Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পুঁজিপতিদের কৌশলগত শোষণ


আগামী নিউজ | ড. নিম হাকিম প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ১২:০৯ পিএম
পুঁজিপতিদের কৌশলগত শোষণ

পুঁজিপতিদের বিশ্বেও সাহায্য-সহযোগিতায় উৎপাদিত কৃষি উপকরণের অধিক মূল্যেও কারণে কৃষিকাজ অলাভজনক পেশায় পরিণত হচ্ছে। কৃষি উৎপাদন ব্যবহৃত হওয়ার ভয়াবহতা শুধু কৃষি প্রধান দেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই আগামী দিনে অবশ্যই সংকট সৃষ্টি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কৃষকের উৎপাদিত দ্রব্য-সামগ্রীর বিনিময় মূল্য, উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তাই অধিক উৎপাদন করা সত্ত্বেও কৃষকরা আজও দারিদ্রোর অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারছে না।

অতীত যুগের জমিদারী প্রথায় খাজনার জন্য কৃষকের ওপর যে শারীরিক নির্যাতন চলত আজ গণতন্ত্রনামী পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় তার পরিবর্তে চলছে অর্থনৈতিক নির্যাতন। আর আইন-আদালত পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শারীরিক নির্যাতন অমানবিক বিধায় বিশ্ব মানবতা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক শোষণে যে দরিদ্র জাতি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে, তাদের জীবনে যে নেমে এসেছে অভাব-অনটন-লাঞ্ছনা, তা একবারও কেউ ভেবে দেখছেন না। পুঁজিবাদী বিশ্বের সৃষ্টি করা গণতন্ত্র নামের অর্থনৈতিক নির্যাতনমূলক ব্যবস্থার বড় শিকার হলো বিশ্বের কৃষককূল। সমগ্র বিশ্বের খাদ্য যোগানকারী এবং সভ্যতার উন্নতির মূল চালিকাশক্তি কৃষক-সমাজ যে আজ ধ্বংস প্রায় সে দিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। যেহেতু তারা সমগ্র জীবনকূলের জীবনীশক্তি খাদ্যের যোগান দিচ্ছে, তাই তাদের ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। তারা বেঁচে থাকবে শুধু সভ্যতার আধুনিক দাস হয়ে! এই হলো পুঁজিপতিদের ধ্যান-ধারণা। দাসের যেমন স্বাধীনতা থাকে না তেমনি কৃষকেরও তাদেও উৎপাদিত দ্রব্য-সামগ্রীর দর নির্ধারণের ক্ষমতা নেই। 

অজ্ঞতার কারণে তারা উৎপাদন খরচের হিসাব পর্যন্ত রাখতে পারে না। তাদের ধারণা বাঁচার জন্যই উৎপাদন, বিলাসিতার জন্য নয়। যারা কৃষকের উৎপাদিত পণ্য-সামগ্রীর ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত, তারা উৎপাদন খরচের ধার ধারে না, যত কমে কিনে যত বেশি দামে বিক্রি করা যায়, এটাই তাদের চিন্তা-চেতনা। তাদের মুনাফার প্রয়োজন, এতে কে ক্ষতিগ্রস্ত হলো তা তাদের দেখার বিষয় নয়। উৎপাদনের সাথে জড়িত না থেকেও ফরিয়া, ব্যবসায়ী, শ্রেণি এবং মধ্যস্বত্ব ভোগীরা ফায়দা লুটছে অবাধে, কারণ তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। উৎপাদনকারীকে বাধ্য হয়েই এদের কাছে পণ্য-সামগ্রী বিক্রি করতে হয়। এরা পুঁজি নিয়ে শুধু মহাজন সেজে গদিতে বসে থাকলেই হলো। 

বিশ্বের কৃষক-সমাজ তাই আজ পরাধীন, যেন আপন ঘরেও তারা প্রবাসী। পুঁজিবাদী বিশ্বের সৃষ্টি করা তথাকথিত গণতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য কৃষকদের কাছে অজ্ঞাত। কৃষকের সন্তান পড়ালেখা শিখে সাহেব হলে কৃষি কাজ করবে কে? তাই সুকৌশলে অর্থনৈতিক শোষণের মাধ্যমে কৃষককে শুধু কৃষকই বানিয়ে রাখা হচ্ছে। তারা যেন কৃষক, মানুষ নয়। একার শ্রমে সংসার চলে না, তাই তার শিশু সন্তানটিকেও কাজে নিয়ে যেতে হয়। যার বাঁচার জন্য লড়াই করতে হয় সারাক্ষণ, তার আবার পড়ালেখা কিসের? শিক্ষা-দীক্ষা তাই আজ কৃষকের কাছে বিলাসিতা বৈ কিছু নয়। ঝড়-বৃষ্টি আর প্রখর রোদ উপেক্ষা করে ছুটে যেতে হয় জীবিকার সন্ধানে। বিত্তহীনদের জীবিকা অন্যের করুণার উপর। যেদিন বদলা চলে, সেদিন আধ-পেটা, না চললে ধার-দেনা বা অনাহারে। কৃষক যখন শ্রম দিতে বেগিড়য়ে যায় তখন পথের দিক চেয়ে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে অপেক্ষা করে, যেন নীড়ে অপেক্ষমাণ পাখির বাচ্চার মত আহারের সন্ধানে ছুটে যাওয়া মা পাখিটির জন্য অপেক্ষা। জীবনো পায়ের কোন নিশ্চয়তা নেই তাদের। অনেকের যুবতী মেয়ের খোলা পা’টিতে সে জানে না কত পথ হাঁটতে হবে তাকে। জীবন যেন শুধুই যন্ত্রণা, নয় বিলাসিতা।

কঙ্কালসার কৃষক-কৃষাণী আর পুষ্টিহীন হাড্ডিসার শিশুদের করুণ চিত্র দেখলে মোনালিসার বিখ্যাত নির্বাক চিত্রের কথা মনে হবে না। লিওনার্দ্যে দ্যা ভিঞ্চির কল্পনার আর দরিদ্র বিশ্বের বাস্তব চিত্র এক নয়। দরিদ্র বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে তাকিয়ে আছে সাহায্যের অপেক্ষায়। বন্ধু হিসেবে ছুটে যেতে হবে ওদের পাশে মানবিক সাহায্য নিয়ে, বিশ্বের জনগণ জানবে আমি বড় দাতা! ওরা না থাকলে আমি অনুগ্রহ করব কাকে? আমি মানবিক সাহায্যের নামে চুষে খাব ওদের রক্ত। আমি মেহনতি মানুষের সম্পদ কেড়ে নিয়ে গড়ব সম্পদের পাহাড়, তার ওপর বসে হ্যামিলনের বংশী বাদকের মত বাঁজাবো বাঁশি। দলে দলে ছুটে আসবে ক্ষুধার্ত মানুষ, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। 

নারী স্বাধীনতার নামে আমি ঘর থেকে বের করে আনব রমনীকূল, মর্যাদার পরিবর্তে ওদের উলঙ্গ করে নাচাব জনসম্মুখে। আনন্দ-উল্লাসে ভরে যাবে মন, আমি নরপিশাচের মত লম্বা দাঁত বের করে হাঁসবো, জীবিকার জন্যে নৃত্য, জীবিকা আমার কাছে, আমি থাকতে হে কৃষককূল, হে শ্রমিক, হে নর্তকী! তুমি না খেয়ে মরবে না। তোমাদের চরম অবস্থায় আমি পাশে দাঁড়াবই। বিনিময়ে তোমাদের শ্রম, তোমাদের দেহ, তোমাদের রক্ত! গণতন্ত্র? সমাজতন্ত্র? না রাজতন্ত্র, কোনটি? হায়রে গণতন্ত্রের আধুনিক সভ্যতার মানুষ! ক্ষুধার্ত শিশুর ক্রন্দন কি কখনও তোমাদের হৃদয় স্পর্শ করতে পেরেছে। আমরা শর্তযুক্ত ঋণ দেব, প্রযুক্তি আর উপকরণ আমাদের থেকেই কিনতে হবে যে দাম আমরা নির্ধারণ করব। এতে আমাদের ত্রিমুখি লাভ (১) প্রযুক্তি বিক্রি, (২) যন্ত্রপাতি বা উপকরণ বিক্রি, (৩) ঋণের সুদ। আমরা কত বড় দাতা বুঝলেন ভ্রাতা!

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে