Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আমরা এসব কী খাচ্ছি?


আগামী নিউজ | ড. নিম হাকিম প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০১৯, ১১:৩৬ এএম
আমরা এসব কী খাচ্ছি?

আমাদের জীবনই শুধু নয় সমস্ত জীবকূলের জন্য চারটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর তা হলোঃ খাদ্য (Food), পানি (Water), বাতাস (Air) ও জ্বালানি (Energy)। খাদ্য যদি নিরাপদ না হয়, পানি ও বাতাস যদি বিশুদ্ধ না থাকে আর জ্বালানী যদি স্বাস্থ্যসম্মত না হয় তবে বিপদ অনিবার্য। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে এই চারটি বিষয়ের প্রতি তেমন গুরম্নত্ব দেয়া হচ্ছে না। যেখানে মানুষ ক্ষুধার্ত, পানীয়জলের স্বল্পতা, সেখানে মানুষ বাতাস আর জ্বালানীর প্রতি কমই গুরম্নত্ব দিয়ে থাকে। বাচাঁর জন্য খাদ্যের প্রয়োজন কিন্তু সেই খাবার যদি হয় মরণ তাহলে মানুষ খাবে কি? পানির অপর নাম জীবন আর সেই জীবন যদি হয় মরণ তাহলে অবস্থা হবে কি? নিঃশ্বাস না থাকলে জীবন থাকবে না। খাদ্য না খেয়ে বেশ কিছুদিন বাঁচা যায় কিন্তু অক্সিজেন বা পরিশুদ্ধ বাতাস না হলে একমূহূর্ত কোনো প্রাণি বাঁচবেনা। জীবন চলে জ্বালানীতে আর সে জ্বালানী যদি দূষণমুক্ত না তাহলে জীবনের কি হবে?

জীবনের সাথে সম্পৃক্ত এই চারটি বিষয় নিয়ে এখন ভাববার সময় এসেছে টিকে থাকার স্বার্থে। সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন নয় কারণ তারা অদৃশ্যমান ভয়াবহ ক্ষতির কথা জানে না। রাষ্ট্রযন্ত্রও অনেক কারণে জনগণকে তা জানায় না। বিবেকবান মানুষ হিসেবে বর্তমানে জনস্বাস্থ্য যে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন তা চিন্ত্মা করেই আমার এ লেখা।

 

খাদ্য সামগ্রীঃ আমরা কি খাচ্ছি? সহজ কথার উত্তর হলো মানুষ হিসেবে যা খেয়ে জীবন রক করা যায়। আমরা প্রতিনিয়ত যা খাচ্ছি তাতে কি জীবন রক্ষা পাচ্ছে? এক কথার উত্তর হলো না। তাহলে কি খাব? এ প্রশ্নের উত্তর কঠিন তবে বিকল্প আছে। হয়তো তা আমাদের নাগালের বাইওে কিন্তু অসাধ্য নয়।

খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে আমরা যা প্রতিনিয়ত খাই তাহলো- ভাত বা রম্নটি, মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজি ইত্যাদি। এক সময় কথা ছিল ‘দুধে ভাতে বাঙ্গালী’ তার পর ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’ এর পর হলো ‘ডাল ভাতে বাঙ্গালী’ এখন ‘শাকভাতে বাঙ্গালী’। এই হলো আমাদের বর্তমান অবস্থা।

 

ভাত চাল থেকে হয়, আর চাল হয় ধান থেকে। মানুষ অনেক বেশী, ধান জন্মানোর জমি অনেক কম তাই কম জমিতে অধিক ধান জন্মায়ে সাড়ে পনের কোটি মানুষের মুখে অন্ন দেয়া প্রয়োজন। আর সেই কারণে অধিক ধান ফলাতে নব প্রযুক্তি জিএমও বা জেনেটিকেলী মোডিফাইট অর্গানিজম প্রযুক্তির আয়োজন। এই হলো এক কথায়, আমাদের বৈজ্ঞানিকদের ব্যাখ্যা। ভারতের একটি গবেষনায় দেখা গেছে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচের পানি দিয়ে উৎপাদিত হাইব্রিড ধানের চাউলে যা দিয়ে ভাত হয় তার ১২ কেজিতে যে পরিমান নিউট্রিন্ট আছে জৈবপদ্ধতিতে উৎপাদিত ৭ কেজিতে সে পরিমান নিউট্রিন্ট বিদ্যমান। অর্থাৎ হাইব্রিডের ১২ কেজি সমান প্রাকৃতিক বা জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ৭ কেজির সমান।

উৎপাদন মাত্রা আর পুষ্টি উপাদানের মাত্রার হিসাব কষলে বিষয়টি বোধ হয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। যখন হাইব্রিডাইজড বা জেনেটিকেলী মোডিফাইট যে কোন ফসল উৎপাদনে অবশ্যই প্রয়োজন হবে সেচের পানি, অধিকাংশ বিদেশী বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। অথচ এ পদ্ধতিতে উৎপাদনের জন্য যে সকল প্রযুক্তি, উপাদান ও উকপরণ প্রয়োজন তার কোনটিরই মালিকানা কৃষকের হাতে নেই, আছে শুধু শারীরিক শ্রম। অবশিষ্ট সব কিছুই তাকে টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আর সেই টাকাগুলো কোথায় যাবে? তা কৃষক জানে না। শ্রম ুদয়ে সে যা উৎপাদন করলো তাতে তার খাবার হয়তো জুটলো কিন্তু ফলাফল কি হলো? সে যে খাদ্য উৎপাদন করলো তাতে পুষ্টিগুন হলো প্রায় অর্ধেক। শ্রম নষ্ট হলো পুরোপুরি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা হলো তা সে মোটেও বুঝল না। ভূগর্ভ থেকে পানি তুলতে খরচ হলো অনেক টাকা, নেমে গেল পানির স্ত্মর, ফলে মরম্নকরন শুরম্নর প্রক্রিয়া হলো ত্বরান্বিত। টাকা খরচ করে কিনতে হলো রাসায়নিক সার তাতে জমি হয়ে গেল বন্ধ্যা, সার না দিয়ে আর কখনও ঐ জমিতে কোন ফসল ফলানো যাবে না। প্রশ্নটা হলো এমন যে, “আমার থেকে কিছু নিতে হলে কিছু দাও, ÿতির বোঝা তুমি বহ”। সার আর সেচ দিয়ে কৃষক ফলালো ফসল, দিল তাতে কীট দমনের জন্য বিষ। দমন হলো ফসল উঠলো কেটে ঘওে কিন্তু জীববৈচিত্রের কি হলো? কোথায় হারিয়ে গেলো- মাছ, ব্যাঙ, কচ্ছপ, শামুক, ঝিনুক, পাখী আরো অনেক অনেক কিছু। যারা মশা খেতে, কীট পতঙ্গ খেত, ইদুঁর মারতো, যে ইদুঁর ১০% ফসল নষ্ট করে। বিষাক্ত হলো পানি, তা আর গরম্ন ছাগল পশু পাখী কেন মানুষেরও পান করার উপায় নেই। মাটির গভীর থেকে পান করার পানি তুলে পান করছি তাতেও আর্সেনিক। মাটির গভীর থেকে পানি তুলে ফসল উৎপাদন তাতেও আর্সেনিক। খাদ্য শৃংঙ্খলের সাথে সে আর্সেনিক মানুষ ও ফসল ভোজী সকল প্রাণীর দেহে ছড়িয়ে পড়ল বিষ। জীবন হলো হুমকার সম্মুখীন।

মাছ খাব? কিভাবে? মাছে ছড়িয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। শুধুই কি তাই, মাছ সংরক্ষণের জন্য মাখা হচ্ছে ফরমালিন তা খাচ্ছি আমরা আর হয়ে পড়েছি রোগাক্রান্ত্ম নষ্ট হচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতা মানসিক ভাবে পঙ্গু হয়ে জন্ম নিচ্ছে আমাদের শিশু। বংশগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভয়াবহ বিষ। ভবিষ্যৎ বংশধরদের অবস্থা কি হবে তা কে জানে।

সমাজবিজ্ঞানী আর জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়েরা বোধ হয় এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন যে এর পরিণতি কি? সামাজিক অস্থিরতা আর অপরাধ প্রবনতার সাথে এর কোন সম্পর্কই বা আছে কিনা।

মাংস খাব? কি ভাবে খাব? মাংসের জন্য গরম্ন ছাগল করা হচ্ছে মোটা তাজা। মোরগ মুরগীকেও দেয়া হচ্ছে তৈরী খাদ্য যাতে মিশানো হচ্ছে এন্টিবায়োটিক আর গ্রোথ হরমোন। পক্ষান্তরে তো তা আমরাই খাচ্ছি। এই এন্টিবায়োটিক, বিষাক্ত ক্লোরিন, ফরমালিন আর হরমোন তো আমাদের দেহেই যাচ্ছে। আর এর প্রভাবে আমাদের যা হচ্ছে তা হলো ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি বিনষ্ট এবং ক্যান্সার। ুডব ধৎব ফধহপরহম রিঃয :যব ফধহমবৎড়ঁং ফরপবংচ্ অর্থাৎ “বিপদ সংকুল রোগের সাথে নৃত্য”।

সবকিছুর পরে খাবার যখন টেবিলে আসলো তখন প্রশ্ন হলো কি দিয়ে রান্না হলো। মানুষের খাদ্য অনুপোযোগী তেল দিয়ে রান্না, কৃত্রিম রং মিশানোর যে কোন খাদ্যমূল্য বিনষ্ট হয়ে পরিণত হচ্ছে ঔঁহম ভড়ড়ফ এ যেমনটি আসে আমাদের ই-মেইল হিসেবে আসে ঔঁহম ভড়ড়ফ বক্সে।

কিছু উদাহরণ দিয়ে এ বিষয়ের ইতি টানতে চাই :

১। একটি বাস্ত্মব ঘটনা তা হলোঃ গরম্ন মোটা তাজা করার জন্য গ্রোথ হরমোন আর এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়েছে যখন গরম্নটি পায়খানা করলো তখন কিছু গোবর পোকা তা খেলো। দেকা গেলো খাওয়ার পর সব গোবরে পোকা মারা গেছে। কেন মারা গেল আমাদের বৈজ্ঞানিকদের কাছে সেই প্রশ্নটি করতে চাই। যে গরম্নর বিষাক্ত গোবরে পোকা পর্যন্ত্ম মারা যায় অথচ আমরা ঐ গরম্নর মাংস খাই।

২। যশোরের কোন একটি এলাকায় হাইব্রিড ফসলে ব্যাপক কীটপতঙ্গ আর রোগের প্রাদুর্ভাব হলো। কৃষক ছাই, কীটনাশক দিলো কিন্তু কিছুতেই দমন হলো না। তাকে একজন বুদ্ধি দিলো, তুমি ডিডিটি দাও। যে পানির সংগে মিশিয়ে ডিডিটি দিলো দেখল সাপ, ব্যাঙ, কচ্ছপ তো মরে ভেসে উঠেছেই অন্য কোন কীটপতঙ্গ নেই তার চিন্ত্মার অবসান হলো। ফসল তুলে বাজারে বিক্রি করে সে পয়সা পেলো। মানুষ সেই ফসল খেলো কিন্তু সে বুঝতে পারলো না যে, সে কি ধ্বংস করলো আর এই ধ্বংসের পরিনাম কি হবে। ভোক্তারা সেই ফসল খেল কিন্তু ৫০ বছর পর্যন্ত্ম এই বিষ যে তা শরীরেও, রক্তে থাকবে এবং অবশেষে তা ক্যান্সারে পরিণত হবে তা রয়ে গেল অজানা।

মাছ, মাংস ও ডিমঃ ডিম আমাদের অন্যতম খাদ্য। ছোট ডিম বাজার থেকে আমরা কিনিনা। দেখতে ছোট রং ভালো না। বড় ডিম, ভাল রং বেশী খাদ্য। তাই চকচকা বড় ডিম কিনব। ডিম যে মুরগী দিয়েছে তাকে যে, ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জ্য থেকে তৈরী খাদ্য খাওয়ানো হয়েছে তা কিন্তু ক্রেতা জানে না। আর ঐ ডিমে যে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ক্রোমিয়াম ও সীসা যা খেলে ক্যান্সারই নয় বংশগতভাবে বিপর্যয় হতে পারে তা সে জানে না। ট্যানারির এই বর্জ্য দিয়ে তৈরী হচ্ছে মাছ ও মুরগীর খাদ্য। ভয়ংকর এই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মাছ ও মুরগী থেকে সরাসরি প্রবেশ করছে মানবদেহে। মানবদেহে এগুলো কখনও হজম করতে পারবে না ফলে থেকে যাবে দেহে ও রক্তে। এক সময় তা প্রকাশিত হবে য়াবহ ক্যান্সার হিসেবে তখন আর তার কিছুই করার থাকবে না। বিকল হয়ে হয়ে যাবে কিডনি বন্ধ হয়ে যাবে হৃদপিন্ড, ঘা হবে লিভাওে, অচল হবে ফুসফুস এবং স্মৃতি শক্তিও লোপ পাবে। তার জন্ম দেয়া ভবিষৎ বংশধরদের এতকিছু ঘটছে নিরবে, শত সহস্র মানুষের কিন্তু কেন এমন হলো? প্রশ্নের উত্তর না পেতেই তার জীবন সাঙ্গ হলো।

পানিঃ কিছু মানব বিজ্ঞানী আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হবে পানি নিয়ে। আমার মনে হয় তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হওয়ার আগেই মানুষ পানি নিয়ে যুদ্ধ করে শেষ হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে। যখন এত পরিশুদ্ধ করার যন্ত্রপাতি ছিল না, তখন মানুষ পানি খেত কিভাবে? এখন খালবিল, নদীনালা আর নলকুপের পানি খাওয়া দুরের কথা গোসল করাও যায় না। পানি যার অপর নাম জীবন তা টুকে গেছে পস্নাষ্টিকের বোতলে। এতেও কি পানি নিরাপদ? কে ভরছে তা বোতলে, কোথ থেকে আসছে তা কে জানে। মিনারেল ওয়াটার কি বাংলাদেশে তৈরী হয়? আর কি স্বাদ তায় তাকি আমরা জানি? সবই দুঃখের পরিহাস। বিশুদ্ধ পানি, পরিশোধিত পানি কতইনা লেবেল। রান্না বান্নার পানির খবরকি? তা কি আমরা জানি? ঘরে বসে টেপের পানি পান করি কোথেকে আসল? কোন পাইপ দিয়ে? সে পাইপ থেকে পানির মধ্যে কে জানে কোন বিষাক্ত পদার্থ গেল কি না কে জানে। পাইপগুলো কি সত্যি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ তার উত্তর কে জানে। কি দিয়ে পানি শোধন করা হয়েছে? যে উৎস থেকে এই পানি ঢাকা শহরে আনা হলো সে উৎসে কি পেট্রোলিয়াম, ক্লোরিন আর অন্য কোন বিষাক্ত রাসায়নিক ছিল? আর যা দিয়ে শোধন করা হলো সেই ক্লোরিনের মাত্রা কি মানব স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী? তাতো কোন বৈজ্ঞানিক বললেন না। ক্লোরিনে যে পেটে আলসার হয়, ক্যান্সার হয়, স্মৃতি শক্তি লোপ পায় তার কোন সতর্কবানী তো পানি দিয়ে ভাত, মাছ, মাংস আর শাকসবজি রান্না করছি তা কি নিরাপদ। পরিশোধিত পানির ক্লোরিন আর প্রাকৃতিক ঝড়নার পানির গ্রাডিয়া নামক জীবানু কি ১০০% তাপমাত্রায় মারা যায় না কি সে গুলো পেটে যেয়ে হজমে ব্যাঘাত ঘটায়? আর যদি নাই ঘটায় তাহলে ১০০ ভাগের মধ্যে ৯৫ ভাগ রোগ ব্যাধি কেন ষ্টমাক বা পেট থেকে উৎপন্ন হয়। এমনকি তা কালে কালে ক্যান্সাওে রূপান্ত্মরিত হয়। খাদ্য আর পানি যা সরাসরি পেটে যায় যা দিয়ে জীবন রÿা পায় তাহলে তার প্রতি এত অবহেরা কেন? চর্মরোগ আর ভয়াবহ স্কীন ক্যান্সারের জন্য কেন এত ভুগতে হচ্ছে? বৈজ্ঞানিক ভায়েরা কি গবেষনা করে দেখতে পারেন না যে খাদ্য আর পানির এই ভয়াবহ অবস্থা আর এত নিত্য নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব কেন?

বাতাসঃ জীবন বাঁচাতে হলে প্রকৃতি থেকে তো বাতাস নিতেই হবে। আমরা তো হাসপাতালের ওটি আর ইনকিউবিসনের বাসিন্দা নই যে, কৃত্রিম বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিয়ে বেঁচে থাকব। আমাদের তো প্রাকৃতিক উৎস থেকেই অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। নাক টেকে রেখে কতক্ষণ থাকব। বাঁচার জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্রয়োজন। সেই অক্সিজেনের কি অবস্থা। গ্রাম ছেড়ে আমরা তথাকথিত শিক্ষিত আর ভদ্র সমাজ এখন শহরের বাসিন্দা। আমরাই এখন কৃষ্টি আর সংস্কৃতির ধারক বাহক। আমাদের আসলে কি অবস্থা। চালাচ্ছি দামী গাড়ী, করছি বড় বড় বাড়ী, ধ্বংস করছি গাছপালা যেখানে গড়ছি সুরম্য অট্টালিকা। অল্প জায়গায় অতিরিক্ত মানুষ, অনেক অক্সিজেন প্রয়োজন তাহলে তা পাব কোথায়? আমাদের কি আছে অক্সিজেনের ফ্যাক্টরী? গাছ কেটে দালান গড়ে করছি আধুনিকতার প্রতিযোগীতা। একি বাঁচার প্রতিযোগীতা না মরার প্রতিযোগীতা?

রাস্ত্মাঘাটে যেখানে যেভাবে বিচরণ করছি আমরা ভেবে কি দেখছি একবারও কেন এবং কিসের জন্য এই প্রতিযোগীতা, বাতাসে বিষাক্ত সীসার অতিমাত্রা, ক্রোমিয়ামের বৃদ্ধি সব কিছুই যে আমাদের গ্রাস করতে চলছে তা নিয়ে আমরা ভাবছি। আমি কিভাবে বাঁচবো? অন্যদের কথা না হয় বাদই দিলাম আমার নিঃশ্বাস ফেলার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। আর তার জন্য আমি কোন কিছুই করছি এই ধরীত্রির!

জ্বালানী : জ্বালানী দিয়ে কি হবে। গাড়ী চালাব, পানি গরম করব না খাদ্য সামগ্রী রান্না করব? এর সব কিছুই আমাদের প্রয়োজন। এগুলো না হলে আমাদের জীবন চলবে না এটা আমাদের সবারইসত্য অনুধাবন। কয়লা পোড়াচ্ছি যা কিনা ফোসিল ফুয়েল। পেট্রোলিয়াম জালাচ্ছি অবিরাম তাও প্রয়োজনে না হয় বুঝলাম কিন্তু আমাদের এই কর্মাকন্ডের ফলে হচ্ছেটা কি তা বুঝলাম।

 

সারাবিশ্বে সর্বাধিক পানীয় হলো সফ্‌ট ড্রিংকস। এই পানীয় কিভাবে মানুষকে নীরব ঘাতক হিসেবে গ্রাস করছে তা বিস্ত্মারিত তুলে ধরা হলো।

ওজন বৃদ্ধি করে : ওজন বাড়লে আপনি অনায়াসে যে অসুখগুলোতে আক্রান্ত্ম হবেন তা হলো টাইপ টু ডায়াবেটিস, হাই বস্নাড প্রেসার, স্ট্রোক, হার্ট এটাক, ক্যান্সার, গলবস্নাডারে পাথর, আথ্যাইটিস। পরিণামে অকাল মৃত্যু। ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হওয়া মানে শুধু দেখতে দেখতে খারাপ বা শারীরিক অস্বস্ত্মিকর ব্যাপারই নয়, এটি নানাবিধ শারীরিক সমস্যা তৈরি করে থাকে। গবেষণা অনুসারে মোটা হওয়ার সঙ্গে কোমল পানীয় বা সফ্‌ট ড্রিংকস -এর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। বোস্টনের শিশু হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ এবং হার্ভার্ড স্কুল একসাথে গবেষণা করে যা বের করেছে তা হলো, একটি শিশু যদি প্রতিদিন একটা করে বাড়তি সফ্‌ট ড্রিংকস খায় তাহলে তার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় ৬০%। এক বোতল বা এক ক্যান সফ্‌ট ড্রিংকসে ক্যালরির পরিমাণ হলো ১৬০, যা ১০ চামচ চিনির সমান। এ পরিমাণ ক্যালরি ঝরাতে সপ্তাহে আপনাকে ভারি ব্যায়াম করতে হবে সাড়ে ৪ ঘন্টারও বেশি।

দাঁত হলুদ বানায় : ধরম্নন আপনি আপনার বন্ধুদের একটা জাদু দেখাতে চান। আপনার ধবধবে সাদা মুক্তোর মতো দাঁতগুলোকে আপনি ১ ঘন্টার মধ্যে স্থায়ীভাবে হলুদ করে ফেলবেন। কিছুই না, এক ঢোক কোলা মুখে নিয়ে ১ ঘন্টা ধরে রেখে দিন। ব্যস, এনামেল ক্ষয়ে দাঁতগুলো হলুদ হয়ে যাবে। সফ্‌ট ড্রিংকসের ঝাঁঝালো স্বাদ বাড়ানোর জন্যে এতে ফসফরিক এসিড ব্যবহার করা হয়। এ এসিড এত শক্তিশালী যে, একটা নখ এর মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে ৪ দিন পর আর আপনি নখ টাকে খুঁজে পাবেন না। তাছাড়া সফ্‌ট ড্রিংকসে যে চিনি ব্যবহার করা হয়, ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে এটাও এসিড তৈরি করে।

হাড় ভঙ্গুর করে : ফসফরিক এসিডের আরেকটি কাজ হলো হাড়ের ক্যালসিয়ামকে ÿয় করা। ১৯৯৪ সালে টিনএজ মেয়েদের উপর চালানো হার্ভার্ডের এক গবেষণায় দেখা যায়, যে মেয়েরা সফ্‌ট ডিংকস পান করে অন্যদের তুলনায় তাদের হাড়ভাঙ্গার প্রবণতা ৫ গুণ বেশি। পরবর্তীকালে অষ্টিওপরোসিস নামক হাড়ের ÿয়জনিত একটি রোগ এতেও হতে পারে। এ রোগে হাড়ের ঘনত্ব কমে এবং গঠন দুর্বল হয়ে যায়। ফলে হাড় সহজে ভেঙ্গে যায়। সাধারণত বয়ষ্ক মহিলাদের এ রোগটি বেশি দেখা দেয়। আর আশঙ্কার কথা হলো, ভাঙ্গা হাড় আর সহজে সেরে উঠে না। ২,৫০০ প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার ওপর এ ধরনের আরেকটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, এমনকি যারা নিয়মিত দুধ বা অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে তারাও কোলা জাতীয় ড্রিংকসের ÿতিকর এ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকেন নি।

আসক্তি তৈরি করে : প্রতি বোতল সফ্‌ট ড্রিংকসে ক্যাফেইন আছে ৫০ মিলিগ্রামের মতো। সফ্‌ট ড্রিংকস কোম্পানিগুলোর দাবি-এটা তারা ব্যবহার করছে স্বাদ বাড়ানোর জন্যে। কারণ ক্যাফেইনের তেতো স্বাদ অন্যান্য ফ্লেভারকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু জন হপ্‌কিন্স মেডিকেল ইনস্টিটিউটের রোলান্ড গ্রিফিথ বেশ কয়েকজন মানুষকে বাজারের সাধারণ সফ্‌ট ড্রিংকস এবং ক্যাফেইন ছাড়া ড্রিংকস খেতে দিয়ে দেখেন, ৯২% মানুষই এ দু’টোর পার্থক্য বুঝতে পারেনি। তার মানে ক্যাফেইনের স্বাদের ব্যাপারটা সঠিক নয়। তাহলে ক্যাফেইন দিয়ে কী হয়? ক্যাফেইন আসলে আসক্তি সৃষ্টি করে। আপনি একবার যখন, এতে অভ্যস্ত্ম হয়ে যাবেন আপনি তখন শুধু এটাই চাইবেন। আর সব আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদানের মতো ক্যাফেইনও সাময়িকভাবে আপনার মুডকে চাঙ্গা করলেও দীর্ঘমেয়াদে এর রয়েছে অনেকগুলো ÿতিকর দিক। এক বা দুই বোতল সফ্‌ট ড্রিংকসই আপনার অনিদ্রা, নার্ভাসনেস ও দ্রম্নত হৃদস্পন্দন সৃষ্টির জন্যে যথেষ্ট। বেশি পরিমাণে খেলে তা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন থেকে শুরম্ন করে আতঙ্ক এবং উদ্বেগ প্রবণতা, পেশিতে টান লাগা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, বিষণ্নতা এবং উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী মহিলা যারা সফ্‌ট ড্রিংকস খেয়েছেন তাদের গর্ভপাত, সময়ের আগেই প্রসব বা কম ওজনের বাচ্চা জন্ম দেয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। ক্যাফেইনের আরেকটি প্রভাব হলো, এটা প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়ায় এবং দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে। তার মানে প্রখর রোদের মধ্যে সফ্‌ট ড্রিংকস খেয়ে আপনি হয়তো ভাবছেন যাক, শরীর থেকে যে ঘাম ঝরে যাচ্ছে তা পূরণ করছেন। আসলে ফলাফল তার উল্টো। তার চেয়ে বরং পানি পান করম্নন বদহজম সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

আমরা অনেকেই রিচফুড খাওয়ার পর সফ্‌ট ড্রিংকস খেতে চাই এ ধারণায় যে, এতে খাবার দ্রম্নত হজম হবে। আমাদের দেহ সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাবার হজম করে থাকে। কিন্তু সফ্‌ট ড্রিংকস যখন পরিবেশন করা হয়, তখন এর তাপমাত্রা থাকে ৩/৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাজেই খাবার গ্রহণের পর যখন ঠা-া কোমল পানীয় পান করা হয়, তখন হজমে তো সাহায্য করেই না, উল্টো পচন ধরায়। তাছাড়া এসিডিক হওয়ার কারণে সফ্‌ট ড্রিংকস পাকস্থলীর সংবেদনশীল এ্যলক্যালাইন ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে পেটে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, বদহজম, গ্যাস, টক ঢেঁকুর ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ডায়াবেটিক : চিনি এবং ওজন বৃদ্ধিতে এর ভূমিকার কারণে সফ্‌ট ড্রিংকস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের ৪ বছর ধরে চলন্ত্ম এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে মহিলারা সফ্‌ট ড্রিংকস বেশি খান, তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সাধারণ মহিলাদের চেয়ে ২ গুণ বেশি।

ক্যান্সার : সফ্‌ট ড্রিংকস দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্যারামেলের রং আনার জন্যে সফ্‌ট ড্রিংকসে যে উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যে দায়ী। মজার ব্যাপার হলো, ডায়েট কোলা নামে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে যে সফ্‌ট ড্রিংকস বিক্রি হয় তাতে চিনির পরিবর্তে এসপার্টেম নামে একটি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। দেহের উপর এ উপাদানটির রয়েছে ৯২ ধরনের ÿতিকর প্রভাব। তন্মধ্যে অন্যতম ব্রেন টিউমার, বন্ধ্যাত্ব, ডায়াবেটিস, মৃগী এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতা।

কিডনি সমস্যা : সফ্‌ট ড্রিংকস যাতে বরফের মতো জমে না য়ায় সে জন্যে এতে ইথিলিন গস্নাইকেন নামে একটি উপাদান ব্যবহার করা হয়। এটি প্রায় আর্সেনিকের মতোই একটি বিষ। কিডনির ওপর এর প্রভাব খুবই ÿতিকর। ১ ঘন্টায় আপনি যদি ৪ লিটার কোক খান তাহলে কিডনি ফেইলিওর হয়ে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত। বিজ্ঞানরা দেখেছেন যারা সফ্‌ট ড্রিংকস খান না বা পরিমিত খান, তাদের তুলনায় যারা প্রচুর পরিমাণে খান তাদের কিডনিতে পাথর জমার হার প্রায় তিনগুণ। সফ্‌ট ড্রিংকসে যে স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়, তাতে ইউরিনারি বস্নাডার ক্যান্সার অর্থাৎ মূত্রাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

শ্বাসকষ্ট : সফ্‌ট ড্রিংকসের তাৎÿণিক বিপদ হচ্ছে গলা বা শ্বাসতন্ত্রের ÿতি। আমাদের নাক, গলায় তথা শ্বাসতন্ত্রের শুরম্নর দিকের অংশে থাকে অসংখ্য সিলিয়া। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত যে ধুলিকণা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস গ্রহণ করি এই সিলিয়াগুলো সেগুলোকে শরীরের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। সফ্‌ট ড্রিংকস খেলে এসব সিলিয়াগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। শুরম্ন হয় টনসিলাইটিস, ফেরিংজাইটিস, ল্যারিংজাইটিস, ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসজনিত রোগ।

কীটনাশক : ২০০৪ সালে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও ছত্তিশগড় রাজ্যে কৃষকরা কোকাকোলাকে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করতে শুরম্ন করে। এ প্রসঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশের রামকৃষ্ণপুরের চাষী গটু লখমাইয়া বলেন, “আমার তুলা চাষের কয়েক হেক্টর জমি জুড়ে আমি সফ্‌ট ড্রিংকস ব্যবহার করেছি। এটি প্রচলিত কীটনাশকের তুলনায় দামে যেমন সস্ত্মা, তেমনি ব্যবহারকারীর ত্বকের জন্যেও নিরাপদ”।

অকাল বার্ধক্য : ম্যাসাচুয়েটসের ৫০ বছর বয়ষ্ক একদল নারী-পুরম্নষ যারা প্রতিদিন ১ ক্যান বা এর বেশি করে সফ্‌ট ড্রিংকস পান করেছেন, তাদের ওপর ৪ বছর ধরে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মেটাবলিক সিনড্রোম বেড়ে গেছে ৪৪%। 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে