1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

পাহাড়ের ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ তথা প্রবারণা পূর্ণিমা

উথোয়াইচিং মারমা, বান্দরবান প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২১, ০২:১৮ পিএম পাহাড়ের ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ তথা প্রবারণা পূর্ণিমা
ছবি: আগামী নিউজ

বান্দরবান: পার্বত্য এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। বান্দরবানের বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মারমা সম্প্রদায়ের ভাষায় ওয়াগ্যোয়াই পোওয়ে নামেই বলা হয়।

বুধবার (২০ অক্টোবর) প্রবারণা পূণির্মা উপলক্ষে সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বান্দরবানে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা পুরো তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের পর  অপেক্ষায় থাকে এই দিনটির জন্য। নানা ধর্মীয় উৎসব আয়োজন মধ্যে দিয়ে বান্দরবানে পূজানীয় ব্যক্তিরা বৌদ্ধ বিহারের প্রার্থনার জন্য জড়ো হতে থাকে। এই দিনে বিহারগুলোতে থাকে বর্ণিল আয়োজন। 

এসময় শত শত বৌদ্ধ নর-নারী সমবেত হয়ে ভগবানের উদ্দেশ্যে ফুল পূঁজা, কাঁচা ফল পূঁঁজা, পানীয় পূঁজা, মোমবাতি ও আগরবাতি পূঁজাসহ নিজ হাতের তৈরি পিঠা ও ছোয়াইং (আহার) দান করে এবং সকলের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন।

তাছাড়া উৎসবটির রাত থেকেই শুরু করে শহরের বিভিন্ন পাহাড়ী পল্লীগুলিতে অলি-গলিতে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরির উৎসব চলবে সারারাত। ওইসময় পাহাড়ী তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা তৈরিতে মেতে ওঠেন। ভোরে নর-নারীরা সমবেত হয়ে ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে  বিহারে ছোয়াইং (পিঠা আহার) দান করবেন। কিছু পিঠা, পায়েশ আবার প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতেও বিতরণ করা হয়।

এদিকে সাধারণ মানুষ করোনা টিকার আওতায় আসার পাশাপাশি দেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই চলতি বছর ঘটা করে অর্থাৎ বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের পাহাড়ের ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে। ফলে অতি আনন্দের মধ্য দিয়ে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে ধুম পড়েছে উৎসবের আমেজ। কিন্তু এই বছরে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে আয়োজন থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনের কড়াকড়ি নির্দেশ থাকবে এমনটিই জানিয়েছেন উৎসব উদযাপন পরিষদ।

জানা গেছে, বান্দরবানে মারমাদের ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে” উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে- মঙ্গল শোভা রথযাত্রা। ঐ রথের ওপর পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে শহরের প্রধান সড়কগুলো ঘুরিয়ে মধ্যরাতে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে। 

এ সময় পূণ্য লাভের আশায় ভগবানের উদ্দেশ্যে নগদ অর্থ দান ও মোমবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধ মূর্তিকে দর্শন করেন পূজারীরা। ওই সময় রথের পিছনে সর্বস্তরের মানুষ মারমাদের ঐহিত্যবাহী (ছং রা সি ওয়াগ্যোয়াই লা্ রিথা বোওয়েই লা্ গাই মে) গান গেয়ে ঢোল বাজিয়ে সকলকে উৎসাহের যোগান দিয়ে আনন্দ উল্লাস মেতে ওঠে সবাই।

আরও জানা গেছে, অনুষ্ঠানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে তৈরি করা হয় বিভিন্ন আকৃতির বাঁশের তৈরি পুতুল । আর নির্মিত পুতুলের ভিতরে মানুষ প্রবেশ করে নাচের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেয়। যেহেতু বান্দরবান অধ্যুষিত অঞ্চল সেক্ষেত্রে জাতি ভেদাভেদ ভুলে অন্যান্য গোষ্ঠীরাও একযোগে এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। এসময় এক ধরণের মিলনমেলা পরিণত হয়। তাছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলি খুলে দেওয়ার কারণে এবারে মারমাদের ওয়াগ্যোয়াই উৎসব উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের উন্মুক্ত আগমণ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রাও।

বান্দরবান সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত এমেসিং মার্মা বলেন, প্রত্যেক বছরই এই দিনটির জন্য অধির আগ্রহে চেয়ে থাকি। গেল বছর ঘরের গন্ডির ভিতরে ধর্মীয় পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবারে পুরোদমে বন্ধু-বান্ধব একযোগে ফানুস উড়ানো, পিঠা তৈরি উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ রথ যাত্রায় দলবেঁধে অংশগ্রহণ করতে পারবো। তা ভেবেই মনের ভিতর কি যে আনন্দ অনুভূত হচ্ছে বলে বুঝাতে পারছি না।

বীর বাহাদুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক উৎসবকে ঘিরে তাঁর আনন্দের কথা তুলে ধরে ডচিংপ্রু। তিনি বলেন, অতিমারী করোনার কারণে গতবছরের আনন্দঘন মুহূর্তটি এ বছর প্রথম সন্তানকে নিয়ে স্ব-পরিবারে উপভোগ করার ইচ্ছা আছে। মঙ্গল রথযাত্রা বিসর্জনের সাথে বিশ্ব থেকে অতিমারী করোনা দূর হোক আর দেশের শান্তি বয়ে আনুক এই প্রার্থনা করি।

উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা জানান, ইতিমধ্যে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের “ওয়াগ্যোইয়া পোয়ে” (প্রবারণা পূর্ণিমা) দুইদিনব্যাপী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট যৌথ উদ্যোগে পালন করার প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠান পিঠা তৈরি উৎসব, মঙ্গল রথযাত্রা ও ফানুস উড়ানো, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আলোক সজ্জায় সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে আয়োজন করতে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে উক্ত অনুষ্ঠানগুলি আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানমালা সুন্দর ও সার্থক করতে সুশীল সমাজসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
 
উৎসবের নিরাপত্তা বিষয়ে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল  ইসলাম জানিয়েছেন, উৎসবকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্যে নিরাপত্তা জোরদারের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক বৌদ্ধ উপসনালয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া সাদা পোষাক পরিহিত অবস্থায়ও নজরদারি রাখছে বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রসঙ্গত আদিকাল থেকে তিন মাস ব্যাপী বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর জনগোষ্ঠীরা ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে। কথিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তাঁর মাথার চুল কেটে চূলামনি জাদি উদ্দেশ্যে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই এই তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা আকাশে উড়ায় শত শত ফানুস বাতি। নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী ফানুস বাতি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ বা উৎসর্গ করেন ভক্তরা।

আগামীনিউজ/ হাসান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner