Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আল কোরআনের আলোকে মুমিনের পরিচয়


আগামী নিউজ | এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী  প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২০, ০৪:২৯ এএম আল কোরআনের আলোকে মুমিনের পরিচয়

আরবি ‘মুমিনুন’ শব্দটি ‘আমনুন’ শব্দমূল হতে গঠিত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- যে স্বীকার করে, স্বীকৃতি দেয়, বিশ্বাস করে। ব্যবহারিক পরিভাষায় মুমিন তাকেই বলা হয়, যে আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপনকারী। নবী ও রাসূলগণ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে যে সকল হেদায়েত নিয়ে আগমন করেছেন, তাকে আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সত্য বলে মেনে নেয়া, মুখে তার স্বীকৃতি প্রদান করা, এবং তদানুসারে কর্ম সম্পাদনকে ঈমান বলে আখ্যায়িত করা হয়।
আর যে ব্যক্তি ঈমানের ঘোষণা প্রদান করে, তাকেই মুমিন বলা হয়। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুমিন তাকেই বলা হয় যে, এক আল্লাহ, তাঁর রাসূলগণ, ফিরিস্তাগণ, আল্লাহর কিতাব সমূহ, আখিরাত এবং তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।

মহান রাব্বুল আলামীন কোরআনুল কারীমে মুমিনের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন। (ক) মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মিমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, অবশ্যই তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হবে। (সূরা হুযরাত : আয়াত ১০)।

(খ) মুমিন নারী ও পুরুষ একে অপরের সহায়ক। ইরশাদ হয়েছে : আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয়, এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, শীঘ্রই আল্লাহ তাদেরকে দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৭১)।

(গ) মুমিনগণ যেভাবে প্রশান্তি লাভ করেন। ইরশাদ হয়েছে : যারা ঈমান আনয়ন করেছে, আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে; জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই অন্তর সমূহ প্রশান্ত হয়। (সূরা রাআদ: আয়াত ২৮)। (ঘ) মুমিনগণ যাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে। ইরশাদ হয়েছে : মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করে, আর যে এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোনো সম্পর্কই থাকবে না, তবে তাদের পক্ষ থেকে যদি তোমাদের কোনো ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সম্পর্কে সতর্ক করেছেন, আর আল্লাহর নিকটই ফিরে যেতে হবে। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ২৮)।

(ঙ) সত্যিকার মুমিন হওয়ার উপায়। ইরশাদ হয়েছে : আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক। (সূরা আনফাল : আয়াত ৭৪)। (চ) প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। ইরশাদ হয়েছে : প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা আল্লাহও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি, আর নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, এরাই সত্যনিষ্ঠ। (সূরা হুযরাত : আয়াত ১৫)।
অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : মুমিন তো তারাই, যাদের অন্তর সমূহ প্রকম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াত সমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে, এবং যারা কেবলমাত্র তাদের প্রতিপালকের ওপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল : আয়াত-২)। অন্য এক আয়াতে আরও ঘোষণা করা হয়েছে : যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা হতে দান-খয়রাত করে। (সূরা আনফাল : আয়াত-৩)। আল্লাহপাক আরও ইরশাদ করেছেন : তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা সমূহ, এবং মাগফেরাত ও সম্মানজনক রিযিক। (সূরা আনফাল : আয়াত ৪)।

(ছ) সফলকাম মুমিনদের কথাও আলকুরআনে তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ওই সকল মুমিনগণই সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র, যারা অনর্থক কথা বার্তায় নির্লিপ্ত ও বিতৃষ্ণ, যারা যাকাত দানে তৎপর, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না, তারপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে, এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে, এবং যারা তাদের নামাজ সমূহের হেফাজত করে, তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে, তারা ছায়াময় সুশীতল উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে, তারা তাতে চিরকাল থাকবে। (সূরা মুমিনুন : আয়াত ১-১১)।

অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহŸান করা হয়, তখন তারা বলে: আমরা শ্রবণ করেছি, আদেশ মান্য করেছি। তারাই সফলকাম। (সূরা নূর : আয়াত ৫১)। পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনাই করছি, তিনি যেন আমাদেরকে খালেস মুমিন হওয়ার তাওফিক এনায়েত করেন আমীন! সূত্র: ইনকিলাব।

আগামীনিউজ/বিজয়