Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সৈয়দ শামসুল হকের চলে যাওয়ার পাঁচ বছর


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১, ০৯:৪৯ এএম
সৈয়দ শামসুল হকের চলে যাওয়ার পাঁচ বছর

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ 'একটুখানি দাঁড়িয়েই আমি এগিয়ে যাব আবার/ যেমন যাচ্ছিলাম/ ধীরে ধীরে/ বহুকাল ধরে/ আমি একটি/ দু'টি/ তিনটি/ প্রজন্ম ধরে।'- নিজের এই পঙ্‌ক্তিমালার মতোই সৈয়দ শামসুল হক যেন তার লেখাগুলোকে নিয়ে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন মৃত্যুর পর। যেন তিনি একদিন, এক বছর বা দশক নয়, নিজের সৃষ্টিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতেই করেছিলেন প্রতিজ্ঞা। 'ফুলের গন্ধের মতো থেকে যাবো তোমার রুমালে/ধূপের গন্ধের মতো তোমাদের শান্ত সন্ধ্যাকালে'- আশ্বাস দিয়ে সব্যসাচী এই লেখক পৃথিবী ছেড়েছেন আজ পাঁচ বছর। তবু তিনি বেঁচে আছেন বাংলার মানুষের হৃদয়ে।

কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, কাব্যনাট্য, চিত্রনাট্য, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় সকল ক্ষেত্রে সাবলীল লেখনী-ক্ষমতার জন্য সৈয়দ শামসুল হককে ‘সব্যসাচী লেখক’ নামে অভিহিত করা হয়।

তার লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছরব্যাপী বিস্তৃত। এই বিশাল সময় ধরে সৈয়দ হক নিজ মেধা, মনন ও সৃজনীশক্তির মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাহিত্যের এক তুলনারহিত অবস্থানে।

সৈয়দ শামসুল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলায়। কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যজীবনের শুরু। ১৯৫১ সালে সাহিত্যজগতে পা রাখার দিন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থামেনি সৈয়দ হকের এই যাত্রা। ১৮ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'একদা এক রাজ্যে'। এর পর একটানা ছয় দশক ধারাবাহিকভাবে তার তিন শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত 'অগত্যা' নামে একটি ম্যাগাজিনে সৈয়দ হকের প্রথম গল্প ছাপা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়ে তার প্রথম উপন্যাস 'দেয়ালের দেশ' প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। 

সৈয়দ হক ১৯৫৯ সালে 'মাটির পাহাড়' চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখেন। এরপরও তিনি বিভিন্ন সময় চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন। 'বড় ভালো লোক ছিল' এবং 'পুরস্কার'- এই দুটি চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রের জন্য গানও রচনা করেছেন তিনি। এ জন্যও সৈয়দ হক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

সৈয়দ হক ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে লন্ডন চলে যান এবং সেখানে বিবিসির বাংলা খবর পাঠক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর পাঠ করেছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিবিসি বাংলার প্রযোজকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

সৈয়দ হকের উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'খেলারাম খেলে যা', 'বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ', 'নিষিদ্ধ লোবান', 'নীল দংশন', 'স্মৃতিমেধ', 'দ্বিতীয় দিনের কাহিনী' ইত্যাদি। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে 'পরানের গহিন ভিতর', 'বৈশাখে রচিত পঙ্‌ক্তিমালা', 'বিরতিহীন উৎসব', 'আমি জন্মগ্রহণ করিনি', 'ধ্বংসস্তূপে কবি ও নগর' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়', 'গণনায়ক', 'নূরলদীনের সারাজীবন' ইত্যাদি তার অন্যতম কাব্যনাট্য। প্রবন্ধগ্রন্থ 'হূৎকলমের টানে' এবং আত্মজৈবনিক গ্রন্থ 'প্রণীত জীবন' ও 'হে বৃদ্ধ সময়ের' জন্যও তিনি বহুল আলোচিত।

১৯৬৬ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এছাড়াও সাহিত্যে তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে