Dr. Neem on Daraz
Victory Day

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা চুরি, চিকিৎসা হয়নি মুক্তার


আগামী নিউজ | নড়াইল প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২০, ০৪:৫৭ পিএম আপডেট: মে ১৮, ২০২০, ০৫:২১ পিএম প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা চুরি, চিকিৎসা হয়নি মুক্তার

‘চোরে শোনে না ধর্মের কাহিনী। এ কথা সবার জানা। ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নড়াইলে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার চুরির ঘটনা ঘটেছে। করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ কর্মহীন নড়াইল সদরের বরাশুলা এলাকার আঞ্জু বেগমের দুই হাজার ৫০০ টাকা চুরি হয়েছে। আর এই চুরির ঘটনা ঘটেছে নড়াইল সদর হাসপাতালের সংক্রমক ওয়ার্ড থেকে।

এ কারণে হতদরিদ্র আঞ্জু বেগমের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার মুক্তার চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। টাকার অভাবে ঠিকমত ওষুধ কিনতে পারেনি। হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ আঞ্জু বেগম জানান, গত ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার দুই হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে ওইদিনই অসুস্থ ছোট মেয়ে মুক্তাকে নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে যান তিনি। মুক্তার প্রচন্ড পেটে ব্যথাসহ জ্বর, বমি ও ঘন ঘন পায়খানা হওয়ায় তাকে সংক্রমক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ ছোট মেয়ের সঙ্গে তার বড় মেয়েও হাসপাতালে ছিলেন। পরের দিন ১৫ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অসুস্থ বোনকে নিয়ে বড় বোন হাসপাতালের বাথরুমে গেলে ছোট্ট একটি ব্যাগে রাখা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই ঈদ উপহার দুই হাজার ৫০০ টাকা কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়।

                                                    অসহায় পরিবারের পাশে পুলিশ

বাথরুম থেকে এসে টাকাগুলো আর পায়নি তারা। ওই দুই হাজার ৫০০ টাকার সঙ্গে বাড়ির আরো কিছু টাকা মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা ছিল ব্যাগটিতে। এরপর হাসপাতাল থেকে চলে আসেন তারা।

এই চুরির ঘটনায় দিশেহারা আঞ্জু বেগমের পরিবার। কর্মহীন আঞ্জু বেগমের স্বামী প্রায় ছয় মাস আগে থেকে অসুস্থ হয়ে সব কার্যক্ষমতা হারিয়েছেন। সেই থেকে সংসারে পাঁচ সদস্যের ভরপোষণ আঞ্জু বেগমের আয়ের ওপরই চলছে। বসতভিটার পাঁচ শতক জমি ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। তাও এই জমির সব টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি।

আঞ্জু বেগম পরের বাড়িতে কাজসহ রান্নাবান্না করলেও করোনাভাইরাসের কারণে এসব কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। তাই দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের। এ পরিস্থিতিতে টাকা চুরির ঘটনা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েছে।

আঞ্জু বেগম আরো জানান, তার ছোট মেয়ে মুক্তা প্রায় দুই মাস ধরে পেটে ব্যাথায় ভুগছে। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। গত ১৪ মে বেশি ব্যথা উঠলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ধারণা করছেন, তার মেয়ের অ্যাপেন্ডিসাইটিস ব্যথা হয়েছে। তবে টাকার অভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করানো সম্ভব হয়নি।

এদিকে, সাংবাদিকদের মাধ্যমে অসহায় কর্মহীন আঞ্জু বেগমের টাকা চুরির ঘটনা শুনে তার মেয়ে মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে নড়াইল সদরের হবখালী ইউনিয়নের কোমখালী গ্রাম থেকে অসুস্থ এক রোগিকে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সে সদর হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার। এরপর ৬ মে রাত ৮টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের উত্তরখলিশাখালী গ্রামের রিপন বিশ্বাসের মোবাইল ফোন পেয়ে পুলিশ সুপার  ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে প্রসববেদনায় কাতর তার (রিপন) স্ত্রী অনিতাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে অসহায় আঞ্জু বেগমের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। তার মেয়ের চিকিৎসাসহ হাসপাতাল থেকে টাকা চুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 


আগামী নিউজ/ ফরহাদ/ তাওসিফ