Dr. Neem on Daraz
Victory Day
সংবাদ সম্মেলনে মা নাসিমা আক্তার

ব্যবহার দিয়েই সবকিছু করার চেষ্টা করতেন সিনহা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২০, ০৩:০৯ পিএম
ব্যবহার দিয়েই সবকিছু করার চেষ্টা করতেন সিনহা

ঢাকা : কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা সিনহা মো. রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার বলেছেন, 'ও (সিনহা) মেজর না কী তা কখনও পরিচয় দিত না। তার যে ব্যবহার তা দিয়েই সবকিছু করার চেষ্টা করত। ওর কাজগুলোকে আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করি। তবে আমি বলতাম, বাবা তুমি যে মেজর তা তুমি পরিচয় দাও না কেন? সিনহা বলত, একটা মানুষের যে মানবিক গুণাবলি থাকে তা দিয়েই যদি মানুষ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে এর চেয়ে আর কী বড় হতে পারে।’

তিনি বলেন, তখন আমি বলতাম, বাবা তুমি যে এত এত কোর্স করেছ। সেনাবাহিনীতে কাজ করেছ? সিনহা বলেছিল মাম্মি পাওয়ার। পাওয়ার কী? মানুষের হৃদয়ের মধ্যে থাকব। কাজ করব। মানুষের জন্য কাজ করব। সেটা বলতে হবে কেন? সিনহা আসলে বলায় নয় কর্মে বিশ্বাসী ছিল।

সোমবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় (সেক্টর-১৪, রোড-১৭, বাড়ি-৭৭) তার সঙ্গে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) সদস্যরা সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নাসিমা আক্তার।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে পজিটিভ ছিল। সবসময় ‘বি’ পজিটিভ। আমিও ‘বি’ পজিটিভের পক্ষে আছি। আপনাদের সাংবাদিকদের লেখা আমি পড়ছি। আমার হৃদয়টা ছিঁড়ে যাচ্ছে। দেশের সুন্দর পরিবেশ আপনারাই আনবেন। আমরাই আনব। আমাদের যে ছোট ছোট বাচ্চা আছে আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা সবাই সহযোগিতা চাই। এই যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডটি ঘটল- এ ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়। প্রত্যেক মায়ের প্রতিনিধি হয়ে বলব ‌‘এই ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়। সবাই যেন সচেতন থাকেন।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তান হারা এই মা( নাসিমা আক্তার) বলেন, আমার ছেলে দেশকে নিয়ে অনেক ভাবত। আমাকে বলত, আমরা যদি দেশে ভালো কিছু রেখে যাই তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটা অনুসরণ করবে। আমার ছেলের প্রত্যেকটি কাজে আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। ভেতরে ভেতরে আমি খুবই গর্ববোধ করতাম। ও শুধু কাজ করতেই চাইত।

তিনি আরও বলেন, আত্মীয়-স্বজন বলত ও কী কাজ করে? ওর কি কোনো টাকা-পয়সা আসে না? কিন্তু সিনহা আসলে সবসময় ক্রিয়েটিভ কাজ করতে চাইত, সবসময় সারপ্রাইজ দিতে চাইত কাজের মাধ্যমে। ও বলত, আমি আমার মনের খোরাকের জন্য কাজ করি যাতে মানুষ উপকৃত হয়। একটা ডকুমেন্টরি করছি এখনও বলার মতো কিছু হয়নি, যখন হবে তখন বলব। ‘আমি শতভাগ আস্থা নিয়ে বসে আছি, আমার ছেলে কাজ করছে। কাজ শেষে ফিরবে।’ উল্লেখ করেন তিনি।

নাসিমা আক্তার বলেন, সিনহা খুব স্পিডে গাড়ি চালাত। কাজ শেষে সাধারণত বাসায় ফিরত। সেদিন বাসায়ও ফিরছিল না; ফোন ধরছিল না ব্যাকও করছিল না। রাত ১২টা আনুমানিক। এক ভদ্রলোক ফোন করলেন। বললেন সিনহা কী হয়, কী করে। কয় ছেলেমেয়ে। উত্তর দিয়ে জানতে চাইলাম এত প্রশ্ন করছেন, আপনি কে? তখন তিনি বলেন, আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি টেকনাফ থানার ওসি। ভাবলাম ছেলে তো স্পিডে গাড়ি চালায়। আবার কিছু হলো কিনা।

‘বললাম, আমার ছেলে তো ফোন ধরছে না ওকে একটু দেন। ফোনটা বাজছে, কিন্তু ধরছে না। ওসি বলে হ্যাঁ একটু দূরেই আছে, দেয়া যাবে। বলেই রেখে দেন। কিন্তু বারবার ফোন দেই আর কেউই ফোন ধরে না। একসময় দুই মেজরের নম্বর দিয়েছিল সিনহা। ফোন দিলাম মেজর মোহসিনকে। জানতে চাইলাম সিনহার খবর। বললাম ফোন ধরছে না। পরে জানাল টেনশন কইরেন না। সিনহা ঠিক আছে। পরদিন ১০টা ১১টা বাজে। বাসায় পুলিশ আসে। উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। তারা মেজর সিনহার বাসা কিনা জানতে চেয়ে খোঁজ নেয়। রাজনীতির সাথে জড়িত কিনা, দেশের বাড়ি কোথায় জানতে চায়। বলি রাজনীতিতে জড়িত নয় শতভাগ নিশ্চিত। ওরা ভালো ব্যবহার করে চলে যায়। তারাও কিছু জানায়নি।’

সিনহা হত্যার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে সিনহার মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট, প্রধানমন্ত্রী আমার সাথে কথা বলেছেন। সেনাপ্রধান, নৌবাহিনী প্রধান খোঁজ নিয়েছেন আশ্বাস দিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার নুরুল আফসারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মেজর সিনহাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে

সংবাদ সম্মেলনে রাওয়া চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, মেজর সিনহা মো. রাশেদকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকেও প্রত্যাহার করতে হবে।

তিনি বলেন, মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে বিচার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত হয় সেটি আমরা চাই।

তিনি টেকনাফ থানার সংশ্লিষ্ট সব পুলিশ সদস্যের অস্ত্র সিজ (জব্দ) করার দাবি জানিয়ে বলেন, এর পাশাপাশি যাতে এটিই বিচারবহির্ভূত শেষ হত্যাকাণ্ড হয়, আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য. ঈদুল আজহার আগের দিন গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও সাবেক এসএেএফ সদস্য সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

পরে গত বুধবার (৫ আগস্ট) তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করলে বিচারক মামলাটি টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। পাশাপাশি র‌্যাব ১৫-এর কমান্ডারকেও তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
পরে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) বিকেলে এ মামলায় ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তা না-মঞ্জুর করে সবাইকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে সবাই কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।

আগামীনিউজ/এমজামান

 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে