1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতমুখী যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি পেয়েছে

মনির হোসেন, বেনাপোল  প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২২, ০৬:০৮ পিএম বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতমুখী যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি পেয়েছে
ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ দীর্ঘ মানব স্রোত আর ব্যস্ততারা হুড়োহুড়ি। কত দ্রুত সময়ে যাওয়া যায়-সবার মাঝে যেন এমন পাল্লা। পা বাড়ালেই বিদেশ। তাতে ঝুঁকি ঝামেলা, দুর্ভোগ কী বা যায় আসে। সুবিধাও তো কম নয় ? প্রতিবেশি দেশ ভারত যেতে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর কোলাহলে পূর্ণ এখন দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে এ অবস্থা যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় অনেকে যেতে পারেনি ভারতে। সম্প্রতি ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হওয়ার পর এ দেশের মানুষের ভারতে যাতায়াত উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। 

মঙ্গলবার সকালে চেকপোষ্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশনে সরেজমনে গিয়ে যাত্রীদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। ইমিগ্রেশন থেকে দীর্ঘ লাইন প্রায় ২৫০ গজ বাইরে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের জন্য বেনাপোল স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ সেবার নামে একটি যাত্রী টার্মিনাল করলেও সেখানে কোন সেবার বালাই নেই বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। আবার সেই টার্মিনালের সেবার নামে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫০ টাকা টার্মিনাল চার্জও আদায় করছে। আর ভ্রমণকর বাবদ সরকারকে দিতে হচ্ছে পাসপোর্ট প্রতি ৫০০ টাকা।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮ দিনে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ২০ হাজার ৪৮০ জন দেশি বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন বাংলাদেশী পাসপোর্টযাত্রী ১০ হাজার ৫৮৫ জন। আর ভারতসহ অন্যান্য দেশের যাত্রী গেছেন ২ হাজার ৮৪৯ জন। একই সময়ে ভারত থেকে এসেছেন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী ৫ হাজার ১০৯ জন। আর ভারতসহ অন্যান্য দেশের যাত্রী এসেছেন ১ হাজার ৯৩৭ জন। যা গত দুই সপ্তাহের দ্বিগুন যাত্রী এ সময়ে যাতায়াত করেছেন।

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নগরী কোলকাতার দুরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় অল্প খরচে স্বল্প সময়ে কোলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অনায়াসে যাওয়া যায়।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ভারতগামীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা টার্মিনাল চার্জ নিলেও তাদের দিতে পারছে না বসার জায়গা। মাত্র ৫০ জনের বসার সিট রয়েছে টার্মিনালের ভেতরে। অথচ এ পথে প্রতিদিন তিন হাজার থেকে চার হাজার যাত্রী ভারতে যায়। যাত্রীরা টার্মিনাল চার্জ দিয়েও বাইরে দাঁড়িয়ে রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে। ভোগান্তি বাড়ছে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীসহ বৃদ্ধরা। নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেই পড়ছেন অসুস্থ্য হয়ে। শুয়ে ও বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাচ্ছেন পাসপোর্টযাত্রীরা। রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হওয়ায় তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। কখন তারা ভারত যেতে পারবে এই দু:চিন্তায় রয়েছে পরিবারের লোক নিয়ে। সব মিলিয়ে বেনাপোল চেকপোষ্টে অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

ইমিগ্রেশনের জন্য অপেক্ষারত ঢাকার দিপালী কর্মকার বলেন, আমার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। করোনার কারণে ভারত যেতে পারেনি। এখন ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়ায় ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি।

ভারত গমনকারী পাসপোর্টযাত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এর আগে কোন দিন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। ট্যুরিস্ট ভিসায় কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ভারত যাচ্ছে। তবে রোগীদের জন্য আলাদা একটি লাইন করলে ভাল হতো।

ময়মনসিংহ থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী আলমগীর হোসেন (পাসপোর্ট নং এও-২০৯২৫৭১) বলেন, সারারাত জেগে বেনাপোল এসে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে প্রবেশের মুখে দীর্ঘ লাইন। যে লাইন থেকে বের হতে প্রায় ৩ ঘন্টা লেগেছে। আবার আমার নিকট থেকে যাত্রী সেবার নামে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে টার্মিনাল চার্জ নিয়েছে ৫০ টাকা। অথচ এখানে যাত্রী সেবার কোন বালাই নেই।

সাতক্ষীরার শ্রী সুদেব কুমার (পাসপোর্ট নং ইজি-০৫৪৬৪১৬) বলেন, বেনাপোল চেকপোষ্টে এসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বেশী অসুবিধায় পড়েছে চিকিৎসারত পাসপোর্টযাত্রীরা। আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে কড়া রৌদ্রে দাঁড়িয়ে অসুস্থ রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়া বৃদ্ধ ও শিশুদের রৌদ্রে দাঁড়িয়ে ছটফট করতে দেখা গেছে। এখানে সেবার নামে ৫০ টাকা নিলেও নেই যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করার পর স্কানিং মেশিন থেকে ল্যাগেজ বের হওয়ার পর দুই জন আনসার সদস্য তাদের ল্যাগেজে কি আছে, কোথায় যাবে নানা ধরনের প্রশ্ন করে টাকা দাবি করে। তারা নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ২ শত টাকা তার নিকট থেকে নিয়ে নেয়। এভাবে সুযোগ বুজে তারা পাসপোর্টযাত্রীদের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আপনি কেন টাকা দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথম ভারত যাচ্ছি বুঝতে পারিনি। তারা যে ভাবে কথা বলছে তাতে মনে হয়েছে কোন সমস্যা হতে পারে। পরে ইমিগ্রেশনে যেয়ে দেখি ওটাই আসল জায়গা। ইমিগ্রেশনে আমি পাসপোর্ট দিয়েছি আমার পাসপোর্টে সিল মেরে দিয়েছেন।

বেনাপোলের মফিজুর রহমান নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা তার একজন আত্নীয়কে এগিয়ে দিতে ইমিগ্রেশনে যেতে গেলে এক আনসার সদস্য অর্থ দাবি করে। এক পর্যায়ে তার সাথে কথা কাটাকাটিও হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রী একুব আলী বলেন, সে বিজনেস ভিসায় এদেশে আসে। পরে যে কোন কারনে কাস্টমসে প্রবেশ করতে গেলে আনসার সদস্যরা প্রবেশ ফির কথা বলে ২০০ টাকা হাতিয়ে নেয়।

ইমিগ্রেশনের লোকজন জানান, কতিপয় আনসার সদস্যরা টাকা নিয়ে দালালসহ বিভিন্ন লোকজনদের ইমিগ্রেশনে ঢুকতে দিচ্ছে। তাদের কারণে পাসপোর্টযাত্রীদের হয়রানি আরো বেড়েছে। ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নানা ধরনের পণ্য পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যেমে একটি মহলের সহযোগিতায় প্রবেশ করছে দেশে।  ঘুষ বানিজ্য নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর চেকপোস্ট কাস্টমসে সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কাস্টমস কর্তপক্ষ। চেকপোষ্টে ইমিগ্রেশনে ঢোকার প্রবেশ পথে নিয়োগ দিয়েছে আনসার বাহিনী। তারা পরিচয় জেনে সাংবাদিক পরিচয় পেলে তাদের প্রবেশে অনুমতি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে। আর এই সুযোগে ইচ্ছা খেয়াল খুশিমত ল্যাগেজ ব্যবসায়িসহ সাধারন যাত্রীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করছে। সেই সাথে এই আনসার বাহিনীও চাঁদা বাণিজ্য মেতে উঠেছে। তারা পাসপোর্টযাত্রী এবং বহিরাগত প্রবেশ করতে সহযোগিতা করে অর্থ বানিজ্য করছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগ কাস্টমসের উর্ধতন মহলকে জানালেও তারা কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আনসার সদস্যরা নির্বিঘ্নে অর্থ আদায় করে চলেছেন।

এ বিষয় বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া বলেন, এসব মিথ্যা কথা। ওখানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করায় তারা অপবাদ ছড়াচ্ছে। তারপর তাকে ঘটনার সত্যতা জানিয়ে যাত্রীর নাম বললে তিনি বলেন, ওই যাত্রীকে তার সাথে কথা বলতে বলেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনে যাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ইমিগ্রেশন ওসি মোহাম্মাদ রাজু। তিনি বলেন, এর আগে আসা যাওয়া মাত্র ৪/৫ শত যাত্রী ছিল। গত তিনদিনে তা ছাড়িয়ে আসা যাওয়া প্রায় ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ভারত সরকার ভ্রমণ ভিসা দেওয়ায় আরো যাত্রী সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে বেনাপোল ইমিগ্রেশন যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করেছে। দ্রুত যাতে দুর দুরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা ভারতে প্রবেশ করতে পারে তার জন্য ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছে।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner