Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মহাপ্রয়াণের দিনেও একাকী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২০, ০১:২৫ পিএম
মহাপ্রয়াণের দিনেও একাকী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ছবি সংগৃহীত

ঢাকাঃ কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস আজ। ১৮৯৪ সালের আজকের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণায় অবস্থিত কল্যানীর নিকটবর্তী ঘোষপাড়া অঞ্চলের মুরারীপুর গ্রামে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি তার পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪পরগণা জেলার বনগাঁর নিকট বারাকপুর গ্রামে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাটশিলার বাড়ি

তাঁর বাবার নাম ছিলো শ্রী মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ছিলো মৃনালিনী দেবী। তাদের দুজনের ৫টি সন্তান ছিলো, যার মধ্যে বিভূতিভূষণই ছিলেন সব থেকে বড়।

বিভূতিভূষণ তাঁর বাবার কাছেই প্রথম পড়াশোনা শেখেন এবং নিজের গ্রাম আর পাশের গ্রামের অন্য কয়েকটা পাঠশালা থেকেও প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।তারপর
তিনি পাঠশালার পাঠ শেষ করে ভর্তি হন বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে । সেখানে তিনি একজন অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসাবে পড়াশোনা করার সুযোগ পান।

ছোটবেলা থেকেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পড়াশোনার বেপারে ভীষন মনোযোগী ছিলেন। তাইতো, তিনি একসময় হয়ে ওঠেন ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র।

এই ভাবে, তাঁর পড়াশোনা বেশ ভালোই চলতে থাকে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের মাধ্যমে তিনি একের পর এক ক্লাস উর্তীর্ণও হতে থাকেন কিন্তু যখন তিনি অষ্টম শ্রেণীতে ওঠেন,তখন হঠাৎই শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর বাবা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়।

এত কিছুর পরও  বিভূতিভূষণ নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। ১৯১৪ সালে তিনি তাঁর এনট্রান্স পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশন পান এবং তারপর ভর্তি হন রিপন কলেজে যার বর্তমানে আজ নাম সুরেন্দ্রনাথ কলেজ।

সেখানে আই.এ পরীক্ষায়ও তিনি ভালো ফল করেন আর আবার ফার্স্ট ডিভিশন পান এবং তারপর  ১৯১৮ সালে একই কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায়ও ডিস্টিইংশন সহ পাশ করেন।

অপুর পাঠশালা প্রাথমিক বিদ্যালয়

এরপর তিনি আবার মাস্টার্স আর 'ল' নিয়ে পড়ার জন্য ভর্তি হন কিন্তু কোর্সের মাঝপথে তাঁকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় আর্থিক কারণে।

পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি প্রথমে জাঙ্গীপাড়ার একটি স্কুলে ও পরে সোনারপুরের হরিনাভি স্কুলে শিক্ষকতা প্রদান করেন ।

তাছাড়া মাঝে অবশ্য কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক, খেলাৎ ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি এবং গৃহশিক্ষক রূপে কাজ করলেও তিনি সারাজীবন শিক্ষকতাই করেন।
 বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ার একটি স্কুলে পড়াতেন। সেখানেকার নাম করা স্কুল দ্বারকানাথ উচ্চবিদ্যালয়ে  ১৯১৯ সালে পড়ানোর সময় বসিরহাটের মোক্তার, শ্রীকালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে গৌরী দেবীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌরী দেবী

দুর্ভাগ্যবশত তাঁর প্রথম স্ত্রী গৌরী দেবী, বিয়ের ঠিক এক বছর পরেই মারা যান রোগের কারণে।  পরে আবার ১৯৪০ সালের ৩রা ডিসেম্বর তারিখে, বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীর সাথে তিনি পুণরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সে ঘরে একটা পুত্র সন্তানের জন্ম হয় | যার নাম রাখা হয় তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় |

১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প “উপেক্ষিতা” প্রকাশ পায় এবং এই গল্পের মাধ্যমেই বিভূতিভূষণের সাহিত্য জীবনের সূত্রপাত ঘটে। যখন তিনি ভাগলপুরে থাকতেন, তখন তিনি পথের পাঁচালী লেখা শুরু করেন, সেই সময়টা ছিলো ১২৯৫ সাল। আর তাঁর, এই অনবদ্য উপন্যাসটা লেখা সমাপ্ত হয় তার ঠিক ৩ বছর পর অর্থাৎ ১৯২৮ সালে।
 

পথের পাঁচালী হলো তাঁর লেখা সবচেয়ে সেরা উপন্যাস।
পথের পাঁচালীর পরবর্তী অংশের নাম হলো “অপরাজিতা”। 
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দুটো গ্রন্থেই তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনের আভাস রয়েছে |
“পথের পাঁচালী” এই উপন্যাসকে নিয়ে পরবর্তী সময়ে বাংলা তথা ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় একটি অসাধারণ সিনেমা তৈরী করেন।

পথের পাঁচালী উপন্যাস ভারতের বিভিন্ন ভাষাসহ ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়ও অনূদিত হয়েছিলো।
অনেক চড়াই-উতরাই পার করে অবশেষে ১লা নভেম্বর, ১৯৫০ সালে ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলায় তাঁর নিজের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মারা যান।
মৃত্যুর ঠিক পরের দিন দুপুরবেলায় সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে “পঞ্চপাণ্ডব ঘাটে” তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছিলো।


বর্তমানে ঘাটশিলার বাড়ি গৌরীকুঞ্জ, ঝাড়খণ্ড সরকারের বিধায়ক শ্রী প্রদীপ কুমার বলমুচু দ্বারা সংস্কার করা হয়।
এই এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা হিন্দি ভাষাভাষী এবং শিক্ষা ইংরেজি ও হিন্দি মাধ্যমে হয়। তাই গৌরীকুঞ্জ উন্নয়ন সমিতি, "অপুর পাঠশালা" নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে শুধু মাত্র বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। সকাল দশটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত এই স্কুল খোলা থাকে।

বিভূতিভষণের ঘাটশিলার বাড়িতে গড়ে উঠেছে ছোটখাটো একটি সংগ্রহশালা।

লেখকের স্বাক্ষর

বাংলা সাহিত্যে যে তিন জনকে ‘তিন বাঁড়ুজ্যে' বলা হয়, তাদের মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর এক বাঁড়ুজ্যে হলেন এই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কিন্তু তার জীবদ্দশায় একটাও সে রকম কোনও পুরস্কার পাননি। যেটা পেয়েছেন, সেটা তার মৃত্যুর পরে পেয়েছেন। ১৯৫১ সালে ‘ইছামতী’ উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন। অবশ্য সব চেয়ে বড় পুরস্কারটাই তিনি পেয়েছেন, সেটা হল পাঠকের ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং সমীহ। একজন যথার্থ লেখকের কাছে এর থেকে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে!

জনমানব শূন্য বাসভূমে তার মর্মর মূর্তি গলায় গাঁদা ফুলের মালা নিয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে অজানা প্রতীক্ষায়।

আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে আগামী নিউজের পক্ষ থেকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলী। 

আগামীনিউজ/মিথুন

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে