Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন এলডিপির সেলিম


আগামী নিউজ | রফিক রাফি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৬:৫১ পিএম
বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন এলডিপির সেলিম

জাতীয় মুক্ত মঞ্চ নিয়ে মতানৈক্যের জেরে এলডিপির নবগঠিত কমিটিতে স্থান পান নি শাহাদাত হোসেন সেলিম। তবে সেলিমও জানিয়ে দিয়েছেন, এলডিপিতে আর ফিরছেন না। এমনকি কর্নেল অলির নেতৃত্বে আর রাজনীতিও করবেন না। 

রাজনীতিও ছাড়ছেন না। শীঘ্রই নিজের পুরনো দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন এলডিপির এই প্রভাবশালী নেতা। শুধু তিনি নন ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন আরো তিন প্রভাবশালী নেতা।

তারা হচ্ছেন, এলডিপি থেকে গত ২৬ জুন পদত্যাগ করা জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও সাবেক এমপি আবদুল করিম আব্বাসী ও সাবেক এমপি আবদুল্লাহ ও সাবেক এমপি আবদুল গণি।

সেলিমের ঘনিষ্টজনরা বলছেন, কর্মীবান্ধব আর টেলিভিশন টকশো ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইতিমধ্যে রাজনীতিতে সেলিম তার অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।  বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিএনপির প্রতি তার আলাদা একটা টান রয়েছে। বিএনপির বিষয়ে সেলিমের ইতিবাচক অবস্থান অনেকটাই প্রকাশ্যে। বিএনপির অনেক নেতাই চান সেলিম বিএনপিতে ফিরে আসুক। সেই প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়েছে। খুব শীঘ্রই তার অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিবেন সেলিম। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম এই প্রতিবেদককে জানান, জীবনের অনেক সময় বিএনপির জন্য ব্যয় করেছি। মনেপ্রাণে বিএনপির রাজনীতি ধারণ করি। খালেদা জিয়া আমার নেত্রী। তারেক রহমান এদেশের রাজনীতির যোগ্য উত্তরসূরী। আমার অবস্থান সবসময় জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে যদি আমাকে দলে আহ্বান জানায়, সেটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। শিগগির বিষয়টি আমি আপনাদের জানাবো। এলডিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই একটা সিদ্ধান্ত নেবো।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। শাহাদাত হোসেন সেলিমের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা হয়েছে। যে কোন সময় আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিএনপিতে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

এলডিপির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শুরু করে সর্বশেষ সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন সেলিম। হঠাৎ করে কোন সম্মেলন ছাড়া নতুন কমিটি করেন কর্নেল অলি আহমেদ। সেই কমিটিতে সেলিমকে রাখা হয়নি। এ নিয়ে নানা আলোচনার জন্ম হয়। এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমেদের সাথে সেলিমের মতানৈক্যের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

কর্নেল অলি’র সমালোচনা করে সেলিম বলেন, এলডিপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আমি। নীতিনির্ধারকদের একজন হিসেবে দীর্ঘ ১৩ বছর দল করছি। অর্থ ও শ্রম দিয়েছি। দলের নামকরণ থেকে শুরু করে গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র তৈরি করার সঙ্গে ছিলাম আমি। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছি। হঠাৎ করে তিনি (অলি আহমেদ) যে নতুন কমিটি গঠন করেছেন, এটা তার এখতিয়ারবহির্ভূত, অসাংবিধানিক, অগঠনতান্ত্রিক। আমাদের যে গঠনতন্ত্র আছে, তাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে নিতে হয়। 
তিনি যেটা করেছেন সেটা অনেকটা প্রতিহিংসামূলকভাবে করেছেন। আমাকেসহ কয়েকজনকে বাদ দেওয়ার জন্য কমিটি করেছেন কোন সম্মেলন ছাড়া। এটা এলডিপির নেতাকর্মীরা কেউ মেনে নেয়নি। অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। হঠাৎ করে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি এ কাজ করতে পারেন না। কেউ যদি রাজনৈতিক দলকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেন, সেটা ভিন্ন ব্যাপার।

জাতীয় মুক্ত মঞ্চের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সংকট যাচ্ছিল। তখন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের মধ্যে থেকে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। অলি আহমদ একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে হঠাৎ জামায়াতের পক্ষে স্ট্যান্ড নেওয়াটা আমরা ভালো চোখে দেখিনি। জাতীয় মুক্তি মঞ্চের এজেন্ডা হলো বিরাজনীতিকরণ। বিএনপি নেতাদের চরিত্রহনন। বিএনপি নেতাদের ব্যর্থ প্রমাণিত করা। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ সৃষ্টি করে দুর্বল করাই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের লক্ষ্য। 

যদিও জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠনের সময় আমরাও ছিলাম। কিন্তু পরে যখন বিভিন্ন রকম ধোঁয়াশা তৈরি হলো, তখন দেখতে পেলাম এর মধ্যে কোনো সঠিক রাজনীতি নেই, জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকে ধ্বংস করা ছাড়া। আসলে মুক্তি মঞ্চ একটা লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যহীন মঞ্চ। জাতীয় মুক্তি মঞ্চের পক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করলেও বিএনপির নেতৃত্বকে খাটো করা ছাড়া মুক্তি মঞ্চের আর কোনো রাজনীতি নেই। দলীয় প্রধানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আমার মনোমানিল্য সৃষ্টি হয়। 

এলডিপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এলডিপির অনেকেই ইতোমধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর যারা এলডিপিতে যোগদান করেছিল তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তিও এখন আর এলডিপি করে না। মূলত এ দলের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। কিছু ঠিকানাবিহীন লোকজনের ঠিকানা এখন এলডিপি। এখন ধীরে ধীরে আমি অনেক অজানা তথ্য আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে জানাবো।

শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, দলের পক্ষ থেকে অনেকেই আমাকে অলি আহমদ সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি আসলে একজন নিষ্ঠুর হৃদয়হীন ব্যক্তির নেতৃত্বে আর রাজনীতি করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আগামী নিউজ/আরআর/এআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে