Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আমের কেজি ৫০ পয়সা


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২০, ০৪:৩২ এএম আমের কেজি ৫০ পয়সা

গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বুধবার। কিন্তু আবহাওয়া খারাপের কারণে রোদ ঝলমলে দিনের অপেক্ষায় ছিলেন রাজাশাহীর চাষিরা। সে অপেক্ষাই যেন কাল হলো। আম্পানের মূল ঝাপ্টাটাই গেছে আমের ওপর দিয়ে। এতে অনেক চাষিই এখন নিঃস্ব। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় ঝরে পড়া আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সা কেজি দরে। তারপরও ক্রেতা পাচ্ছেন না আম চাষিরা।

এদিকে, চাষিদের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আম কিনে ত্রাণ হিসেবে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ঝরে পড়া আম ব্যবসায়ীরা কেনার পরও যদি অবিক্রিত থেকে যায় তা জেলা প্রশাসন কিনে করোনা ত্রাণ তহবিলে দেয়া হবে। আমরা আম কেনা শুরু করে দিয়েছি। এতে করে চাষিদের কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। এর আগে কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করে ত্রাণ তহবিলে দেয়া হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীতে ১০-২০ টাকায় ঝরে পড়া আম বিক্রি হয়েছে কয়েকদিন আগেও। নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ বলেন, বাঘা ও চারঘাট থেকে ভ্যানে করে আম শহরে নিয়ে আসায় খরচ পড়ে যায় বেশি। এজন্য নগরীতে আমের দাম একটু বেশি পড়ে। বাঘা উপজেলার আড়ানী গোচর গ্রামের কড়ালি ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বরাবর ঝরে পড়া আম কিনে ঢাকায় চালান করি। এবার এই আম ৫০ পয়সা কেজি দরে কিনছি। একই গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে আমার আম বাগানের অর্ধেক আম পড়ে গেছে। এই আম বিক্রি করার জায়গা নেই। কেউ কিনতে চাচ্ছে না। তাই বাড়িতে রেখে দিয়েছি।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর বাগানে আম কম থকায় উৎপাদন ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন ধরা হয়েছে ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে ঝড়ে পড়ে গেছে ১৮ হাজার মেট্রিক টন। বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, এই উপজেলায় খাদ্য শস্যের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল আম। ঝরে পড়া আম আমি নিজে চাষিদের কাছে থেকে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ১০০ টাকা দরে কিনেছি।

চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের আমচাষি বীর বাহাদুর জানান, ঝড়ে আম, ভুট্টা ও তিলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। যে আম বিক্রি হতো ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে। সেই আম ঝড়ে পড়ে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ পয়সা কেজি দরে। আম কেনার লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতে মহামারি করোনায় আম নিয়ে রয়েছে শঙ্কায়। তার ওপর এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবার জীবনে বয়ে এনেছে কষ্ট। আম বাগানে যেতেই মন ভেঙে গেছে। এভাবে কখনও ঝড়ে এমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনজুর রহমান বলেন, আমের বেশ অনেক ক্ষতি হয়েছে। যা পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে। তবে দুটি উপজেলায় গড়ে ১০ শতাংশ আমের ক্ষতি হয়েছে। যা আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫-৩০ কোটি টাকা।
জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানিয়েছেন, ঝরে পড়া আম বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব আম দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে ত্রাণ হিসেবে।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রাজশাহীর ঝড়ের আম ঢাকায় আসেনি বলে জানান বাদামতলীর কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা। গোলাম হোসেন নামে একজন আড়ৎদার বলেন, ঝড়ে পরা আমের দাম এমনিতেই কম হয়। ৫০ পয়সা কেজি দরে কিনে থাকলে সেই আম ঢাকায় দাম হতে পারে ১০ টাকা কেজি। সূত্র: ইনকিলাব।

আগামীনিউজ/বিজয়