঢাকার কাফরুল থানার ডিওএইচএস মহাখালী এলাকায় গাজী ইন্টারন্যাশনাল ও ভিশন বিজনেস সেন্টার নামের দুটি অফিস কক্ষে পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের ২০ সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয়। প্রতারকচক্রের বাকি সদস্যদের আটকের জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আগামীনিউজ/আরিফ/এমআর