Dr. Neem on Daraz
Victory Day

টিকা নিয়ে কাটছে না শঙ্কা


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৪:৫২ পিএম
টিকা নিয়ে কাটছে না শঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে দেশে পৌঁছাবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা কোভিশিল্ড। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। প্রথমধাপে কারা টিকা পাবে সে তালিকাও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবু টিকা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে মানুষের মধ্যে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় অনেকেই বলছেন, তারা টিকার ব্যাপারে আগ্রহী নন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নিয়ে যদি মানুষের শঙ্কা দূর করতে না পারে তাহলে এ কাজে আশাব্যাঞ্জক  ফল হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সব টিকাতেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যতিক্রম নয়। তবে এখন পর্যন্ত এ টিকার বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে যতটুকু সাইড এফেক্ট দেখা গেছে তা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। ভারতে এ টিকার প্রয়োগে নজর রাখছে বাংলাদেশ। সেখান থেকেও অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে।

গত ১৭ জানুয়ারি ভারতে করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচির প্রথম দিন ১ লাখ ৯১ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে। প্রথম দিনে প্রায় তিন লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে মানুষের দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

এদিকে, ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, টিকা নেওয়ার পর হালকা গা ব্যথা, সামান্য জ্বর, চুলকানি, টিকা দেওয়ার স্থান ফুলে উঠা, ঠান্ডা লাগা, বমি ভাব, মাথা ব্যথা, অসুস্থ বা ক্লান্তিবোধ করার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। টিকা নেওয়া প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দিতে পারে। পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরা, শরীরে ফুসকুড়ি উঠার মতো পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এক শতাংশের মধ্যে। মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে যা ঘটতে পারে তা হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা মারাত্মক জ্বর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিতরণ বিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার দুই থেকে তিন শতাংশের মতো দেখা গেছে। তবে যে কোনো টিকার ক্ষেত্রেই মাইল্ড থেকে মডারেট বা সিভিয়ার সাইড এফেক্ট হতে পারে। টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এটাকে আমরা বলি, আফটার ইফেক্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন।

বাংলাদেশে শিশু ও বড়দের যে টিকা দেওয়া হয় সেখানে এনাফাইলেক্সিস বলে একটা কথা রয়েছে। এটি একটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া। তবে এর আবার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। টিকাদান কেন্দ্রে যারা থাকবেন, তাদের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে হবে। ভারতের টিকা প্রয়োগের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। ওখানকার পরিস্থিতি আমাদের জন্য ট্রায়ালের মতো। সেগুলো দেখার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও করোনা টিকা বিতরণ কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমার মনে হয় খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা থাকবে। যে কোনো ওষুধের ক্ষেত্রেই এ আশঙ্কা থাকে। মোবাইল টিম থাকবে। টিকাদান কেন্দ্রে জরুরি কোনো ওষুধ লাগলে দ্রুত তা যোগাড় করার ব্যবস্থাও থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেছেন, মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে বিভিন্ন কারণে শঙ্কা রয়েছে এবং এটা থাকবে। সেরাম ইন্সটিটিউট এই টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল করেছে সীমিত আকারে। আমাদের দেশেও একটা সীমিত আকারের ট্রায়ালের দরকার ছিল। এর সাইড এফেক্ট কী হবে সেটা দৃশ্যমান নয়। মনে হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকা নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে। একজন মানুষেরও যদি মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তখন হয়তো পুরো কার্যক্রমই বন্ধ হয়ে যাবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই। মানুষের শঙ্কা কাটাতে স্বাস্থ্য বিভাগের আরো বেশি করে প্রচার  চালানো উচিত। এখানে ঘাটতি রয়েছে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের এ সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার সময় আরো সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত। যে কোনো ভ্যাকসিন দিলেই হালকা জ্বর বা ব্যথা হয়, এটি মানুষকে বোঝাতে হবে।

গণমাধ্যমকর্মী আমীন আল রশীদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশে করোনার টিকা আসবে। সরকার বিনামূল্যেই দেবে। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ ও সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ টিকা নেবেন। কিন্তু দেখবেন, এর বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী সুযোগ থাকার পরও টিকা নেবে না। তার এই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেছেন অন্তত ১০ জন। নয়জনই টিকা নেব না বলে মন্তব্য করেছেন।

মানুষের মধ্যে শঙ্কা কেন জানতে চাইলে আমীন আল রশীদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ইতিবাচক অর্থে একটু ডেমকেয়ার। আর এই নির্লিপ্ত ভাবের কারণে ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার ভয়ানক অবস্থা হলেও দেখা যাবে লোকজন টিকা নেবে না। আবার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার কারণেও দেখা যাবে অনেকে নিতে আগ্রহ হারাবে। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়েও এমনটা হয়েছে।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে