Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সুন্দরবনে লুকিয়ে থাকা বিচিত্র উভচরেরা


আগামী নিউজ প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২০, ১২:১৬ এএম
সুন্দরবনে লুকিয়ে থাকা বিচিত্র উভচরেরা

ছবি; সংগৃহীত

ঢাকাঃ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ব-দ্বীপ সুন্দরবনের নাম শুনলেই মনে আসবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ এখানকার যত শিকারী প্রাণীদের কথা। তবে বাস্তুতন্ত্রের জন্য ছোট ছোট প্রাণিরাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে এই বন। বাদাবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, নোনাপানির হিংস্র কুমীর আর দক্ষ শিকারী মেছোবাঘের কথা সবারই জানা। তবে এখানে আরো অসংখ্য ক্ষুদ্র প্রাণী রয়েছে, যাদের নাম জানে না অনেকেই। বিশেষ করে এখানকার পানিতে এবং কাদামাটিতে বাস করা উভচর প্রাণিরা ম্যানগ্রোভ বনের বাস্তুতন্ত্রের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে থেকে, এটি সঠিকভাবে পরিচালিত হতে সহায়তা করে। 

পশ্চিমবঙ্গের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য এই ম্যানগ্রোভ বনের প্রাণিজগতকে "উভচর সম্প্রদায়" হিসেবেই অভিহিত করেছেন। ম্যানগ্রোভ বন সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে জোয়ার ভাটার সাথে খাপ খাইয়ে অন্তর্বর্তী জঙ্গল তৈরি করেছে।

এখানকার বৃক্ষ-লতার শেকড় কাদামাটিতে, আর ডালপালাগুলো নুয়ে আছে পানির উপর। এই বিশেষ পরিবেশের কারণেই এখানে নানা ধরণের জলজ, স্থলজ ও উভচর প্রাণির আলাদা এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছে।

উদহারণ হিসেবে বলা যায় গর্জন গাছের কথা। এর অসংখ্য শেকড়বাকড় মাটিতে একটা জটিল জাল তৈরি করে। জোয়ার ভাটার মাঝে সে জালে জড়ো হয় অসংখ্য মাছ, শামুক আর উভচর প্রাণি। এই জালের এক একটি খোপ নিউট্রিয়েন্টে পরিপূর্ণ, ফলে এসব প্রাণি আশ্রয় এবং খাবার পায় সহজেই। পলি মাটিতে ঢাকা, অক্সিজেনের অভাবযুক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ গড়ে ওঠে, আর এখানে বিভিন্ন পোকা আর ক্ষুদ্র প্রাণিরা মাটিতে যে ছিদ্র তৈরি করে তা বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরাজি আর ক্ষুদ্র প্রাণিদের এই পরস্পরনির্ভরশীলতাই সুন্দরবনের বিচিত্র বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলেছে বলে মনে করেন ড. শিলাঞ্জন ভট্টাচার্য। 

ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রে কাঁকড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। মাটিতে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয় তারা, কাদাপানি আর মাটি নাড়াচাড়ার মাধ্যমে, মাটির বিভিন্ন স্তরে পুষ্টি বন্টন করে। এ কারণে তাদেরকে এই বাস্তুতন্ত্রের প্রকৌশলী বলা হয়ে থাকে।

খননকাজেও তারা খুবই দক্ষ, অক্সিজেন বিবর্জিত মাটিতে ছোট ছোট গর্ত খুঁড়ে তারা ম্যানগ্রোভ বনের কম উপকার করে না। 

সুন্দরবনে মূলত দুই ধরণের কাঁকড়া বেশি দেখা যায়, ফিডলার ক্র‍্যাব এবং ঘোস্ট ক্র‍্যাব। এগুলোরও আবার নানা প্রজাতি রয়েছে। মেয়ে কাঁকড়াকে আকৃষ্ট করতে পুরুষ ফিডলার ক্র‍্যাব নিজের খোঁড়া গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে প্রবলভাবে তার দাঁড়াগুলোকে নাড়তে থাকে। সঙ্গিনী সাড়া দিলে, পুরুষ কাঁকড়াটি তখন তাকে গর্তে নিয়ে যায়।

খাড়ি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের আরেকটি কৌতুহলোদ্দীপক প্রাণি হলো হারমিট কাঁকড়া। খাদকের হাত থেকে বাচতে এরা মৃত শামুকের শুন্য খোলে বাসা বাঁধে। ম্যানগ্রোভের শেকড় খায় তারা। এছাড়াও বিভিন্ন জৈব উপাদান খেয়ে কাকড়া জঙ্গলের উপরিতল পরিষ্কার রাখে।

তক্ষকের খাদ্য হচ্ছে বিভিন্ন মাকড়সা, পোকামাকড় আর ব্যাঙ। আবার লাফানে মাকড়সা খায় ছোট ছোট পোকা। আর ঘাসফড়িং, ঝিঝি পোকা আর পঙ্গপাল জাতীয় পোকারা উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে।

তবে সুন্দরবনের বিচিত্র সব ক্ষুদ্র প্রাণিদের সনাক্ত করা কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, এসব প্রাণীদের খাদ্য ও পুষ্টিচক্র গবেষণা করলে জীববিজ্ঞানীরা লাভবান হতে পারেন।

শিলাঞ্জন বলেন, সুন্দরবনের এসব ক্ষুদ্র প্রাণিদের সম্পর্কে খুব কমই আমরা জানি। সুন্দরবনের বিভিন্ন উপাদান এদেরকে জটিল এবং বৈচিত্র্যময় করেছে।

ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ বনের মাটিতে নানারকম শামুক দেখা যায়। জোয়ারের সময় এরাই আবার গাছের গুঁড়িতে আশ্রয় নেয়।  এখানে গ্যাস্ট্রোপড জাতীয় প্রাণি যেমন রয়েছে, তেমনি মাডস্কিপারের মত উভচর মাছও রয়েছে। এদের মাধ্যমে সুন্দরবনের পানি আর মাটিতে দূষণের পরিমাপ করা যায় বিভিন্ন উৎস থেকে নিসৃত দূষিত পদার্থ জমা হয় তাদের শরীরের টিস্যুতে। মাডস্কিপারের উপর গবেষণা চালিয়ে সুন্দরবনের তামা, লোহা, জিংক এবং সীসা দূষণ পরিমাপ করেছেন গবেষকরা।

ভারতের সবচেয়ে বিষধর সাপ কিং কোবরাসহ ৩৭ প্রজাতির সাপ পাওয়া যায় সুন্দরবনে৷ তবে মজার বিষয় হলো, সুন্দরবনের কিং কোবরার রঙ হালকা বাদামির উপর কালো ছোপ ছোপ, যেটা পশ্চিমাঞ্চলের কিং কোবরার চেয়ে আলাদা। রেড টেইল পিট ভাইপারও প্রচুর আছে জঙ্গলে৷ তবে অজগরের দেখা মেলে কালেভদ্রে।  আবাসস্থল কমে যাওয়ায় সুন্দরবনে সাপের সংখ্যা কমছে। আবার

সাপের কামড়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয় বলে, গ্রামবাসীরা সাপের দেখা পেলেই পিটিয়ে মেরে ফেলে।

ঔপনিবেশিক যুগের শেষ দিকে, এই অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল কেটে বিশাল এলাকা জুড়ে  অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে, এখানে যেসব মিঠাপানির পুকুর তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোতে জোয়ারের পানি আর প্রবেশ করতে পারত না। সময়ের সাথে সাথে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বনের প্রান্তে মানুষের বসতি গড়ে ওঠে। এখন সেখানে লাখো মানুষের বসবাস। এইসব পুকুরে আবার নানা ধরণের ব্যাঙের আবাসস্থল গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ভারতীয় গেছো ব্যাঙসহ সাধারণ কোলাব্যাঙও রয়েছে। তবে, সম্প্রতি এসব স্থানে বেশ কিছু নতুন এবং নাম না জানা উভচরপ্রাণীরও দেখা মিলেছে। শিলাঞ্জন মনে করেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ খণ্ডিত হওয়ার কারণে হয়তো এখানকার প্রাণিদের মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট দেখা দিয়েছে। ফলে এখাবে নতুন জাতের উভচর প্রাণির সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।  এই ছবিটাই তার প্রমাণ হতে পারে। উভচর ও সাপজাতীয় প্রাণীর সংরক্ষণ নিয়ে কর্মরত ভারাদ গিরি বলেন, এর চিকণ আঙুল, পেশীবহুল অঙ্গ দেখে একে স্কিটারিং ফ্রগ বলে মনে হলেও তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।  সূত্র: রাউন্ডগ্লাস।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে