Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কমিউনিটি পুলিশিং দিবস কাল


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২০, ১২:২৮ পিএম
কমিউনিটি পুলিশিং দিবস কাল

ছবি: সংগৃহিত

ঢাকা: পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’-এ স্লোগান নিয়ে চার বছর আগে যাত্রা করেছিল কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম। এরপর থেকেই পুলিশের এ সামাজিক উদ্যোগ পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। প্রথমেই কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধ ও পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতিতে মুখ থুবড়ে পড়ে এর কার্যক্রম। ফলে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে না পারায় আস্থার সংকটও প্রকট হচ্ছে পুলিশের এ সামাজিক উদ্যোগের। তবে ইতোমধ্যে অভিনব এ উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।

সূত্র জানিয়েছে, কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই কমিউনিটি পুলিশিংয়ে যুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। কারো বিরুদ্ধে গুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আছে। তবে কয়েক সদস্যের শাস্তি হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান জড়িত ঊর্ধ্বতনরা। কয়েকটি অভিযোগের সুরাহা হলেও ঝুলে আছে গুরুতর অর্ধশতাধিক অভিযোগ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে চাপও থাকে। শুধু তাই-ই নয়, সমস্যা রয়েছে খোদ পুলিশের পক্ষ থেকেও। তার পরও কমিউনিটি পুলিশিং পদে পদে প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কমিউনিটি পুলিশিং সফল হলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশও লাভবান হবে। সালিসের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে অনেক বিরোধ নিষ্পত্তি করা গেলে সমাজে অস্থিরতা কমবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘ পথচলাতেও কমিউনিটি পুলিশিং উদ্যোগকে শক্ত সাংগঠনিক কাঠামোতে দাঁড় করানো যায়নি। কারণ এখনো পুলিশের ওপর পুরোপুরি আস্থা নেই জনগণের। জনগণের সঙ্গে পুলিশের আচরণগত বিষয়গুলো আরো বেশি পেশাদারি হওয়া উচিত; তবেই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যক্রমে সফলতা আসবে।

কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে কাজ করছেন এমন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কমিউনিটি পুলিশিং সম্পর্কে পুলিশ ও জনগণের মধ্যেও সঠিক ধারণা নেই। আবার এর সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের নিয়েও সমাজে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কমিউনিটি পুলিশিং প্রচারণা বাড়ানো গেলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি লাভবান হবে পুলিশও।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কমিউনিটি পুলিশিংয়ে প্রতিবন্ধকতাও আছে। আস্থা কম থাকায় পুলিশের কোনো আহ্বানে সহজে সাড়া দিতে চায় না জনগণ। পুলিশ ও জনগণ-উভয়ের মধ্যেই পুরনো ধ্যানধারণা কাজ করে। আবার কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে স্বচ্ছ ধারণাও নেই অনেকের। জনগণের পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করা হয় না পুলিশকে। পুলিশ ইচ্ছা করলে সবই পারে-এমন ধারণাও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের বড় বাধা। অন্যদিকে রুটিন ডিউটির বাইরে হওয়ায় বাড়তি ঝামেলা মনে করে পুলিশ সদস্যরাও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ধারণা দিতে এগিয়ে যান না। তাছাড়া এ খাতে অর্থ বরাদ্দ নেই। জনগণের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান নিয়ে কাজ করা কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির অভিযোগও ওঠে। তাছাড়া জনগণের প্রত্যাশা ও মতামতের মূল্য দিতে চান না অনেক পুলিশ সদস্যই।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কাজই হচ্ছে প্রতিরোধমূলক ও সমস্যা সমাধানভিত্তিক পুলিশিং ব্যবস্থা। সমাজের সালিসি ব্যবস্থা কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থারই একটি অংশ। সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি ও ডাকাতিসহ আমলযোগ্য অপরাধ ছাড়া আমল অযোগ্য সব ঘটনাই সামাজিকভাবে মীমাংসা করার সুযোগ রয়েছে। এর আইনগত ভিত্তিও রয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের আওতায় ওপেন হাউস ডে, মতবিনিময় ও অপরাধ বিরোধ সভা, উঠান বৈঠক এবং দৃশ্যমান টহলের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই পুলিশ জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করতে পারছে। পুলিশের কর্মপরিধি বেড়ে যাওয়ায় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের অনেকের অপরাধ, আধিপত্যবাদী ও সামন্ত মানসিকতার কারণে এদের ওপর জনগণের আস্থা কম। যে কারণে যে উদ্দেশ্য নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং চালু হয়েছে, তা সফল হচ্ছে না। তবে চেষ্টা করলে সেসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে কমিউনিটি পুলিশিংকে জনগণের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেও মনে করেন এ সমাজবিজ্ঞানী।

এদিকে ভাটারা থানার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন সালেক ঢালী বলেন, পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব কমানোর একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে কমিউনিটি পুলিশিং। এর ফলে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ দমনে সহায়ক হচ্ছে। একই বিষয়ে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার কমিউনিটি পুলিশের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়। কর্মজীবনের ব্যস্ততার বাইরে শ্রমমূল্য ছাড়া অনেকেই সময় দিতে চান না। অনেকের এ বিষয়ে কোনো ধারণাও নেই। যে কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি কমিউনিটি পুলিশিং উদ্যোগ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহে প্রথমবারের মতো জনগণের সহযোগিতায় অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল পুলিশ। ওই সময় ময়মনসিংহ শহরে সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধ, চুরি ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেজন্য তখন রাতে পেট্রোল ডিউটির জন্য টাউন ডিফেন্স পার্টি (টিডিপি) গঠন করা হয়। এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিল স্বল্প সময়ের জন্য অপরাধ দমনে পদক্ষেপ নেওয়া। তারই আদলে ২০০৭ সালে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির তত্ত্বাবধানে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এ কার্যক্রম শুরু করেন। তখন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন বর্তমানে পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক। সেই হিসেবে তিনিই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার প্রবর্তক।

কমিউনিটি পুলিশিংয়ের চলমান কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতে দেশব্যাপী ৪০ হাজার ৯০৮টি কমিটি গঠন হয়েছে। এসব কমিটিতে ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬ জন সদস্য কাজ করছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জমিজমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭২৩টি। এ ছাড়া টাকা-পয়সা-সংক্রান্ত বিরোধ ২২ হাজার ২১৫টি, স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ ২৪ হাজার ৫৯৬টি, মারামারি-সংক্রান্ত ৩৬ হাজার ৫৮টি, পারিবারিক ২৩ হাজার ৯৭৪টি ও অন্য বিষয়ে ৪৪ হাজার ৪৭৯টি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

২০১৪ সালে ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’-এ স্লোগান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু করে কমিউনিটি পুলিশিং। বর্তমানে দেশের সব জেলাতেই কমিউনিটি পুলিশিং সেল রয়েছে এবং প্রতিটি থানায় রয়েছেন কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি কার্যকর রয়েছে। সেসব কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের সবস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ রয়েছে। সারা দেশে পরিবহন সেক্টরেও কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রথমবারের মতো ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ পালনের উদ্যোগ : প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ পালনের সিদ্ধান্ত হয় বলে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। সেই হিসেবে আগামীকাল শনিবার প্রথমবারের মতো দিবসটি পালিত হবে।

আগামীনিউজ/মিথুন

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে