1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

ওই তো আফতাব ভাইয়ের আত্না যায়...

মহিউদ্দিন মখদুমী প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২২, ০১:২৪ এএম ওই তো আফতাব ভাইয়ের আত্না যায়...
সাংবাদিক আফতাব হোসেন

আফতাব ভাই আপনার মৃত্যু আমাকে বিচলিত করেনি, আলোড়িত করেনি। শেষ রাতে ফেসবুকে আপনার মৃত্যুর সংবাদ দেখার পর অঘোরে ঘুমিয়েছি। একটু দগ্ধতা, একটু ভীতি কিংবা স্বজন হারিয়ে ফেলার চিনচিনে কষ্ট, তাও অনুভব করিনি। আপনি যে সাংবাদিক শব্দটির সাথে জীবনের ৬২ বছরের ৪০টি বছর নিবির ভাবে কাটিয়েছেন। সেই সাংবাদিক শব্দটি এখন আগের মতো নেই। সাংবাদিকতার স্বর্ণালী যুগ শেষ। যে যুগে মাঠে মাঠে ঘুরে ঘুরে সংবাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হত। একটি সংবাদ যখন বিষ্ফোরিত বোমার মতো হয়ে পাঠকের কাছে চলে আসত। এখন সংবাদের উপকরণ বেড়েছে। রকম বেড়েছে। তাই এখন কিংম্ভুতকিমাকার যুগের শুরু হয়েছে। এই সময়ে সাংবাদিক শব্দটি সংবাদের কারিগর নামের চেয়ে অকাজে প্রভাব খাটানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় বেশী। একটি প্রেসকার্ড গলায় ঝুঁলিয়ে ডিসি অফিসে গিয়ে প্রভাব দেখানোর নাম সাংবাদিকতা। ইউএনও অফিসে গিয়ে অনৈতিক দাবি পূরন না হওয়ায় ইউএনও  কর্তৃক সাংবাদিক লাঞ্চিত হওয়ার খবর ভাইরাল করা। আপনি এসবের ধারের কাছেও ছিলেন না। যখন সাংবাদিকতার কিংম্ভুতকিমাকার যুগের শুরু হয়েছিল তখন আপনি একটু আড়ালে গিয়ে লেখার কাজে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। লিখেছিলেন তিনটি বই। এই প্রজন্মের সাংবাদিকরা বই পড়েই না। আপনার লেখা বই পড়ার তো প্রশ্নেই আসে না। অথচ আপনার লেখা ‘সাংবাদিকতার পথে পথে’ বইটি অনেক মূল্যবান আমার কাছে। চেনা লেখকের কী অচেনা লেখা, শব্দ থাকতে পারে? এই ভাবনাটিও স্পর্শ করেনি তাদের।

আফতাব ভাই, আপনি দারাজ কন্ঠে স্পষ্ট কথা বলতেন। লিখতেন। পড়তেন। আবৃত্তি করতেন। এতশত গুন থাকার পরও আমি আপনাকে খুব একা দেখেছি। ভুব নিরিহ। খুব নিঃসঙ্গ। আসলে সাংবাদিকতার সাথে লেককত্ব যোগ হলে জীবনের রকম পাল্টে যায়। যেমন হয়েছিল আপনার। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ এই তিনটি রোগ বাসাবেঁধে ছিল আপনার শরীরে। অথচ সাবলিল ভাবে বেড়িয়েছেন। যেন কোন রোগ ছিল না আপনার। সাংবাদিকতার নিজস্ব একটি গ্রহ সৃষ্টি করার পর আমি বদলে গেছি। সময় নষ্ট করার সময় হাতে কম থাকে। তাই আপনার সাথে ইদিিনং আমার কম দেখা হত। কিছুদিন আগে আপনি বলছিলেন, বয়স বাড়ছে। শরীরে সমস্যা দেখা দিচ্ছে মখদুমী। তারপর প্রসংশা করেছিলেন। উৎসাহ দিয়েছিলেন। আপনি মাত্র ৬২ বছরের জীবনে বৈশাখী টেলিভিশনে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতার রংপুরে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করতেন। রংপুরের দৈনিক দাবানল ও দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় দীর্ঘদিন বার্তা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, রংপুর বিভাগীয় লেখক পরিষদ ও ফিরে দেখা সংগঠনের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এইসব ছোট ছোট প্রাপ্তি যোগ হয়েছিল আপনার জীবনে।

সকালে বাসা থেকে বেড়িয়ে কয়েকজন সহকর্মীকে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে আপনার জানাজা নামাজ হবে কি না? কোথায়, কখন হবে? খুব কষ্ট হয়েছিল, যে প্রেসক্লাবের চত্তরে জুতাক্ষয় করে হেঁটে বেড়িয়েছিলেন। যে প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন, কোষাধক্ষ্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই প্রেসক্লাবের সামনে আপনার নিথর দেহটিকে শ্রদ্ধার জন্য আনা হয়নি। পীরগাছা উপজেলার নব্দীগঞ্জ এলাকায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে আপনাকে।

অন্যপাশ দিয়ে চিন্তা করে দেখেছি,  আপনার মৃত্যু কিংবা প্রস্থানটি ভালোই হয়েছে। সাংবাদিকতার এই কিংম্ভুতকিমাকার কালো সময়ের চেয়ে নিরবে প্রস্থানই ভালো হয়েছে।  সাংবাদিকতার সঙ্গে ডাকাত, বেশ্যা, চোর, বদমাইশ, বাটপার, স্বার্থপর, অর্থলোভী, দালাল যুক্ত হওয়ায় আপনি এই সময়ের উপযুক্ত ছিলেন না। আবার এও ভেবে ভালো মনে হয়েছে যে, অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে থেকে মৃত্যুর অপেক্ষা আপনাকে করতে হয়নি। যেতে তো হবেই, তাই বোধকরি আপনার মৃত্যুটি সুন্দর ছিল। আপনি ঝলমলে সুন্দর চিন্তার মানুষ ছিলেন। প্রকৃতি ভালোবাসতেন। কী বিস্ময়কর ! আপনার মৃত্যুটি তাই শরতের মোহনীয় সময়ে হয়েছে। আকাশে মেঘের ভেলা, আপনার আত্নাটি সেই ভেলায় চরে মহান রবের কাছে ধীরে ধীরে যাচ্ছে। জানাজায় যেতে পারিনি। শরতের আকাশে তাকিয়ে খন্ড খন্ড মেঘের একটিকে চিহ্নত করে বলেছি- ওই তো আফতাব ভাইয়ের আত্না যায়------। আপনার আত্নার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করি।

পুনশ্চঃ  সাংবাদিক আফতাব হোসেন ১৮ অক্টোবর ২০২২ মৃত্যু বরণ করেন।

আত্ন-কথন-৪২
সাংবাদিক ও লেখক
২১/১০/২০২২

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner