1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

রংপুর আদালত পাড়ায় আট ঘন্টা

মহিউদ্দিন মখদুমী প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২, ১২:৪২ এএম রংপুর আদালত পাড়ায় আট ঘন্টা

রংপুরঃ ২০ মার্চ ২০২২ সকাল সাড়ে দশটা। রংপুরের আদালত পাড়ায় চলে আসি। শরেয়ার তলে চোখ দিলাম। এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু তাঁর চেয়ারে বসে আছেন। সেবা নিতে আসা কয়েকজন নারী পুরুষের সাথে কথা বলছেন। একটু অবাক হলাম, ভাবলাম- তিনি কি এখনো রুটিনে বদ্ধ আছেন? ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। রংপুরের রাজনীতির  মেরুকরণ তাঁর হাতে। তবু, কি ভাবে? কেমন করে রুটিন মেনে চলতে পারেন? নবীন আইনজীবিরা অনেকেই শরেয়ার তলে টেবিল চেয়ার ব্রেঞ্চ নিয়ে বসেন। একদিন একজন নবীন আইনজীবিকে বলেছিলাম কোথায় বসেন? প্রথমে তিনি বলেছিলেন এ্যাডভোকেট রাজু ভাইয়ের পিছনের টেবিলে। পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম- শরেয়ার তলে? তিনি হেঁসে বলেছিলেন- হ্যাঁ। অন্য একজনকে বলেছিলামকোথায় বসেন?  তিনি বলেছিলেন শলেয়ার তলে। এ্যাডভোকেট রাজু ভাইয়ের কাছে? তিনি হেঁসে বলেছিলেন- উনার ডান পাশে। রংপুরের আদালত পাড়ায় রাজু ভাই ও শরেয়া গাছের তলা মিলে মিশে থাকা একটি নাম। আদালত পাড়া গেলে সবার আগে শরেয়ার তলায় চোখ যায়। কেন যায় জানি না।

সকাল ১১টা। চীফজুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতের দ্বিতীয় তলায় গেলাম। রংপুরের পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও সদর কোর্টে জিআর ও সিআর মামলার জামিন শুনানী হয়। আইনজীবিদের বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসলাম। কোর্ট পুলিশ পরিচয় জানতে চাইলো। পরিচয় পেয়ে বসতে দিলেন। সকাল ১১.৪৫ মিনিটে বিচারক এলেন। পীরগঞ্জ থানা দিয়ে শুনানী শুরু হলো। নবীন প্রবীন আইনজীবিতে জমজমাট পরিবেশ। বিচারক উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে রায় দিচ্ছেন। জিআর ও সিআর মামলার জামিন এবং শুনানীতে যারা এসেছেন তারা প্রায় সবাই গ্রামের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। অদ্ভুত ভাবে একই দিনে কয়েকটি ব্যতিক্রম ঘটনা আমার চোখে পড়েছে। একটি মামলায় একজন বধির বৃদ্ধ নারী (কানে শোনে না) আসামী হয়েছেন। কোর্টে কর্মরত কর্মচারী নাম তার নাম ধরে ডাকছেন। তিনি শুনছেন না। বধির বৃদ্ধ ওই নারীর মেয়ে তাকে এজলাসে ঠেলে পাঠালেন। কোর্টে কর্মরত কর্মচারী বলছেন স্যান্ডেল খুলে এজলাসে প্রবেশ করেন। বধির বৃদ্ধ ওই নারী ততক্ষণে চলে গেছেন এজলাসের শেষ মাথায়। বিচারক জামিন দিয়েছেন। তিনি শোনেনি। এজলাসে দাঁড়িয়ে আছেন। পড়ে কোর্ট পুলিশ তাকে হাতের ইশারা করে নামতে বলেন। বধির বৃদ্ধ ওই নারী তখনো এজলাস দাঁড়িয়ে আছেন। পরে তাকে এজলাস থেকে হাত ধরে নামানো হয়। জানা গেল উনি বধির। মিঠাপুকুর থানার দুটি মামলায় প্যারালাইস্ট হওয়া দুই ব্যক্তি অন্যের সহায়তায় এজলাসে দাঁড়িয়ে জামিন নেন। একজন ভিক্ষুক লাঠি ও ব্যাগসহ এজলাসে দাঁড়িয়ে জামিন নেন। সদর থানার একটি মামলায় একই পরিবারের চৌদ্দজন এজলাসে উঠেন। যায়গা হচ্ছিল না। তারাও জামিন পান। মনে প্রশ্নের উদ্রেগ হয়- কোন অপরাধের মামলায় প্যারালাইস্ট হওয়া দুই ব্যক্তি ও একজন ভিক্ষুক আসামী হয়েছেন? জানা যায়নি। কোর্টের বারান্দায় বেরিয়ে দেখেছি জামিন নিতে আসা আসামীর স্বজনদের উৎকন্ঠিত চেহারা। কোটি কোটি বাদামের খোসা। গায়ে দেয়া পুরনো কাপড়ের গন্ধ। শিশুদের চিৎকার। জামিন পাওয়া আসামীদের আনন্দিত মুখ। আটক আসামীর স্বজনদের কান্না ভেজা চোখ। 

একটি মামলায় ষাট বছর বয়সী একজন ব্যক্তিকে জড়ানো হয়েছে। আমার কাছে তাঁর স্ত্রী সন্তান এসেছিল। আমি তাদের প্রশ্ন করে খুঁটিয়ে দেখেছি বিষয়টি সত্যি কষ্টকর। অমানবিক। জড়িত নয় তবু কেন একজন নিরপরাধ বয়স্ক মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হবে। সাংবাদিক বাবলু নাসের বড় ছেলে নবীন মানবিক আইনজীবি পলাশ কান্তি নাগ দাদাকে সব খুলে বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন- সত্যের পক্ষে একটি লড়াই করতে হবে। মানবিক আইনজীবি পলাশ কান্তি নাগ বিচারকের সামনে যুক্তিপূর্ণ কথা বলেছেন। বিচারক তা শুনে ওই ব্যক্তিকেও জামিন দিয়েছেন। চীফজুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতের দ্বিতীয় তলা থেকে নেমে আসি।

দুপুর ২টা। আবার শরেয়ার তলে চলে আসি। চোখ চলে যায় এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু ভাইয়ের টেবিলে। তখন রাজু ভাইয়ের টেবিল ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের জটলা। কেউ বসার চেয়ার পেয়েছে। কেউ পায়নি।  রাজু ভাই চেয়ারে হেলান দিয়ে কথা বলছেন। কখনো কুঞ্চিত চোখে দূরে দেখছেন। আবার কথায় ফিরে আসছেন। দূরে পিছনে দাঁড়িয়ে একটি ছবি উঠালাম। তারপর নামাজ ও লাঞ্চ করার জন্য চলে আসি। 

বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা কোর্ট ঘুরে ঘুরে মানুষের ভিন্ন রকমের গল্প শুনছি।  দাম্পত্য কলহ, বিচ্ছেদ, মোহর, যৌতুক, নারী নির্যাতন, মারামারি, খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ  নানা বিষয়ে মামলায় নাজেহাল মানুষ কোর্ট সময়ের বাইরে আইনজীবিদের সাথে বসে পরামর্শ করেন। চা-পান খায়। জামিনের রিকল নেন। আপাতত শেষ বিদায় জানানোর জন্য আটক আসামীদের কারাগারে না নেয়া পর্যন্ত স্বজনরা কোর্ট চত্তরেই বসে থাকেন। ফেরার পথে মনে হয়েছে-রংপুর আদালত পাড়ায় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র আট ঘন্টায় অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব একটি মনোজগত আছে। সেখানে প্রতিদিন একটি করে ইতিহাস তৈরী হয় এবং ধ্বংস হয়। যা কেউ দ্যাখে না। দেখতে পায় না। আর সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্বই মানুষের ইতিহাস। 


আত্ন-কথন-৩৪
সাংবাদিক ও লেখক
২০-০৩-২০২২

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner