Dr. Neem on Daraz
Victory Day

থেমে নেই হজযাত্রীদের সঙ্গে ঠকবাজি


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২২, ১১:৩২ পিএম
থেমে নেই হজযাত্রীদের সঙ্গে ঠকবাজি

ঢাকাঃ ট্রাভেলস এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে হজযাত্রীদের সঙ্গে নানা অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ পুরনো। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো হজযাত্রী যেতে পারেননি। এতে হজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা ব্যাপক ক্ষতি মুখে পড়ে। এবার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে অর্ধেক মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের সেবা দিতে গিয়েও নানা প্রতারণা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে।

এসব অনিয়ম দেখার দায়িত্ব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের। তবে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই অনেকটা দায় সারছে মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন (হাব) থেকেও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব এজেন্সির অনিয়ম ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার হজে যেতে পারবেন। করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন স্বাভাবিক কোটার প্রায় অর্ধেক। এবারের হজ কার্যক্রমে দেশের ৩৫৯টি এজেন্সি যুক্ত আছে।

হজ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বিচিত্র সব অভিযোগে এজেন্সিগুলোকে একের পর এক নোটিশ দিচ্ছে। এমনকি হজ নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সৌদি দূতাবাসের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে এজেন্সিগুলোর অনিয়ম ও অব্যবস্থপনা নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। ভোগান্তির শিকার হজযাত্রীরাও প্রতিনিয়ত অভিযোগ জমা দিচ্ছেন।

তবে এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে ঢালাও অভিযোগ মানতে নারাজ হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আগের চেয়ে হজ ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো।

আগের চেয়ে হজ ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো। তারপরও যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। আমরাও তাদের সদস্য থেকে বাদ দিয়ে দিই। এর বাইরে জামানত বাজেয়াপ্ত ও লাইসেন্স বাতিলের মতো ক্ষমতা সংগঠনের নেই।হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম

হজের মতো কার্যক্রমে অনিয়ম হাবের জন্য বিব্রতকর কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কেউ হজে গিয়ে ভিক্ষা করলে এটি তার দোষ। এজেন্সির পক্ষে কি আগে থেকে এটা জানা সম্ভব? কিন্তু এমন কাজে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি। তবে আমাদের কেউ গুরুতর অভিযোগ করলে অবশ্যই আমরা দেখবো।’

এজেন্সির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গত ৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে হজ ফ্লাইট। এ পর্যন্ত ২০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আমলে নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এস আবরার ট্রাভেলস ১১ জুনের ১০৬টি বিমানের টিকিট বুকিং দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। অভিযোগ পেয়ে কোনো খোঁজ না পাওয়ায় মন্ত্রণালয় গত ১২ জুন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। মতিঝিলের রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্সের এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ফোন করলেও কেউ এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

পুরানা পল্টনের সাফওয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের বিরুদ্ধে একজনের কাছ থেকে চার লাখ ৮২ হাজার টাকা নেওয়ার পর তার জায়গায় অন্য একজনকে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল হককে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, নাজমা আক্তার নামে একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এস.এম ফরহাদ ট্রাভেলস (লাইসেন্স নং-১১৩৩) থেকে তার প্রাক নিবন্ধন করে প্রতারণা করা হয়েছে। যা হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১ এর পরিপন্থী।

একই দিনে অন্য দুটি এজেন্সির বিরুদ্ধে অযাচিতভাবে বিমানের টিকিট বাতিল করার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় মোহাম্মদপুর হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস ও সাউথ এশিয়ান এয়ার বাংলাদেশকে।এদের মধ্যে মোহাম্মদপুর হজ ট্রাভেলস ১৩২টি ও সাউথ এশিয়ান এয়ার ৫৭টির বুকিং করা টিকিট বাতিল করেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, এর ফলে হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এ কারণে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আর কিবলা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে সৌদি এয়ারলাইন্সের ১০৭টি টিকিট বাতিল করে হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন সৃষ্টির অভিযোগ করা পাওয়া গেছে। পরে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. কেফায়েত উল্লাহকে কেন এমনটা হলো এজন্য কারণ দর্শাতে বলা হয়।

এদিকে বন্ধু এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ভিন্ন অভিযোগে নোটিশ দেয় মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, হাফিজুর রহমান নামের একজন ব্যক্তি স্ত্রীসহ হজে যাওয়ার জন্য ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও হজে নিতে পারছে না। কারণ এই দম্পতির কাছ থেকে টাকা নিলেও কৃষিবিদ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস তাদের বন্ধু এয়ার ইন্টারন্যাশনালের নামে প্রাক নিবন্ধন করে। এমন অবস্থায় দিশেহারা দম্পতি মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়।

অন্যদিকে লাইসেন্স নেই তবুও হজের জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগে কৃষিবিদ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আল-মুজদাফিলা এভিয়েশন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মক্কাগামী হজযাত্রীদের সঙ্গে মাত্র চারজন মদিনাগামী হজযাত্রী পাঠায়। এমন কার্যক্রমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিঘ্ন হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ দেয় মন্ত্রণালয়।

এদিকে টিকিট বিলম্বে বুকিং দেওয়া, বুকিং দেওয়ার পর হঠাৎ বাতিল করা, মক্কা-মদিনার রুট নিয়ে নির্দেশনা অমান্য করায় মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় সৌদি দূতাবাস। পরে হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ৩৫৯টি এজেন্সি ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। এতে অনিয়মে জড়িত এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নির্ধারিত ছকে এজেন্সির নাম, মোট হজযাত্রী, কতজন কোন এয়ারলাইন্সে যাবে, কোন তারিখে ফ্লাইট, রিজার্ভ করা আসনের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্যও বলা হয়। এছাড়াও নয়া পল্টনের মিকাত ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ও নর্দ্দার মীর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসকে হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত সময় বিমানবন্দরে রিপোর্ট না করানোর অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, রিপোর্ট না করায় যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে।  আর গাউস-এ-পাক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সময়ে হজক্যাম্পে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হওয়া, নির্ধারিত সময়ের পরে ইমিগ্রেশন করানো, সেন্ট্রাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মালিকের বিরুদ্ধে হজযাত্রীকে নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে হজক্যাম্পে উপস্থিত করার অভিযোগ করা হয়। এছাড়া উত্তরা মডেল টাউনের আজমল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে এরশাদ আলী নামের একজনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ২১ হাজার টাকা নিয়েও হজে না পাঠানোর অভিযোগ এনে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, এটা আইনের দৃষ্টিতে প্রতারণার শামিল।

নয়াপল্টনের রিভার ভ্যালি ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ ওঠে। ২০ জন হাজীর জন্য মদিনার হোটেল বুকিং করা ২৫ জুনের। কিন্তু তাদের ২৪ জুন সৌদি আরব পাঠানো হয়। ফলে হোটেল খালি না হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাজীদের বাইরে বসে থাকতে হয়। 

অন্যদিকে চট্টগ্রামের আন্ধারকেল্লার হক ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসকে দুই হজযাত্রীকে আল ইমাম হক কাফেলায় বদলি করলেও তাদের নিবন্ধনের টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। এতে নতুন করে টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটে তাদের হজে যেতে হয়েছে।

পুরানা পল্টনের বাব-ই-মদিনা নামের একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। মোতালেব হোসেন নামের একজনের অভিযোগ থেকে জানা যায়, পাঁচজনকে রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে হজে নেওয়ার কথা বলে ১৫ লাখ টাকা নেওয়া হলেও তাদের হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করেনি এই এজেন্সি। 

অন্যদিকে সৌদি আরবে ভিক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়া মতিয়ার রহমান ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ধাঁনসিড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। মতিয়ারের এমন কাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সাবিবুল জান্নাত এয়ার ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে তিনজনের কাছ থেকে ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা নিলেও এদের হজে পাঠাতে না পারার অভিযোগে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। 

অন্যদিকে এয়ার কানেকশন ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরসকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া ২৫০০ হাজীর হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে বলে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। পরবর্তী সময়ে চিঠিটি রিসিভ না করে তা প্রত্যাহার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এমন প্রতারণার অভিযোগে কেন জামানত বাজেয়াপ্তসহ লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।

এসব বিষয় নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের (উপসচিব) আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনকে একাধিকবার ফোন করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি হজ অনুবিভাগে কাজ করছেন।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে