Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ভেড়ার লোমের দেশি কম্বল


আগামী নিউজ | আগামীনিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০, ১০:১২ এএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০, ১১:০৫ এএম ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ভেড়ার লোমের দেশি কম্বল

ভেড়ার গা থেকে লোম কেটে সেই লোমে চরকায় সুতা কাটেন। এরপর সেই সুতা দিয়ে হস্তচালিত তাঁতে বোনেন কম্বল। ভেড়ার লোমের তৈরি কম্বল বেচেন ফেরি করে। কখনো পাঠান অভিজাত বিপণিবিতানে, যায় দেশের বাইরেও। এখন বয়স হয়েছে। আর পেরে উঠছেন না। কাজট কাউকে শিখিয়ে রেখে যেতে চান। খুব করে চান, কেউ তার কাজটি শিখে রাখুক। শিল্পটা বাঁচুক। কারণ, তার জানামতে, দেশে আর কেউ ভেড়ার লোমের কম্বল তৈরি করে না।

শেষ পর্যন্ত ঢাকার খামারবাড়িতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরেও ধরনা দিয়েছেন। অনুরোধ দজানিয়েছেন একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে। যেন হাতে-কলমে কাজটা শিখিয়ে যেতে পারেন। সেটা মাস ছয় আগের কথা, কিন্তু এখনো সাড়া মেলেনি। এখন আর তেমন কম্বল বুনছেন না। বাজ-দাদার রেখে যাওয়া শতবর্ষী তাঁতটি প্রায় নিশ্চুপ থাকে। দিন কয়েক  আগে আবার সচল হয়েছে। পরিচিত এক ব্যক্তি একটি কম্বলের জন্য খুব করে ধরেছে। সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি আবদুল খালেক। ভেড়ার লোম দিগয়ে আরেকটি কম্বল বুনে দিয়েছেন তিনি।

যেভাবে এ পেশায় আসা

আবদুল খালেকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়াগোলা গ্রামে। দেশভাগের সময় দাদা ফজলুর রহমান ভারতের বিহার থেকে পাড়ি জামিয়েছেলেন এ দেশে। দাদাও সেখানে এই কম্বল বোনা কাজাই করতেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসার পরা তার দাদার হাত ধরে ১০-১৫টি পরিবার এ কাজে এসেছেলেন।ধীরে ধীরে তারা পেশা ছেড়ে দিয়েছে। খালেকের বাবা একরামুল হকও এই পেশায় ছিলেন। বাবার কাছেই খালেকের হাতেখড়ি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। কাজে ডুবে থাকায় এসএসিটা দেয় হয়নি। এখন তার বয়স তেষট্টির কোঠায়। দুই ছেলে. এক মেয়ের বাবা। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে দুটিও চলে গেছেন অন্য পেশায়। খাটুনির কাজ, কঠিনও বেশ। তাই এ কাজে কেউ থাকতে চায় না।

ভেড়ার লোম সংগ্রহ

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভেড়া পালে লোকে। ভেড়ার গায়ের লোম বছরে কম করে হলেও দুবার কেটে ফেলতে হয়। ভেড়া বেশি গরম সহ্য করতে পারে না। ভিশেষ ধরনের কাঁচি দিয়ে এই লোম কাটতে হয়। একটু এদকি-ওদিক হলে চামড়া কেটে যায়। কেটে গেলেই সেখানে প্রদাহ হয়। ভেড়ার লোম কাটায় খালেক খুব দক্ষ। মিনিট সাতেকের মধ্যে একটি ভেড়ার লোম কেটে সাফ করে দেন। এই লোমই কম্বল তৈরির কাঁচামাল। আর এটা তিনি বিনা পয়সাতেই ফেয়ে যান। শুধু তা-ই নয়, ভেড়ার লোম কাটার জন্য উল্টো পারিশ্রমিকও (প্রতিটি ভেড়ার জন্য ৫০ টাকা) নেন খালেক।

কত লোমে কত কম্বল

খালেকের বানানো কম্বল চার হাত লম্বা, আর চওড়ায় তিনি হাত হয়। এই মাপের একটি কম্বল তৈরি করতে প্রাপ্তবয়স্ক ১৪টি ভেড়ার লোম লাগে। এই পরিমাণ লোম পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিলে আড়াই কেজি হয়। এরপর ধুনতে হয়। ভালো রোদ থাকলে এসব করতে দিন চারেক লাগে। এরপর চরকায় সুতা কাটতে হয়। সুতা শুকাতে লাগে এক দিন। তারপর হস্তচালিত তাঁতে চলে বোনার কাজ। বোনা শেষে কম্বল ধুয়ে শুকিয়ে  নিতে হয়। ভেড়ার লোম কাটা থেকে শুরু করে একটি কম্বল তৈরি অবদি সব মিলিয়ে আট-নয় দিন লগে জানালেন খালেক।

বিশেষজ্ঞরা যা বলেন

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত প্রণিসম্পদ অর্থনীতিবিদ নন্দ দুলাল টীকাদার বলেন, তার জানামতে বাংলাদেশে ভেড়ার লোম দিয়ে কেউ কম্বল তৈরি করে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবদুল খালেক তার কাছে এসেছিলেন। তিনি এখনো কাজটি করে যাচ্ছেন।তিনি মারা গেলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ধরে রাখার কোনো উত্তরসূরি থাকবে না, এই চিন্তা থেকে তারা একট্ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এই প্রকল্পটির অধীনে কিছুসংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রকল্পটি এখনো পাস হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৩৮ লাখ ভেড়া আছে। সব ভেড়ার লোম যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে বছরে আমাদের উৎপাদন প্রায় ১০০ কোটি টাকা বাড়বে।

খালেকের তৈরি কম্বল পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। 

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ভেড়ার লোমের কম্বল

ভেড়ার গা থেকে লোম কেটে সেই লোমে চরকায় সুতা কাটেন। এরপর সেই সুতা দিয়ে হস্তচালিত তাঁতে বোনেন কম্বল। ভেড়ার লোমের তৈরি কম্বল বেচেন ফেরি করে। কখনো পাঠান অভিজাত বিপণিবিতানে, যায় দেশের বাইরেও। এখন বয়স হয়েছে। আর পেরে উঠছেন না। কাজট কাউকে শিখিয়ে রেখে যেতে চান। খুব করে চান, কেউ তার কাজটি শিখে রাখুক। শিল্পটা বাঁচুক। কারণ, তার জানামতে, দেশে আর কেউ ভেড়ার লোমের কম্বল তৈরি করে না।

শেষ পর্যন্ত ঢাকার খামারবাড়িতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরেও ধরনা দিয়েছেন। অনুরোধ দজানিয়েছেন একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে। যেন হাতে-কলমে কাজটা শিখিয়ে যেতে পারেন। সেটা মাস ছয় আগের কথা, কিন্তু এখনো সাড়া মেলেনি। এখন আর তেমন কম্বল বুনছেন না। বাজ-দাদার রেখে যাওয়া শতবর্ষী তাঁতটি প্রায় নিশ্চুপ থাকে। দিন কয়েক  আগে আবার সচল হয়েছে। পরিচিত এক ব্যক্তি একটি কম্বলের জন্য খুব করে ধরেছে। সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি আবদুল খালেক। ভেড়ার লোম দিগয়ে আরেকটি কম্বল বুনে দিয়েছেন তিনি।

যেভাবে এ পেশায় আসা

আবদুল খালেকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়াগোলা গ্রামে। দেশভাগের সময় দাদা ফজলুর রহমান ভারতের বিহার থেকে পাড়ি জামিয়েছেলেন এ দেশে। দাদাও সেখানে এই কম্বল বোনা কাজাই করতেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসার পরা তার দাদার হাত ধরে ১০-১৫টি পরিবার এ কাজে এসেছেলেন।ধীরে ধীরে তারা পেশা ছেড়ে দিয়েছে। খালেকের বাবা একরামুল হকও এই পেশায় ছিলেন। বাবার কাছেই খালেকের হাতেখড়ি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। কাজে ডুবে থাকায় এসএসিটা দেয় হয়নি। এখন তার বয়স তেষট্টির কোঠায়। দুই ছেলে. এক মেয়ের বাবা। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে দুটিও চলে গেছেন অন্য পেশায়। খাটুনির কাজ, কঠিনও বেশ। তাই এ কাজে কেউ থাকতে চায় না।

ভেড়ার লোম সংগ্রহ

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভেড়া পালে লোকে। ভেড়ার গায়ের লোম বছরে কম করে হলেও দুবার কেটে ফেলতে হয়। ভেড়া বেশি গরম সহ্য করতে পারে না। ভিশেষ ধরনের কাঁচি দিয়ে এই লোম কাটতে হয়। একটু এদকি-ওদিক হলে চামড়া কেটে যায়। কেটে গেলেই সেখানে প্রদাহ হয়। ভেড়ার লোম কাটায় খালেক খুব দক্ষ। মিনিট সাতেকের মধ্যে একটি ভেড়ার লোম কেটে সাফ করে দেন। এই লোমই কম্বল তৈরির কাঁচামাল। আর এটা তিনি বিনা পয়সাতেই ফেয়ে যান। শুধু তা-ই নয়, ভেড়ার লোম কাটার জন্য উল্টো পারিশ্রমিকও (প্রতিটি ভেড়ার জন্য ৫০ টাকা) নেন খালেক।

কত লোমে কত কম্বল

খালেকের বানানো কম্বল চার হাত লম্বা, আর চওড়ায় তিনি হাত হয়। এই মাপের একটি কম্বল তৈরি করতে প্রাপ্তবয়স্ক ১৪টি ভেড়ার লোম লাগে। এই পরিমাণ লোম পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিলে আড়াই কেজি হয়। এরপর ধুনতে হয়। ভালো রোদ থাকলে এসব করতে দিন চারেক লাগে। এরপর চরকায় সুতা কাটতে হয়। সুতা শুকাতে লাগে এক দিন। তারপর হস্তচালিত তাঁতে চলে বোনার কাজ। বোনা শেষে কম্বল ধুয়ে শুকিয়ে  নিতে হয়। ভেড়ার লোম কাটা থেকে শুরু করে একটি কম্বল তৈরি অবদি সব মিলিয়ে আট-নয় দিন লগে জানালেন খালেক।

বিশেষজ্ঞরা যা বলেন

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত প্রণিসম্পদ অর্থনীতিবিদ নন্দ দুলাল টীকাদার বলেন, তার জানামতে বাংলাদেশে ভেড়ার লোম দিয়ে কেউ কম্বল তৈরি করে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবদুল খালেক তার কাছে এসেছিলেন। তিনি এখনো কাজটি করে যাচ্ছেন।তিনি মারা গেলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ধরে রাখার কোনো উত্তরসূরি থাকবে না, এই চিন্তা থেকে তারা একট্ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এই প্রকল্পটির অধীনে কিছুসংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রকল্পটি এখনো পাস হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৩৮ লাখ ভেড়া আছে। সব ভেড়ার লোম যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে বছরে আমাদের উৎপাদন প্রায় ১০০ কোটি টাকা বাড়বে।

খালেকের তৈরি কম্বল পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

তিনি বলেন, ভেড়ার লোম দিয়ে কম্বল তৈরি তিনি দেখেছেন। জিনিসটা সুন্দর। তবে এর আরেকটু উন্নয়ন করা সম্ভব হলে এটা খুবই মানসম্মত একটা জিনিস হতে পারত। ভেড়ার পালনের পাশাপাশি এলাকার মানুষের কুটিরশিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে। বিষয়টি তিনি প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটকে বলেছেন। তখন তারা ভেড়ার লোমের সঙ্গে পাটসহ আরো কিছু উপাদান মিশিয়ে  একটা সুন্দর চাদর তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিয়েছিল। পরে তিনি মন্ত্রী না থাকায় সেটার কী হয়েছে বলতে পারছন না।

আগামীনিউজ/মাসুম