ঢাকা: বিশ্ব করোনা আক্রান্ত হলেও অনেকটাই নিরাপদ ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু বিভিন্ন আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ না হওয়ায় বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু ঝুঁকিটা শেষ পর্যন্ত ঝুঁকিতে না থেকে আক্রান্ত হয় দেশ। প্রবাসীও বিদেশফেরত যাত্রীরা দেশে ফেরার পর সরকার কঠোর অবস্থানে থাকার পরেও বেশ কিছু আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত লকডাউন হয় একটা গোটা অঞ্চল মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা।
গত ২১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৫৫ দিনে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৩ জন। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর দিয়ে তারা ফিরেছেন। তবে এতো বিপুল সংখ্যক বিদেশ ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইন না মানলে বিপদের কারণ হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩ জন করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) এ আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর)। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন পর্যন্ত ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন একজন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন দুই হাজার ৬৯৮ জন। করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে আছেন ৩০ জন, আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৪ জন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিদেশ ফেরতরা যদি নিয়ম মেনে প্রথম থেকেই একটু সচেতন থাকতো তাহলে হয়তো আরো একটু নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হতো। তবে সরকার এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছে যথেষ্টভাবে কন্ট্রোল করার। বিদেশ ফেরতদের নিয়মিত স্বাস্থ্যগত স্ক্রিনিং করা হয়েছে। যাদের মধ্যে জ্বর, ঠান্ডার উপসর্গ পাওয়া গেছে তাদের কোয়ারেন্টিনের রাখা হয়েছে। অন্যদের হোম কোয়ারেন্টিন মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তরা ইটালি ফেরত এবং তাদের স্বজন। গত ৮ মার্চ এ তথ্য জানায় আইইডিসিআর। এর পরে সরকার ১৬ মার্চ দুপুর থেকে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের বাকি দেশগুলো থেকে দেশে যাত্রী প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করে। আইইডিসিআর জানায়, দেশে করোনা আক্রান্তদের বেশির ভাগ ইটালিফেরত প্রবাসী ও তাদের স্বজন। দেশে ক্রমান্বয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, দেশে এখনো কমিউনিটি পর্যায়ে ভাইরাসটি ছড়ায়নি। আক্রান্ত ২০ ও নিহত ১ জন বিদেশ ফেরত নয়তোবা বিদেশ ফেরতদের স্বজন। মূলত করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে আসা বিদেশ ফেরতরা সঠিক ভাবে কোয়ারেন্টাইন না মানায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হলেও তা মানছে না সিংহভাগ বিদেশ ফেরত।
তিনি আরো জানান, যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মকানুন মানছেন না এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছেন না, তারা পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় বিদেশ ফেরতদের স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার কোন বিকল্প নাই। সুনাগরিকের দায়িত্ব কর্তব্যগুলো পালন করলেই এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। হোম কোয়ারেন্টিনে নিশ্চিতে কঠোর হয়েছে সরকার।
নজরদারী করতে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন পথে তারা বাংলাদেশে এসেছেন। পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাসহ তাদের নামের তালিকা ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে কোয়ারেন্টিন না মানায় মানিকগঞ্জে অস্ট্রেলিয়াফেরত একজনকে ১৫ হাজার টাকা, শরীয়তপুরে ইতালি ফেরত একজনকে ৫০ হাজার টাকা এবং টাঙ্গাইলে সিঙ্গাপুর ফেরত একজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷
এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, যারা বিদেশ থেকে আসবেন, তারা অবশ্যই ১৪ দিন ঘরের একটি নির্দিষ্ট কক্ষে থাকবেন। কোনো অবস্থাতেই ঘরের বাইরে যাবেন না। তাকে ঘরেই খেতে হবে। তাদের কাপড় আলাদা পরিষ্কার করতে হবে।
এসব নির্দেশনা না মানলে সরকার আরো কঠোর অবস্থানে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে।
আগামী নিউজ/মিঠু/ডলি/নাঈম