Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বায়ুদূষণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরী


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২১, ১১:০১ এএম
বায়ুদূষণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরী

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ বায়ুদূষণ কথাটির সঙ্গে পরিচিত নয় এমন মানুষ রাজধানীতে খুঁজে পাওয়া বিরল। প্রতিনিয়তই রাজধানীতে দূষণের পারদ মাত্রাতিরিক্তি থাকে। দূষণরোধে প্রতিনিয়ত নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা কমছে না বরং প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসছে ঢাকা। গতকালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিনে আগের সব রেকর্ড প্রায় ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল দূষণের মানমাত্রা ছিল ৫০২, যা চলতি বছর তো বটেই, গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর মানমাত্রা উঠেছিল ৪৩০।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত গড়ে ঢাকা প্রথম স্থানেই ছিল। দূষণের মাত্রা গড়ে ৫০২ পর্যন্ত উঠেছিল।

বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মাত্রাকে বলা হয় দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫-এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। দূষণ কমাতে এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার নিতে পারে। গতকাল দুপুর ১টার পরে কিছুটা কমে ২২১-এ ছিল। তারপরও দূষণের দিক থেকে ঢাকা এখনো প্রথম  স্থানেই আছে।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর ঢাকায় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ৩১৫। যেটা দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীর তালিকায় এক নম্বরে উঠে এসেছিল ঢাকা। এরপর থেকে ক্রমাগত বায়ুদূষণের মাত্রা শুধু বাড়ছেই। এয়ার ভিজ্যুয়ালের একিউআই সূচকে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৩৭৯.৪ মাইক্রোগ্রাম, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

বাতাসে স্বাভাবিক দূষণের মাত্র ৫০ একিউআই। অথচ ঢাকার বাতাস তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি দূষিত। ঢাকার মধ্যে বারিধারা-আমেরিকান এম্বেসির কাছাকাছি এলাকা সবচেয়ে বেশি দূষিত, যেখানে বায়ুমান ৫০০’রও বেশি। দূষণের দিক থেকে বিশ্বের ঢাকার অবস্থান প্রথম। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নেপালের কাঠমান্ডুর সূচকের চেয়ে ঢাকার মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি। কাঠমান্ডুর একিউআই মাত্রা হচ্ছে মাত্র ১৯৫। তৃতীয় স্থানে আফগানিস্তানের কাবুল, তাদের বাতাসের মান ১৭৭ একিউআই এবং পাকিস্তানের লাহোরের বাতাসের মানও ১৭৭ একিউআই।

ভারতের রাজধানী দিল্লি এক সময় ছিল বায়ুদূষণে এক নম্বর স্থানে। তাদের অবস্থান এখন ৫ নম্বরে। শহরটির বাতাসে দূষণের পরিমাণ ১৭৫ একিউআই। কলকাতার অবস্থান ৭ নম্বরে। শহরটির বাতাসে দূষের মাত্রা ১৬৯ একিউআই। এয়ার ভিজুয়াল বাতাসের মানকে মোট ৬টি স্কেলে পরিমাপ করে থাকে। এগুলো হচ্ছে-গুড, মডারেট, আনহেলদি ফর সেনসেটিভ গ্রুপস, আনহেলদি, ভেরি আনহেলদি এবং হেজার্ডাস (বিপজ্জনক)। ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রাকে হেজার্ডাস বলেই অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান যাচাইয়ের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়াল।

এ বিষয়ে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এতদিন আমরা বাইরে থেকে আসা বাতাসের সঙ্গে ধুলোবালিকেই দূষণের জন্য দায়ী করেছি বেশি। এখন বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। আমাদের কারণেই এখন দূষণ বাড়ছে। বড় বড় ভবন নির্মাণের কাজ, যানবাহন ও আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়াই মূলত এর জন্য দায়ী। দূষণের মাত্রা এখন অনেক বেশি। ত্বরিত ব্যবস্থা না নিলে আগামী তিন মাসে ঢাকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

আগে আমরা মনে করতাম ইটভাটার কারণে বায়ুদূষণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঢাকায় স্ট্রিট বেজড বায়ুদূষণের মাত্রাই বেশি, যা প্রায় ৪৫ ভাগ। নারায়ণগঞ্জের কোল থেকে শুরু করে টঙ্গী-গাজীপুর পর্যন্ত এই বিশাল এরিয়ায় ছোটবড় বাড়ি থেকে শুরু করে বড় বড় প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। যে কারণে দূষণের মাত্রাও বাড়ছে প্রতি বছর।

২০১৬ সালের জুলাই থেকে ঢাকায় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর থেকে বায়ুদূষণের মাত্রাও বাড়তে শুরু করেছে। গত পাঁচ বছরে প্রতি জানুয়ারির তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বায়ূদূষণ বেড়েছে প্রায় ১৫ ভাগ। ঢাকার বাতাসে মূলত সূক্ষ্ম ধূলিকণার উপস্থিতিই বেশি।

গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার। করোনায় মারা গেছে এক বছরে ৭ হাজার আর বায়ুদূষণে মারা গেছে আরো কয়েকগুণ বেশি। অথচ আমরা এ দিকটা নিয়ে কোনোভাবেই সচেতন নই।

এ মুহূর্তে অর্থাৎ স্বল্প মেয়াদে বায়ুদূষণ কমাতে হলে রাস্তায় প্রচুর পানি ছিটাতে হবে। রাস্তার ওপর ধূলিদূষণ কমাতে হলে কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর পানি ছিটাতে হবে। পানি দেওয়ার পর দেখা গেছে একই স্থানে ২০ ভাগ বায়ূদূষণ কমে যায়। প্রতি বছর নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি- এই চার মাস ৬০ ভাগ বায়ুদূষণ বেড়ে যায়। যদি সঠিকভাবে পানি ছিটানো যায়, রাস্তার পাশে গাছপালায় জমে থাকা ধূলাবালি কমিয়ে আনা যায়, তাহলে অন্তত ৬ হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। 

অধ্যাপক কামরুজ্জামান হাইকোর্টের দুটি নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দেন। বলেন, মহামান্য আদালত ২০২০ সালের জানুয়ারি এবং ডিসেম্বর মাসে ২টি নির্দেশনা দিয়েছেন, যেখানে পানি ছিটানোর কথা বলা আছে। সে নির্দেশনা মানলে এবং কনস্ট্রাকশনের টেন্ডারে যেসব নিয়মাবলি উল্লেখ করা থাকে, সেগুলো মেনে  কাজ করলেও দূষণ অনেক কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহীসহ সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, দূষণ কেন হয়, রোধে কী কী করতে হবে তা আমরা যেমন জানি, সরকারও জানে। গণমাধ্যমে বহুবার বহুদিন এসব নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। আসল বিষয় হচ্ছে সরকার এটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে কি না। সরকার চাইলেই রোধ করা সম্ভব। বায়ুদূষণ রোধে অগ্রাধিকার দিয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। এর বিকল্প আর কিছু নেই।

এ বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। টিম করে মনিটরিং করা হচ্ছে। দূষণরোধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান হচ্ছে। এ নিয়ে  দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও কয়েক দফা সভা করেছি আমরা। রাস্তায় পানি দেওয়ার বিষয়েও কাজ চলছে। দূষণ শুধু আমাদের জন্যই হয় তা নয়, বাইরে থেকেও বাতাসের সঙ্গে ধূলিকণা আসে। এতেও  দূষণ বেড়ে যায়। আমরা দূষণ কমিয়ে আনতে যা যা করা দরকার তা করছি।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে