Dr. Neem on Daraz
Victory Day
বিশেষজ্ঞদের মতামত

রোগতাত্ত্বিকভাবে করোনার ভয়ঙ্কর সময় বিবেচনা কঠিন


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবিদক প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২০, ০১:৫৮ পিএম
রোগতাত্ত্বিকভাবে করোনার ভয়ঙ্কর সময় বিবেচনা কঠিন

করোনা সংক্রামণে বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রথম শনাক্তের এক থেকে দেড়মাস সময় কিংবা তিনমাস পর্যন্ত পরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে করোনা সংক্রমণ।  কোনো নির্দিষ্ট সীমা পরিসীমা নেই। এখানে কেউ আবার পুরো এপ্রিল মাস এমনকি তিন মাস জুড়েই সংক্রামণের বিস্তারের ও আশঙ্কা করছেন। আধিক্য বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক কিংবা দেশজুড়ে লকডাউনের। বিশেষজ্ঞদের কারো কারো মতে দ্রুত নমুনা সংগ্রহ করে পজেটিভদের আইসোলেটেড করে ফেলাকে জোড় দিচ্ছেন। 

বিশ্বজুড়ে মহামারির আকার ধারণ করা করোনা বাংলাদেশে বলতে গেলে অনেকটা সহনীয় পর্যায়েই ছিলো। তবে শনাক্তের মাসখানেক পর এদেশেও স্বরূপে দেখা দিচ্ছে কোভিড-১৯। গত তিনমাসে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়- প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর রোগীর সংখ্যা বেড়েছে গাণিতিক হারে। তখনই সীমিত আকারে দেখা দেয় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। এর পরের ধাপে আক্রান্তের সংখ্যা ছড়াতে থাকে জ্যামিতিক হারে। এই পর্যায়ে শুরু হয় গণসংক্রমণ। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন আগামী নিউজ ডটকমকে জানান,  বিশ্বব্যাপী আজ করোনা ভাইরাস নিয়ে সবাই আতঙ্কিত। বর্তমানে এর সংক্রমণ এপিডেমিক নয় এখন প্যানডেমিক। এর ৪টি স্টেজ রয়েছে। প্রথমত- প্রথম যারা দেশে ঢুকলো, দ্বিতীয়ত- তাদের কন্টাক্টে যারা আসলো, তৃতীয়ত- তাদের কন্টাক্টে যারা আসলো এবং চতুর্থত- এদের কন্টাক্টে যারা আসলো। তবে আমাদের দেশে আমরা এদের নির্দিষ্ট সংখ্যা আইডেন্টিফাই করতে পারছি না।

তবে আমাদের দেশে এখনো চতুর্থ পর্যায়ে আসেনি। যদি আমরা এখনই প্রথম থেকে তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রামীতদের চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে চতুর্থ স্টেজে চলে যাব। তখন একে নিয়ন্ত্রণ করা দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। কিছুদিন আগেও আমরা কেস পেয়েছি ২০-২৫ টি। এখন এর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। এগুলোকে আমরা বলছি ল্যাবরেটরী কেস । এছাড়াও অনেক কেস রয়েছে যা আমরা এখনো আইডেন্টিফাই করতে পারিনি। পারিনি ল্যাবরেটরী (পজেটিভ) টেস্টের আওতায় আনতে পারিনি।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমরা যদি দেশে এখন ২৫০ করোনা আক্রান্ত (পজেটিভ) ধরে নেই। এদের প্রতি জনের মাধ্যমে যদি ২ জনেও করোনা  সংক্রামিত হয় তাহলে এর সংখ্যা হবে ৫০০ জন। এভাবে ৫০০-১০০০, ১০০০-২০০০, ২০০০-৪০০০ জনে দ্রুত ছড়িয়ে পরবে। যেটা  ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ বা করোনা ভয়াবহের শঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাইরাসটি নতুন  এবং গতি প্রকৃতি পরিবর্তন হওয়ায় আমাদের শঙ্কা কতো দিন বা কতো মাসের তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবেও সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ হলো আমরা যদি এর প্রতিকারে এখনই ব্যবস্থা না নেই তাহলে এর ব্যাপ্তি বেড়ে যাবে। আমরা যদি প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা নেই তাহলে ধীরে ধীরে কমে আসবে। এক্ষত্রে সংক্রামণের হার এবং সময় দুটোই কমে আসবে। এক সময় নির্মুল হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, এই মূহূর্তে আমাদের উচিত বেশি বেশি পরীক্ষা করে পজেটিভ রোগী চিহ্নিত করে আইসোলেটেড করা। এখন মূল কথা হলো আইসোলেটেড করার কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে ২-৪, ৪-৮, ৮-১৬ জিয়োগ্রাফীক্যাল মাল্টিফিবেশন ঘটতে থাকবে।

অপরদিকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের (আইইডিসিআর) সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. এএসএম আলমগীর আগামী নিউজ ডটকমকে বলেন, করোনা ভাইরাসটি নতুন এর গতি প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা এখনো সঠিকভাবে জানতে পারিনি। এমতাবস্থায় এর সংক্রমণে আগামী এক সপ্তাহ বা একমাস কিংবা তিন মাস নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। কারণ, কোনো দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের পর থেকে ৩-৬ সপ্তাহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার তিন মাস ও লেগে গেছে এর প্রতিকারে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা এখন বেকায়দায় পড়ে গেছি দুটি কারণে- এক গত ২৪ তারিখে ছুটি হওয়ায় কিছু মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন, দ্বিতীয়ত সম্প্রতি গার্মেন্টস খোলার ঘোষণায় অনেক মানুষ ঢাকায় এসেছে। আবার কিছু চলেও গেছেন।  এগুলো আমাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

তিনি অরো বলেন, আমরা যদি বাড়িতে থাকি তাহলে কমিউনিটিতে ট্রান্সমিশন কম হবে। আর যদি বাহিরে চলাফেরা করি তাহলে দ্রুত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হবে। আমারা এখনও আমাদের দেশের  মানুষকে বাড়িতে আটকিয়ে রাখতে পারছি না। তারা বাড়িতে থেকে বোরিং ফিল করছেন, সময় পেলেই বাইরে যাচ্ছেন। আমরা এখনই সাবধান না হলে ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা।

তিনি আরো বলেন, রোগতাত্ত্বিকভাবে প্রথম করোনা শনাক্তের ১ বা তিন সপ্তাহ বলা কঠিন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তথ্য উপাত্য বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে , তিন সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত এর ভয়াবহতা তৈরি হতে পারে।

আগামীনিউজ/তরিকুল/বিজয়

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে