Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণেই বাংলাদেশের মিডিয়া


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ১১, ২০২০, ১০:২৪ এএম
পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণেই বাংলাদেশের মিডিয়া

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের মিডিয়া বা গণমাধ্যম রাজনীতি বা দলীয় ছত্রছায়ায় লালিত পালিত হতো। সে সময় একজন সাংবাদিককে ভাবা হত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে, পেশাগত পরিচয়ের চেয়ে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের ভূমিকাই ছিলো মুখ্য। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে হাতেগোনা ৪-৫টি পত্রিকা ছিলো। যার প্রকাশ হতো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়কালে, দেশে অনেকে সরকারের সঙ্গে  ভালো সম্পর্ক ও সান্নিধ্যে পুঁজিপতি হয়ে উঠেন। তাদের অর্জিত বিত্ত সম্পদের প্রসার ও রক্ষার জন্য ওই সময়ে অনেকে পত্রিকার মালিক হন। মূলত সেই সময়কাল থেকেই সমাজপতি ও পুঁজিপতিদের দখলে মিডিয়ার প্রসার ঘটেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখনো সমাজের ধনী শ্রেণীর সম্পদের অবাধ প্রসার ও সংরক্ষণেই একেরপর এক মিডিয়ার মালিক হয়েছেন। নিজেদের তৈরি করেছেন মিডিয়া মোঘল হিসেবে।

বাংলাদেশে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এরকম বিভিন্ন প্রকারভেদের পত্রিকা রয়েছে এবং দেশের সকল প্রধান জেলাসমূহে এসব পত্রিকা পাওয়া যায়। তবে শুধুমাত্র জেলাভিত্তিক পত্রিকাও ছাপা হয়ে থাকে। 

তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিবন্ধন শাখা থেকে সংবাদপত্রের নিবন্ধন প্রদান করা হয়। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিবন্ধিত পত্র-পত্রিকার সংখ্যা ৩০৬১টি। এর মধ্যে ১২৬৮টি ঢাকা থেকে এবং ১৭৯৩টি অন্যান্য জেলা থেকে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে দৈনিক ১২১৩টি, অর্ধ-সাপ্তাহিক ৩টি, সাপ্তাহিক ১১৮১টি, পাক্ষিক ২১৩টি, মাসিক ৪১০টি, দ্বি-মাসিক ৮টি, ত্রৈ-মাসিক ২৮টি, চর্তুমাসিক ১টি, ষান্মাসিক ২টি এবং বার্ষিক ১টি পত্রিকা রয়েছে।

অপরদিকে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ৪৪টি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পাদনা: বিটিভি,বিটিভি চট্টগ্রাম, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং সংসদ বাংলাদেশ।

ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পাদনা: এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, একুশে টেলিভিশন, এনটিভি, আরটিভি, বৈশাখী টিভি, বাংলাভিশন, দেশ টিভি, মাই টিভি, মোহনা টিভি, মাছরাঙ্গা টিভি, চ্যানেল নাইন, জিটিভি, এশিয়ান টিভি, এসএ টিভি, বিজয় টিভি, দীপ্ত টিভি, বাংলা টিভি, নাগরিক টিভি, আনন্দ টিভি, এটিএন নিউজ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, সময় টিভি, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর, একাত্তর টিভি, যমুনা টিভি, নিউজ টুয়েন্টি ফোর, ডিবিসি নিউজ, গান বাংলা এবং দুরন্ত টিভি।  তবে নানা কারণে সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে -চ্যানেল ওয়ান, সিএসবি নিউজ, দিগন্ত টেলিভিশন এবং ইসলামিক টিভি। এছাড়াও বেশ কিছু চ্যানেল নানা কারণে সম্প্রচারে আসতে পারেনি।

২০০৬ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি এফএম রেডিও স্টেশন হিসেবে রেডিও টুডে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এফএম রেডিও স্টেশনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭টিতে। এর মধ্যে ১৫টি রয়েছে কমিউনিটি রেডিও। এরমধ্যে মাত্র পাঁচটি রেডিও স্টেশন নিয়মিত সংবাদ প্রচার করে থাকে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিডিও প্রকাশের সবচেয়ে বড় অনলাইন মাধ্যম ইউটিউব। অনেকে আবার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল খুলে বসেছে। কিন্তু এরও নেই কোনো অনুমোদন। সময় দেন না এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বর্তমানে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ এটি যে এখন বিনোদন, খবর, শিক্ষা, বিপণন ও আয়ের বড় উৎসও। 

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব মতে, সর্বশেষ গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে শুধু মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ৯ কোটি ৩৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে দেশের কয়েক হাজার মানুষ ইউটিউবে কাজ করছেন। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে কতজন ইউটিউবার রয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।

দেশে ইউটিউব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিডির তথ্য মতে, বাংলাদেশে নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করছে এমন চ্যানেলের সংখ্যা বর্তমানে তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পত্রিকা হোক বা চ্যানেল সকল মালিকই নিজেদের প্রতিপত্তি জাহির করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছ  এই মিডিয়াকে। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে অসম প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগাচ্ছে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো। 

মার্কিন বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও লেখক নোয়াম চমস্কির মতে, গণমাধ্যমসমূহের প্রাথমিক কাজ হলো বিজ্ঞাপনদাতাদের নিকট অডিয়েন্সকে বিক্রি করা। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনদাতারা গণমাধ্যমকে টাকা দেয় বিজ্ঞাপন প্রচার বা ছাপার জন্য আর সেই বিজ্ঞাপন দেখে ব্যক্তি বা ভোক্তা পণ্য ক্রয় করে। বিজ্ঞাপনই গণমাধ্যমগুলোর আয়ের প্রধান উৎস। তাই তারা বিজ্ঞাপনদাতা বা কর্পোরেট-কোম্পানিগুলোর স্বার্থই বড়ো করে দেখে, পাঠকের বা জনগণের স্বার্থ চিন্তা করা তাদের কাছে সেকেন্ড প্রায়োরিটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজ্ঞাপন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজার কত বড় তা নিয়ে কোনো জরিপ নেই৷ বাংলাদেশে ৪-৫ হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বাজার আর সরকারি বিজ্ঞাপনের বাজার প্রায় ৪-৫ শত কোটি টাকার।

আগামীনিউজ/টিআইএস/এমআর 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে